মিশরের শার্ম এল-শেখ অবকাশ কেন্দ্রে জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক সম্মেলন (কপ২৭) দ্বিতীয় সপ্তাহে পা দিয়েছে। এখন পর্যন্ত ধনী দেশগুলোর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় কিংবা কার্বন নিঃসরণ হ্রাস করতে কার্যকর কিছুই করা সম্ভব হয়নি।
প্রভাবশালী ব্রিটিশ সংবাদপত্র গার্ডিয়ান জলবায়ু সম্মেলনের গত সাতদিনের কার্যক্রম তুলে ধরে রবিবার একটি বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে। তাতেই উপরের মূল্যায়ন তুলে ধরা হয়েছে।
কপ২৭ সম্মেলনের শুরুর দিকে বিশ্বনেতাদের সামনে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছিলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন রোধে ব্যবস্থা নিন, নয়তো একসঙ্গে আত্মহত্যা করুন। ’
গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে উল্লেখ করে গত সপ্তাহে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে বলা হয়, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখার লক্ষ্য ‘কঠিন অবস্থানে’ রয়েছে।
সারা বিশ্বের ১৯৬টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানসহ ৪৫ হাজারেরও বেশি প্রতিনিধি সম্মেলনের অর্ধেক সময় অতিবাহিত করেছেন। এ সময়ের মধ্যে চলতি বছর ভয়াবহ বন্যার শিকার হওয়া পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা এমন বিপর্যয়ের শিকার হয়েছি যেখানে আমাদের কিছুই করার ছিল না। অবশ্যই এটি মানবসৃষ্ট। ’ এবারের কপে পাকিস্তানের বন্যা ছিল অন্যতম বড় আলোচ্য।
কপ সম্মেলনের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে এবার মিশরে আসেননি সুপরিচিত সুইডিশ জলবায়ু আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ। শার্ম এল-শেখে আসা মানবাধিকারকর্মী ও পরিবেশবাদীদের মূল সম্মেলনস্থলের কাছ থেকে আলাদা করে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে মিশরের কারাগারে অনশনরত ব্লগার আলা আবদ এল-ফাত্তাহর মুক্তির দাবিতে আন্দোলনকর্মীদের অব্যাহত প্রতিবাদ সম্মেলন চলাকালে বড় দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।
কপের সপ্তাহব্যাপী আলোচনায় এশিয়া, আফ্রিকা ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপদেশগুলো ক্ষতিপূরণ দেওয়া ও নিঃসরণ হ্রাস করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ধনী দেশগুলোর উদ্দেশে জোরালো ও আবেগপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছে। এ বিষয়ে সম্ভাব্য অর্থায়ন সম্পর্কে গত বছর কপ সম্মেলনের আয়োজক দেশ যুক্তরাজ্য এবং এবারের আয়োজক মিশর গত মঙ্গলবার যৌথভাবে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ওই প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জলবায়ু অর্থনীতিবিদ লর্ড স্টার্ন বলেন, চীন ছাড়া বাকি উন্নয়নশীল বিশ্বের জন্য ২০৩০ সালের জলবায়ু খাতে দুই ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রয়োজন।
কিন্তু ক্ষতিপূরণ ও জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমণে অর্থায়ন সম্পর্কে ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, জার্মানিসহ ইউরোপীয় দেশগুলো থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র কেউই এখনও কোনও সুনির্দিষ্ট অবস্থান তুলে ধরেনি। গত শুক্রবার কপের মঞ্চে দাঁড়িয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষতিপূরণের প্রসঙ্গ এড়িয়ে গেছেন। এ নিয়ে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি।
গার্ডিয়ানের বিশ্লেষণে আরও বলা হয়, এবারের সম্মেলনে কার্বন নিঃসরণকারী তেল ও গ্যাস কম্পানির প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ গত সম্মেলনের চেয়ে ২৫% বেড়েছে। সংখ্যায় তারা ছয় শর বেশি। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, গত ছয় বছরের মধ্যে আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত প্রথম কপ সম্মেলনের মধ্যেই জার্মানিসহ বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশ আফ্রিকা থেকেই গ্যাস আমদানির দেন-দরবারে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। আফ্রিকা মহাদেশের অনেক নেতা গ্যাস রপ্তানির জন্য ইউরোপীয় নেতাদের আলোচনা করছেন শার্ম এল-শেখে বসেই।
এসবের মধ্যেও একটি বড় অগ্রগতির কথা শোনা যাচ্ছে। বিশ্বব্যাংক জাতিসংঘের কোনও অঙ্গপ্রতিষ্ঠান না হওয়া সত্ত্বেও কপ২৭ মঞ্চে উপস্থিত হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন খাতে এর কাজ করার সুযোগ সীমিত। তবে শার্ম এল-শেখের সম্মেলনে আশা করা হচ্ছে, বিশ্বব্যাংক এসংক্রান্ত ঋণ কিংবা অনুদানের অর্থায়ন বাড়াতে সংস্কারের পথে অগ্রসর হবে। এটি কপ২৭ সম্মেলনের বড় একটি অর্জন হতে পারে।