বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ফারদিন নুর পরশকে রূপগঞ্জের চনপাড়া বস্তি এলাকার মধ্যেই হত্যা করা হয়েছে। রায়হান গ্রুপের প্রধান রায়হানসহ ৮-১০ জন এই হত্যাকান্ডে অংশ নেয়। তাদের উদ্দেশ্য ছিল ফারদিনকে জিম্মি করে টাকা আদায়। কিন্তু ফারদিন প্রতিবাদ করায় তাকে হত্যা করে রায়হান গ্রুপের সদস্যরা। এরপর চানপাড়ার শাওনের প্রাইভেটকারে করে তার লাশ নারায়নগঞ্জে নিয়ে শীতলক্ষ্যা নদীদের ফেলে দেয়। ইতিমধ্যে র্যাব হত্যাকান্ডে অংশ নেওয়া রায়হানসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এছাড়া প্রাইভেটকারের মালিক শাওনকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। র্যাবের দায়িত্বশীল একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। ওই সূত্রটি বলেছে, রায়হান ইতিমধ্যে হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করেছে। কিভাবে হত্যা করা হয়েছে তাও সে বর্ণনা করেছে।
এদিকে ফারদিনের বাবা কাজী নুর উদ্দিন রানা বলেছেন, আমার ছেলে কোনদিন সিগারেটে একটি টান দেয়নি, সে ফেনসিডিল খাবে কীভাবে? তিনি বলেন, এটি এমন কোনও ঘটনা নয় যে হুটহাট করে মারামারির কারণে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। যারা পরিকল্পিত কোনও ঘটনা ঘটায় তারা তো অবশ্যই আটঘাট বেঁধেই পরিকল্পনা করে থাকে। ছেলেকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও তদন্ত কর্মকর্তারা এই রহস্য উন্মোচন এবং সঠিক ঘটনা উন্মোচনে কাজ করবেন বলেও আশা করি আমি।
তিনি বলেন, আমি শুরু থেকেই বলে এসেছিলাম এটি একটি হত্যাকাণ্ড। এই ঘটনা পরিকল্পিত এখনও সেটাই বলছি। আমার ছেলে কোনও ধরনের মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। যদি নারায়ণগঞ্জের চনপাড়ায় তার লোকেশন শনাক্ত হয় তাহলে ট্র্যাপে ফেলে কেউ তাকে সেখানে নিয়ে গেছে। ভয়ভীতি দেখিয়ে পরবর্তীতে তাকে নির্যাতন করে হত্যা করেছে। যদি তার লোকেশন নারায়ণগঞ্জ হয়, তাহলে আমি বলবো সে কখনও নিজে থেকে সেখানে যেতে পারে না। তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাকে কোনোভাবে ট্র্যাপ করে রাখা হয়েছিল। তাকে আটক করে রাখা হয়েছিল এবং ফোন তার সঙ্গে রাখা হয়েছিল।
এদিকে বুয়েট শহীদ মিনারে ফারদিন হত্যার সুষ্ঠু তদন্তের দাবিতে গতকাল সোমবার সকালে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা। সেখানে অংশ নেন ফারদিনের বাবা। তিনি অভিযোগ করেন, কিছু সংবাদমাধ্যম বিষয়টিকে ভিন্নখাতে নেয়ার চেষ্টা করছে। ফারদিন হত্যাকাণ্ডে মাদক সংশ্লিষ্টতার খবর নিয়ে তার বাবা বলেন, যে ছেলে ধূমপান করে না, সিগারেটের গন্ধ সহ্য করতে পারে না, সে কীভাবে ফেনসিডিল খাবে? এটা কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। যেসব গণমাধ্যম ফারদিনের মাদক সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি সামনে এনেছে, তারা তদন্তকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছে। রামপুরা থেকে চনপাড়া যাওয়ার সহজ পথে মেরাদিয়া দিয়ে না গিয়ে ফারদিন এত ঘুরে কেন সেখানে যাবে? ফারদিনের মৃত্যু মেধা ও মননের ওপর আঘাত উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘ফারদিনের মাথায় ও বুকে আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে। কারণ হত্যাকারীরা তার মেধা ও মননকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল। আমার ছেলে মেধাবী বলে তার ব্রেনে আঘাত করা হয়েছে।
হত্যার রহস্য উন্মোচনে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদন্তের ওপর শতভাগ আস্থা রাখতে চান জানিয়ে ফারদিনের বাবা বলেন, ‘আমি চাই তারা দ্রুত এর রহস্য বের করে প্রকৃত অপরাধীদের সাজার আওতায় নিয়ে আসুক, যেন কেউই ছাড় না পায়।’ উল্লেখ্য গত ৪ নভেম্বর নিখোঁজ হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী ফারদিন নুর পরশ। ৭ নভেম্বর শীতলক্ষ্যা নদীতে তার লাশ পাওয়া যায়। ময়নাতদন্ত করা চিকিৎসক, তার পরিবার ও সহপাঠীদের দাবি, ফারদিনকে হত্যা করা হয়েছে। শরীরে আঘাতের চিহ্নও পাওয়া গেছে।