খেলাপি ঋণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের বিপরীতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে আটটি ব্যাংক। এসব ব্যাংকের তালিকায় চারটি সরকারি ও বেসরকারি চারটি ব্যাংক রয়েছে। সরকারি ব্যাংকগুলো হলো অগ্রণী, বেসিক, জনতা, রূপালী। বেসরকারি ব্যাংকগুলো হলো কমার্স, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট, ন্যাশনাল ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক। তবে কিছু কিছু ব্যাংক প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত প্রভিশন সংরক্ষণ করায় পুরো ব্যাংকিং খাতের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৫২৯ কোটি টাকা।
নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংক যেসব ঋণ দেয় তার গুণমান বিবেচনায় নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রভিশন হিসেবে জমা রাখতে হয়। কোনো ঋণ শেষ পর্যন্ত মন্দ ঋণে পরিণত হলে তাতে যেন ব্যাংক আর্থিকভাবে ঝুঁকিতে না পড়ে, সেজন্য এ প্রভিশন সংরক্ষণের নিয়ম রাখা হয়েছে। ব্যাংকের অশ্রেণিকৃত বা নিয়মিত ঋণের বিপরীতে দশমিক ২৫ থেকে ৫ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হয়। নিম্ন বা সাব-স্ট্যান্ডার্ড ঋণের বিপরীতে রাখতে হয় ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ বা কুঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ১১ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা। জুন শেষে এ ঘাটতি ছিল ১১ হাজার ১৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে বেসিক ব্যাংকে ঘাটতি ৪ হাজার ৫৬২ কোটি টাকা; জুনে যা ছিল ৪ হাজার ৪৪১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। অগ্রণী ব্যাংকের ঘাটতি ৩ হাজার ৫২১ কোটি টাকা। জুনে ছিল ২ হাজার ৯৭৩ কোটি ২২ লাখ টাকা। সরকারি ব্যাংকের মধ্যে তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে রূপালী। ৩ হাজার ১৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা প্রভিশন ঘাটতিতে পড়েছে ব্যাংকটি। জুনে রূপালীর ঘাটতি ছিল ২ হাজার ৯৬২ কোটি ১০ লাখ টাকা। চতুর্থ অবস্থানে থাকা জনতা ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি কিছুটা কমে হয়েছে ৫৯৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকা; জুনে যা ছিল ৬৪০ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
বেসরকারি চার ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ৮ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু ন্যাশনাল ব্যাংকেরই ঘাটতি ৭ হাজার ৪৭৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। জুনে ঘাটতি ছিল ৭ হাজার ১১৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ৩৪৪ কোটি ৬৮ লাখ টাকা প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে। এ ছাড়া মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ১৭১ কোটি ১৫ লাখ টাকা ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ১৪৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে।
বছরের তৃতীয় প্রান্তিক জুলাই-সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে প্রভিশন সংরক্ষণের প্রয়োজন ছিল ৮৮ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা। কিন্তু সংরক্ষণ করেছে ৭৫ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা। কোনো কোনো ব্যাংক প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত অর্থ নিরাপত্তা সঞ্চিতি হিসেবে রেখে দেওয়ায় সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতে ঘাটতির পরিমাণ কিছুটা কম। ফলে ব্যাংক খাতের সার্বিকভাবে নিরাপত্তা সঞ্চিতি ঘাটতি ১৩ হাজার ৫২৯ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতের মোট ঋণ ১৪ লাখ ৩৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা; যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ। জুন শেষে মোট ঋণ ছিল ১৩ লাখ ৯৮ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপির পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২৫ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর সময়ে তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৯ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা।