ডলার-সংকটের এ সময়ে পণ্য রপ্তানি আবারও কমেছে। গত সেপ্টেম্বরে পণ্য রপ্তানি কমেছিল ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ আর অক্টোবরে ৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ। ফলে টানা দুই মাসে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান দুই উৎস প্রবাসী আয় ও পণ্য রপ্তানি কমল।
সদ্য শেষ হওয়া অক্টোবর মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে ৪৩৫ কোটি ৬৬ লাখ (৪.৩৫ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক গত বছরের অক্টোবর মাসের চেয়ে ৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ কম। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম প্রায় ১৩ শতাংশ।
রপ্তানি কমে যাওয়া প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন ইত্তেফাককে বলেন, প্রথমত রপ্তানি আয় কমার একটা আশঙ্কা অনেক আগে থেকেই করা হচ্ছিল। বড় বাজারগুলোতে মন্দার পূর্বাভাস দেখা যাচ্ছে। যদিও মন্দার আশঙ্কা আছে, কিন্তু মন্দা এখনো আসেনি। ইউরোপ আমেরিকাতে অবশ্যই নয়। দ্বিতীয়ত, সারা বিশ্বে ডলারের মূল্য বৃদ্ধি। বেশির ভাগ বাণিজ্যে মূল্য নির্ধারিত হয় ডলারের ভিত্তিতে। ডলারের মূল্য বাড়ার কারণে আমদানিকারক দেশের কারেন্সিতে মূল্য বেড়ে যাচ্ছে। সেটাও এখানে একটি প্রভাব ফেলতে পারে। এটি সারা বিশ্বে ডলার শক্তিশালী হওয়ার প্রভাব। তৃতীয়ত, শিল্পকারখানাগুলোতে ঠিকভাবে গত কয়েক মাসে বিদ্যুৎ-গ্যাস সরবরাহ করা যায়নি। বিশেষ করে গ্যাসের সংকট রপ্তানিকারকদের জন্য একটি বড় সংকট ছিল। এমনও হয়েছে অর্ডার ছিল কিন্তু সময়মতো পণ্য উৎপাদন না করার কারণে সরবরাহ করা যায়নি।
রপ্তানিকারক ও অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে মূল্যস্ফীতি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি বাজার ইউরোপ-আমেরিকার লোকজন ব্যয় কমিয়ে দিয়েছে। তার প্রভাবে রপ্তানি আয় কমছে। ১৩ মাস পর গত সেপ্টেম্বরে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। ঐ মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে ৩ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার আয় করেন রপ্তানিকারকেরা, যা ছিল গত বছরের সেপ্টেম্বরের চেয়ে ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ কম। সেই ধারাবাহিকতায় অক্টোবরেও নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সাবেক কর্মকর্তা ও বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পিআরআই-এর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর রপ্তানির বিষয়ে বলেন, সমস্যাগুলোকে যথাযথভাবে এড্রেস করতে হবে। পাশাপাশি রপ্তানির হার বাড়াতে হবে। বিদ্যুৎ সংকটের কথা উল্লেখ করে আহসান এইচ মনসুর বলেন, যেভাবে হোক বিদ্যুৎ সরবরাহের পরিমাণ বাড়াতে হবে। কারণ লোডশেডিং অভ্যন্তরীণভাবে কারখানার উৎপাদন সক্ষমতা কমে গেছে। এতে রপ্তানিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) গতকাল বুধবার রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের চতুর্থ মাস অক্টোবরে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য ধরা ছিল ৫ বিলিয়ন ডলার। আয় হয়েছে ৪ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার। গত বছরের অক্টোবরে আয় হয়েছিল ৪ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলার। এ হিসাবেই অক্টোবর মাসে লক্ষ্যের চেয়ে আয় কমেছে ১২ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
তবে অর্থবছরের চার মাসের (জুলাই-অক্টোবর) হিসাবে প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। এই চার মাসে রপ্তানির লক্ষ্য ছিল ১৭ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার। রপ্তানি হয়েছে ১৬ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার। এ হিসাবে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে আয় বেড়েছে ৭ দশমিক শূন্য এক শতাংশ। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কমেছে ৩ দশমিক ২৫ শতাংশ।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসের হিসাবে তৈরি পোশাকের রপ্তানি বেড়েছে ১০ দশমিক ৫ শতাংশ। হোম টেক্সটাইল, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানিও বেড়েছে। অন্যদিকে কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, হিমায়িত খাদ্য, পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি কমেছে।
জুলাই-অক্টোবর সময়ে প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক থেকে আয় হয়েছে ১৩ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক শূন্য পাঁচ বিলিয়ন ডলার। গত বছরের এই চার মাসে আয় হয়েছিল ১২ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এই চার মাসে লক্ষ্যের চেয়ে রপ্তানি কমেছে শূন্য দশমিক ৭৪ শতাংশ। তবে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে আয় বেড়েছে ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংক মঙ্গলবার রেমিট্যান্সের যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, অক্টোবর মাসে গত বছরের অক্টোবরের চেয়ে রেমিট্যান্স কমেছে ৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ।