টি-২০ বিশ্বকাপে সুপার টুয়েলভের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে বাংলাদেশকে ৫ রানে হারিয়েছে ভারত। অ্যাডিলেড ওভালে টস জিতে বোলিং করতে নামে বাংলাদেশ। প্রথমে ব্যাট করে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৮৪ রান সংগ্রহ করে ভারত।
১৮৫ রানের বিশাল টার্গেটে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। ওভারপ্রতি রানের প্রয়োজন ছিল ৯.২৫ করে। ওপেনিংয়ে নেমে চাহিদা অনুযায়ী উড়ন্ত সূচনাই এনে দিলেন লিটন দাস আর নাজমুল হোসেন শান্ত।
লিটনের তুলনায় শান্ত যেন অনেকটা শান্তই ছিলেন। তবে লিটনকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন শান্ত। মাত্র ২১ বলে ফিফটি তুলে নেওয়া লিটনের সঙ্গে শান্ত উইকেট ধরে রেখে সমর্থন দিয়ে গেছেন লিটনকে।
ভুবনেশ্বর কুমারের করা প্রথম ওভারটি দেখেশুনে কাঁটিয়ে দিয়েছেন দুই টাইগার ওপেনার। আর্শদিপ শিংয়ের পরের ওভারেই তিন বাউন্ডারি হাকিয়ে লিটন তোলেন ১২ রান।
ভুবনেশ্বরের প্রথম ওভার থেকে এসেছিলো মাত্র ২ রান। ভারতীয় এই পেসারের করা ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই আগের ওভারের হিসেবটা যেন পুষিয়ে নিতে চাইলেন লিটন। টানা ১ ছক্কা আর ২ চারে এই ওভার থেকে লিটন তোলেন ১৬ রান। ওভারের পঞ্চম বলে অবসশ্য একবার জীবন পেয়েছেন লিটন, টাইগার ওপেনারের ব্যাটের কানা ছুয়ে যাওয়া বল ঠিকমতো গ্লাভসে জমাতে পারেননি দিনেশ কার্তিক।
চতুর্থ ওভারে বোলিংয়ে এসে মোহাম্মদ শামিকে অবশ্য একটু দেখেশুনেই খেলেছেন টাইগার ওপেনাররা। এই ওভার থেকে আসে ৫ রান।
পঞ্চম ওভারে আবারও বোলিংয়ে আসেন ভুবনেশ্বর। দ্বিতীয় বলে রান আউটের হাত থেকে বেঁচে যায় লিটন। কোহলির সরাসরি থ্রোতে স্ট্যাম্প ভেঙে গিয়েছিলো, তবে তার আগেই ক্রিজে পৌছে গেছেন যান লিটন। ওভারের পঞ্চম বলে স্কয়ার লেগ দিয়ে দুর্দান্ত এক ছক্কা মেরে এই ওভার থেকে লিটন তোলেন ৯ রান।
পাওয়ার প্লে’র শেষ ওভারে আবারও শামির হাতে বল তুলে দেয় রোহিত শর্মা। ওভারের প্রথম দুই বলেই টানা চার ছক্কায় মাত্র ২১ বলে নিজের ফিফটি তুলে নেনে লিটন। ওভারের চতুর্থ অলে আরও এক বাউন্ডারিতে পাওয়ার প্লে’র শেষ ওভারে বাংলাদেশ তোলে ১৬ রান।
পাওয়ার প্লে’র ছয় ওভার শেষে বিনা উইকেটে বাংলাদেশ তুলে ৬০ রান। সপ্তম ওভারে আক্ষর প্যাটেল বোলিংয়ে আসলে তার ওভার থেকে ৬ রান তোলে বাংলাদেশ।
এরপরই অ্যাডিলেদের আকাশ ভেঙে ঝরতে শুরু করে বৃষ্টি। মাঠ ছেড়ে উঠে যেতে হয় দুই দলকেই। আবৃষ্টি শেষে আবার যখন মাঠে ফিরে দুই দল বৃষ্টি আইনে বাংলাদেশের জয়ের জন্য নতুন লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৬ ওভারে ১৫১ রান।
বৃষ্টির পর ব্যাট করতে নেমেই বিপত্তি ঘটে বাংলাদেশের। ব্যাটিংয়ে নেমেই দুর্দান্ত ব্যাট করতে থাকা লিটনের উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ভুল বুঝাবুঝিতে রান আউটের শিকার হন লিটন দাশ। দলীয় ৬৮ রানে ২৭ বলে ৬০ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলে আউট হন তিনি। লিটনের বিদায়ের পর ক্রিজে আসেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। এরপর দলীয় ৮৪ রানে ফের উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ২৫ বলে ২১ রান করে শামির বলে সূর্যকুমারকে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান নাজমুল শান্ত।
এরপর সাকিব ও আফিফ মিলে ফের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। কিন্তু ইনিংসের ১২ তম ওভারে ৫ বলে ৩ রান করে আউট হন আফিফ হোসেন। এরপর দলীয় ১০০ রানে ১২ বলে ১৩ রান করে আউট হন সাকিব। সাকিবের পরপরই সাজঘরের পথ ধরেন ইয়াসির রাব্বি। দলীয় ১০২ রানে ৩ বলে মাত্র ১ রান করে আউট হন তিনি। ইয়াসিরের পর মোসাদ্দেক এসে ১৩ তম ওভারের তৃতীয় বলে একটি ছক্কা মারেন। কিন্তু ওভারের পঞ্চম বলে বোল্ড হয়ে ফিরে যান সাজঘরে। দলীয় ১০৮ রানে ৬ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
এরপর ক্রিজে আসেন তাসকিন আহমেদ। তাসকিনকে সঙ্গে নিয়ে লড়াই চালিয়ে যান সোহান। শেষ ২ ওভারে ৩১ রান প্রয়োজন হয়ে বাংলাদেশের। ওভারের প্রথম বলেই হার্দিককে চার মারেন তাসকিন। ওভারের তৃতীয় বলে ছক্কা হাঁকান তাসকিন আহমেদ। চতুর্থ বলে সিঙ্গেল নেনে তাসকিন। ওভারের পঞ্চম বল ডট দেন সোহান। শেষ বলও ব্যাটে লাগাতে পারেননি সোহান। শেষ ওভারে জয়ের জন্য ২০ রান প্রয়োজন হয় বাংলাদেশের।
শেষ ওভারের প্রথম বলে ১ রান পায় বাংলাদেশ। ওভারের দ্বিতীয় বলে ছক্কা হাঁকান সোহান। শেষ চার বলে ১৩ রান প্রয়োজন হয় বাংলাদেশের। ওভারের তৃতীয় বল ডট দেন সোহান। ওভারের দ্বিতীয় বলে ২ রান নেন সোহান। শেষ ২ বলে ১১ রান প্রয়োজন হয় বাংলাদেশের। ওভারের পঞ্চম বলে চার মারেম সোহান। আর শেষ বলে ৭ রান হয় প্রয়োজন হয় বাংলাদেশের। শেষ বলে ১ রান নিলে ৫ রানে হার মানতে হয় বাংলাদেশকে।
নূরুল সাহান সোহান ১৪ বলে ২৫ ও তাসকিন আহমেদ ৭ বলে ১২ রান করে অপরাজিত থাকেন। ভারতের পক্ষে আর্শদীপ সিং ও হার্দিক পান্ডিয়া নেন ২টি করে উইকেট।
এই জয়ের ফলে ৪ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে এখন ভারত। আর ৪ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে তিন নম্বরে বাংলাদেশ।