চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়া নিয়ে সেখানকার শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির লাইফলাইন হিসেবে খ্যাত এ বন্দরকে বিদেশিদের হাতে ছেড়ে না দিতে ইতিমধ্যে বন্দরে লিফলেট বিতরণ করছে শ্রমিক-কর্মচারীরা। ঐ লিফলেটে যে কোনো মূল্যে বন্দরে বিদেশি কোম্পানির আগ্রাসন ঠেকাতে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তোলার হুমকি দেওয়া হয়েছে। শ্রমিক-কর্মচারীদের দাবি, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও দেশীয় বিনিয়োগকারীদের পরীক্ষিত ও প্রশংসনীয় সক্ষমতাকে পাশ কাটিয়ে বিদেশি কোম্পানির হাতে বন্দর পরিচালনার দায়িত্ব দিলে অনেকে বেকার হয়ে পড়বেন। এ বিষয়ে তারা সরকারের শীর্ষ মহল তথা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারকারী শ্রমিক-কর্মচারী লীগ (সিবিএ) গত কিছুদিন ধরে সেখানে প্রচারপত্র বিলি করে যাচ্ছে। সংগঠনের সভাপতি মো. মীর নওশাদ এবং সাধারণ সম্পাদক হাজি মোহাম্মদ আলমগীরের নামে বিলি করা প্রচারপত্রে বলা হয়, চট্টগ্রাম বন্দর দেশের সমৃদ্ধির স্বর্ণদ্বার এবং অর্থনীতির হৃদপিণ্ড। বর্তমানে বিশ্বের ১০০টি ব্যস্ততম বন্দরের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান ৬৪তম। চলতি সময়ে এই বন্দর নিয়ে ব্যবসায়ী ও দেশি-বিদেশি জাহাজ মালিকদের কোন অভিযোগ নেই। ২০২১ সালে বন্দরে সাড়ে ৩২ লাখ টিইউএসের বেশি কনটেইনার হ্যান্ডলিং করে ১৩৪ বছরের রেকর্ড অতিক্রম করেছে। বছর বছর বন্দরের আয়ও বেড়েছে। এতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি বার্থ ও টার্মিনাল অপারেটর, শ্রমকি-কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্ট সকলেই প্রশংসার দাবিদার।
প্রচারপত্রে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রশংসা করে বলা হয়, বন্দর তার নিজস্ব অর্থায়নে চট্টগ্রাম কনটেইনার টার্মিনাল (সিসিটি), নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি), একাধিক কনটেইনার ইয়ার্ড নির্মাণসহ পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের অবকাঠামো নির্মাণ শেষ করেছে। কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য অত্যাধুনিক হাসপাতাল নির্মাণসহ উন্নতমানের বাসস্থান নিশ্চিত করেছে। পাশাপাশি বে-টার্মিনাল নির্মাণের কাজও বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব অর্থায়নে করেছে। এর বাইরে পায়রা সমুদ্রবন্দর উন্নয়নে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে অর্থ দেওয়া হচ্ছে। এক কথায় চট্টগ্রাম বন্দর এখন পুরোপুরি স্বয়ংসম্পূর্ণ। এ অবস্থায় বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং দেশীয় বিনিয়োগকারীদের উদ্যোগে পরিপূর্ণ সক্ষমতার এই বন্দরকে বিদেশি কোম্পানির হাতে ছেড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা উদ্দেশ্যপূর্ণ। এতে দেশের অর্থনীতির ভিত মজবুতকারী মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশে চলে যাবে—যা দেশের অর্থনীতির জন্য মন্দাভাব ডেকে আনবে—যা এই মুহূর্তে দেশ ও জাতির জন্য আত্মঘাতী হবে বলে তারা মনে করেন।
শ্রমিক-কর্মচারীরা তাদের প্রচারপত্রে আরো বলেছেন, স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে শুরু করে যে কোনো ক্রান্তিলগ্নে শ্রমিক এবং কর্মচারীরা চট্টগ্রাম বন্দরকে সচল রেখেছে। এখন এটির প্রতিদান না দিয়ে যদি বন্দরকে বিদেশি কোম্পানির হাতে ছেড়ে দেওয়া হয় তাহলে হাজার হাজার মেহনতি শ্রমিক-কর্মচারী চাকরিচ্যুত হবে। তাই এ মুহূর্তে চট্টগ্রাম বন্দরের সিসিটি, এনসিটি এবং পিসিটি পরিচালনায় বিদেশিদের ডেকে না আনার জন্য নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রীসহ প্রধানমন্ত্রীর কাছে শ্রমিক-কর্মচারীরা দাবি জানিয়েছেন।
শ্রমিক-কর্মচারীরা তাদের প্রচারপত্রে আরো বলেছে, এলসিএল কনটেইনার হতে বন্দরের বিভিন্ন শেডে পণ্য আনস্টাফিং কাজ নিয়েও গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। এই কাজটি মেহনতি মানুষদের পরিবারের রুটি রুজির অন্যতম স্থান। বন্দরের অভ্যন্ত থেকে এ কাজটি স্থানান্তর করা হলে শ্রমিক-কর্মচারীরা চাকরিচ্যুত হবেন না মর্মে আশ্বাসও দাবি করেছে তারা।