চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিং প্রতিনিয়ত কমে যাচ্ছে। গত জানুয়ারির পর থেকে প্রতি মাসেই পূর্ববর্তী মাসের চেয়ে কমেছে। একইভাবে গত বছরের একই সময়ের চেয়েও কমে গেছে। চট্টগ্রাম বন্দরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী চলতি অর্থ বছরের (২০২২-২০২৩) প্রথম চার মাসে অক্টোবর পর্যন্ত কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ১০ লাখ ২৩ হাজার ৭৩৯টি।
অথচ গত বছরের একই সময়ে চট্টগ্রাম বন্দর কনটেইনার হ্যান্ডলিং করেছে ১০ লাখ ৮৪ হাজার ২৫২টি। একইভাবে চলতি বছরের (২০২২ সাল) জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসের পরিসংখ্যানেও দেখা যায় পূর্ববর্তী ২০২১ সালের প্রথম ১০ মাসের চেয়ে কম কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে। চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে চট্টগ্রাম বন্দর কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ২৬ লাখ ৫৬ হাজার ২৫৮টি।
অপরদিকে গত বছরে (২০২২ সাল) অক্টোবর পর্যন্ত প্রথম ১০ মাসে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছিল ২৫ লাখ ৭৫ হাজার ৯৭১টি। গত ফেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকেই মূলত কনটেইনার হ্যান্ডলিং কমার প্রবণতা লক্ষণীয়।
সংশ্লিষ্টদের মতে, আমদানি ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় কনটেইনার হ্যান্ডলিং কমে গেছে। আবার দেশের মূল রপ্তানি পণ্য হলো গার্মেন্টস সামগ্রী। এই গার্মেন্টস পণ্য শতভাগ কনটেইনারবাহী হওয়ায় এর রপ্তানি কমার কারণে হ্যান্ডলিংও কমে গেছে। অনুরূপভাবে আবার ব্যাক-টু-ব্যাক এলসির মাধ্যমে গার্মেন্টস কাঁচামালসহ বিভিন্ন ধরনের মেশিনারিজ সামগ্রীর অধিকাংশ কনটেইনারবাহী হওয়ায় এবং উক্ত পণ্য সামগ্রীর আমদানি কমে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবে কনটেইনার হ্যান্ডলিং কম হয়েছে।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী রপ্তানি আয় প্রায় ৮ শতাংশ কমে গেছে শুধু অক্টোবর মাসে। একইভাবে আমদানিও অনেক কমে গেছে। একদিকে ডলারের অত্যধিক মূল্য বৃদ্ধি এবং সরকারের কিছু বাধ্যবাধকতার কারণে পণ্য আমদানির ঋণপত্র বা এলসি অনেক কমে গেছে। অনেক ব্যবসায়ীর অভিযোগ এলসি খোলার জন্য ব্যাংকে গেলেও সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি এলসি মার্জিন সর্বোচ্চ দিয়েও এলসি খোলা যাচ্ছে না। ফলে আমদানি দিন দিন কমে আসছে। নতুন শিল্প কারখানার মেশিনারিজ কিংবা প্রতিষ্ঠানের কাঁচামালের আমদানি তো আরও কমে গেছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, চট্টগ্রাম বন্দরের গত কয়েক বছর ধরে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের যে প্রবৃদ্ধি লক্ষ করা যাচ্ছে তা চলতি বছর কমে আসবে। ২০২০ সালে করোনার কারণে প্রবৃদ্ধির পরিমাণ বৃদ্ধিতে যেভাবে থমকে গেছে এবারও তার পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনা রয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, ডলারের উচ্চ মূল্য ও ডলার সংকটের কারণে আমদানি কমেছে। আবার প্রধান রপ্তানি পণ্য গার্মেন্টস খাতে বিদেশিদের অর্ডার কমে যাওয়া এবং অনেক তৈরি গার্মেন্টস শিপমেন্ট না হওয়ায় রপ্তানি কমে গেছে। তা আগামী কয়েক মাসেও অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিং কমে গেছে।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্গো হ্যান্ডলিংয়ে পূর্বের প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে দেশে খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ও নির্মাণ শিল্পের এবং কিছু মেগা প্রকল্পের কাঁচামাল আমদানি গত কয়েক মাসে বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি অর্থ বছরের (২০২২-২০২৩) অক্টোবর পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর কার্গো হ্যান্ডলিং করেছে ৩ কোটি ৯৪ লাখ ২৯ হাজার ১১৪ মেট্রিক টন। অথচ গত অর্থ বছরের (২০২১-২০২২) অক্টোবর পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর কার্গো হ্যান্ডলিং করেছিল ৩ কোটি ৫৬ লাখ ৮৬ হাজার ৪৩০ মেট্রিক টন। একইভাবে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত কার্গো হ্যান্ডলিং গত বছরের (২০২১) জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসের চেয়ে বেশি হয়েছে। চলতি বছরের ১০ মাসে কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে ১০ কোটি ১২ লাখ ২৬ হাজার ৫৯৬ মেট্রিক টন।
অপরদিকে গত বছর একই সময়ে কার্গো হ্যান্ডলিং করেছিল ৯ কোটি ৫৫ লাখ ২৮ হাজার ৯১০ মেট্রিক টন। এতে দেখা যায়, কার্গো হ্যান্ডলিং বেশি হওয়ায় চলতি বছর ১০ মাসে জাহাজ সংখ্যাও গত বছরের একই সময়ের চেয়ে বেশি হয়েছে। চলতি বছর ১০ মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ এসেছে ৩ হাজার ৬২০টি। গত বছর (২০২১) সালে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে জাহাজ এসেছিল ৩ হাজার ৪৬৮টি।