৩০ বছর ধরে বন্ধ থাকার সুযোগে সিদ্ধিরগঞ্জে মনোয়ার জুট মিলের প্রায় ১০ কোটি টাকার যন্ত্রাংশ লুট হয়ে গেছে। জানা গেছে, শত কোটি টাকার সরকারি এ মিলটি ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ জুট মিল কর্পোরেশন-বিজেএমসি মাত্র ৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকায় মিলটি বিক্রি করলেও টাকা পরিশোধ না করায় ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানকে মালিকানা বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। মিলের ৫০টি ব্রডলুমসহ সব ধরনের যন্ত্রপাতি খুলে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। এখন শুধুমাত্র অবকাঠামো রয়েছে। এদিকে মিলটির মূল্য শতকোটি টাকার বেশি উল্লেখ করে স্থানীয় এক ব্যক্তি বর্তমান দরে বিক্রির আদেশ চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দাখিল করেছেন।
জানা যায়, মনোয়ার জুট মিলটি ১৯৬৫ সালে সিদ্ধিরগঞ্জের শীতলক্ষা নদীর তীরে আটি এলাকায় ৯ একর ৫ শতাংশ জমির ওপর নির্মিত হয়। ১৯৯৩ সালে লোকসানের দায়ে তত্কালীন বিএনপি সরকার এটি বন্ধ করে দেয়। বিজেএমসি মিলটি ১৯৯৭ সালে ৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকায় বিক্রি করে দেয়। এক সময় এই মিলে জুট সরবরাহ করত মেসার্স শামছুন্নাহার জুট ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী সামছুদ্দিন মিলটি ক্রয় করেন। তবে তিনি মিলের কাছে প্রায় ২ কোটি টাকা পাওনা থাকায় মিলের মূল্য পরিশোধে গড়িমসি করেন। ১৪ বার সময় নিয়েও মূল্য পরিশোধ না করায় বিজেএমসি বিক্রয়াদেশটি বাতিল করে দেয়। ২০০২ সালে সামছুদ্দিন বিক্রয়াদেশ বাতিলের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দাখিল করেন। মামলা চলমান অবস্থায় ২০১২ সালে ৪ কোটি টাকা জমা দিলে বিজেএমসি মিলটি দেখাশোনার জন্য ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানকে চার জন নিরাপত্তাকর্মী মিলের নিরাপত্তার জন্য নিয়োজিত করার অনুমতি দেয়।
এছাড়া স্থানীয় এক ব্যক্তি পূর্বের দরের পরিবর্তে বর্তমান দরে বিক্রির আদেশ চেয়ে হাইকোর্টে আরেকটি রিট পিটিশন দাখিল করেন। বর্তমানে দুটি রিটই চলমান রয়েছে। মামলা জটিলতায় ২০ বছরেও কোনো সমাধান না হয়ে উলটো মিলের কোটি কেটি টাকার যন্ত্রাংশ লুটপাট হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, মিলের অভ্যন্তরে কোনো মেশিন কিংবা যন্ত্রাংশ নেই। শুধু জমি ও অবকাঠামো দাঁড়িয়ে রয়েছে। নিরাপত্তা কর্মী দুলাল উদ্দিন ৩০ বছর ধরে এ মিলে নিরাপত্তার দায়িত্বে আছেন। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে মিলে কোনো যন্ত্রাংশ নেই। সব যন্ত্রাংশ চুরি হয়ে গেছে। দুর্বৃত্তরা এক সঙ্গে ৫০-৬০ জন করে জোট বেঁধে এসে যন্ত্রাংশ চুরি করে নিয়ে যায়। বাধা দিলে আমাদেরকে মারধর করে। আমরা বিজেএমসি কর্তৃপক্ষকে বারবার অবহিত করেছি। এছাড়া চুরির বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় বেশ কয়েকটি অভিযোগ ও মামলা রয়েছে।’
একটি সূত্র জানায়, শত কোটি টাকার মিল মাত্র ৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকায় বিক্রির সিদ্ধান্তে ক্ষোভ জানিয়েছেন সাবেক শ্রমিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ। সুত্রটি আরও জানায়, সামছুদ্দিন মিলটি বিক্রির কথা বলে একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে অগ্রিম কোটি কোটি টাকা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে ধানমন্ডি এলাকায় বসবাস করছেন। মিল বুঝে না নিলেও অথবা মিলের মালামাল চুরি হলেও তার কোনো ক্ষতি নেই।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে সামছুদ্দিন বলেন, ‘মিলের মালামাল চুরির বিষয়ে জিডি করা আছে। অবশিষ্ট টাকা দ্রুত পরিশোধ করে মিলটি বুঝে নিয়ে চালানোর চেষ্টা করব। আর চালাতে না পারলে এখানে হাউজিং করা হবে।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিজেএমসির মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন ও সা. সেবা) মো. নাসিমুল ইসলাম বলেন, ‘মামলা থাকায় মনোয়ার জুট মিল হস্তান্তর করা যাচ্ছে না।’ যন্ত্রাংশ চুরির বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি কৌশলে এড়িয়ে গিয়ে বলেন, ‘মিলটি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় মেশিনারিজ অকেজো। এগুলো কোনো কাজে আসবে না।’
এদিকে চোখের সামনে ঐহিত্যবাহী মিলটি ধ্বংস হতে দেখে এ মিলের সাবেক শ্রমিক, কর্মচারী ও স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করে পুনরায় দরপত্র আহ্বান করে দ্রুত মিলটি হস্তান্তরের দাবি জানিয়েছেন ।