সেপ্টেম্বরের মতো সদ্য শেষ হওয়া অক্টোবর মাসেও বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভের অন্যতম প্রধান উৎস প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স কমেছে। অক্টোবরে ১৫২ কোটি ডলারের (১৬ হাজার ২৬৪ কোটি টাকা) সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এই অঙ্ক গত আট মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। সাম্প্রতিক সময়ে একক মাস হিসেবে এর চেয়ে কম রেমিটেন্স এসেছিল গত ফেব্রুয়ারিতে। ঐ মাসে ১৪৯ কোটি ডলার দেশে পাঠিয়েছিলেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ইউরোপে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সেখানে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে। এতে প্রবাসীরা কম পরিমাণ অর্থ দেশে পাঠাতে পারছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, অক্টোবর মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশে ১৫২ কোটি ৫৪ লাখ (প্রায় ১ দশমিক ৫২ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। প্রবাসী আয়ের এ অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১২ কোটি ১৪ লাখ ডলার বা ৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ কম। গত বছরের অক্টোবরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৬৪ কোটি ৬৯ লাখ ডলার।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রেমিট্যান্সে নিম্নগতির প্রভাব ফেলবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও। মঙ্গলবার দিন শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩৫ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার। আগামী সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের মতো আমদানি বিল পরিশোধ করতে হবে। এর পর রিজার্ভ নেমে আসতে পারে ৩৪ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলারে।
চলতি অর্থবছরের টানা দুই মাস ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স বৈধপথে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। গত আগস্ট মাসের ২০৩ কোটি ৭৮ লাখ (২ দশমিক ০৩ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। তার আগের মাস জুলাইয়ে এসেছিল ২০৯ কোটি ৬৩ লাখ ডলার। জুলাই মাসে পবিত্র ঈদুল আজহার কারণে দেশে বিপুল পরিমাণ প্রবাসী আয় এসেছিল। তবে আগস্টে বড় উৎসব ছিল না, তার পরও প্রবাসী আয় ২০০ কোটি ডলার ছাড়ায়।
এদিকে, রেমিট্যান্স বাড়াতে উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউজের মতো সরাসরি ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠালেও প্রতি ডলারে ১০৭ টাকা পাবেন প্রবাসীরা। আগে যা ছিল ৯৯ টাকা ৫০ পয়সা। এছাড়া এখন থেকে ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্স আহরণ বাবদ কোনো চার্জ বা মাশুলও নেবে না। সব?শেষ সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি ও বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাফেদার বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এছাড়াও এখন বিদেশ থেকে যে কোনো পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠাতে কোনো ধরনের কাগজপত্র লাগে না। আবার প্রবাসী আয়ের ওপর আড়াই শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। প্রণোদনা বাড়ার পরও সর্বশেষ অর্থবছরে প্রবাসী আয়ে বড় পতন হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ (২১ দশমিক ৩ বিলিয়ন) মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৫ দশমিক ১১ শতাংশ কম।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, রিজার্ভ পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। আমরা রিজার্ভ, রেমিট্যান্সের মোহ কেটে যাবে বলে উল্লেখ করেছিলাম। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের কথা আমলে নেওয়া হয়েছে বলে মনে হয়নি। বাংলাদেশের রিজার্ভ যে কয়টি উইংসের ওপর দাঁড়িয়ে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। এই রেমিট্যান্স বাড়ানো জরুরি। এর জন্য কী করণীয় সরকারের তা ভাবতে হবে। আরো প্রণোদনা দেবে নাকি বিদেশে শ্রমবাজার বাড়াবে, তা নিয়ে ভাবতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অর্থনীতিবিদ ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রবাসে যাচ্ছে অদক্ষ শ্রমিক। দক্ষ করে পাঠাতে পারলে দ্বিগুণ আয় করতে পারত। অন্য দেশের একজন শ্রমিক যে আয় করে আমাদের তিন জন শ্রমিক সে আয় করে।