মুক্তির আগেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে তরুণ নির্মাতা যুবরাজ শামীমের ‘আদিম’। শুধু প্রশংসাই নয়, মস্কোর পর নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত কুইন্স ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের সেরা সিনেমার পুরস্কারও জিতেছে ছবিটি। এবার দেশে মুক্তির পালা। দেশের বাইরে ছবিটির পুরস্কার লাভ ও দেশে মুক্তিসহ নানা বিষয়ে কথা বলেছেন নির্মাতা শামীম।
আদিম’ সিনেমাটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দুটি পুরস্কার লাভ করেছে। তো দেশে মুক্তির বিষয়ে কি ভাবছেন?
মুক্তি দেওয়ার এই সংগ্রামী পথটা এখনো চলতে পারছি। কারণ, আদিম স্বীকৃতি পাওয়ার পর এর নাম কিছু মানুষ জেলে তারা পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু আমার কথা হলো- যার গল্পটা মুক্তির আগে স্বীকৃতি পাবে না, মানুষের কান পর্যন্ত পৌঁছবে না, যার পাশে কেউ নেই তার জন্য সিনেমা মুক্তি দেওয়া তো অনেক কষ্টের। এতো টাকা তারা কোথায় পাবে? এটা একজন তরুণ নির্মাতার জন্য অনেক বড় বাজেট।
ছবিটি মুক্তিকে দেড়ির কারণ কি?
যেকোনো প্রাপ্তিই আসলে আনন্দের। তবে আমাদের দেশে চলচ্চিত্র নির্মাণের চেয়ে মুক্তির প্রক্রিয়া জটিল। অনাপত্তিপত্র সেন্সর বোর্ডে জমা দেওয়া, অনেক টাকার বিনিময়ে চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতির সদস্য হওয়া এছাড়াও অন্যান্য ফি রয়েছে। যেটা আসলে আমাদের মতো স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতাদের জন্য একটু কঠিনই। এছাড়া আমি এবং ছবির অভিনয়শিল্পী কাউকেই মানুষ চেনেন না। ফলে ছবিটা মুক্তি দেওয়ার বিষয়টাও কিন্তু সহজ না। তবে মুক্তির আগে মস্কো এবং কুইন্স’র মতো এমন আন্তর্জাতিক দুটি স্বীকৃত আমার ছবির মুক্তির প্রক্রিয়াকে সহজ করে দিয়েছে। এখন ‘আদিম’র প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। মুক্তির সবকিছুই প্রক্রিয়াধীন। সদস্য পদের আবেদন করেছি, শিগগিরই সেন্সর বোর্ডে জমা দিবো। এখন মনে হচ্ছে, আমি ‘আদিম’ মুক্তি দিলে মানুষ দেখবে।
মুক্তির আগে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি নতুন কাজ-দায়িত্বের জায়গাটা বাড়িয়ে দিলো কি না?
দায়িত্ব অবশ্যই বেড়েছে। তবে প্রশংসা কিন্তু সব সময় সুখকর নয়। কারণ, পরবর্তী গল্প কি হতে পারে? আগে যা খুশি তাই লিখতে পারলেও এখন গল্প লিখতে গেলে চিন্তায় থাকি গল্পটা ঠিক আছে কিনা, ভালো হচ্ছে কিনা ইত্যাদি।
‘আদিম’ গল্পটি বেছে নেওয়ার কারণ কি?
গল্প বেছে নেওয়া নয়, আমি বিভিন্ন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাই। যখন যেখানে যেভাবে যাদের সঙ্গে ভালো লাগে সময় কাটাই সেখান থেকেই গল্পের একটা ভাব চলে আসে। আর এ গল্পটা তৈরির অন্যতম একটি কারণ আর্থিক বিষয়। কেননা এর আগে একটা ফিচার ফ্লিম এর গল্প থাকলে আশপাশে তেমন লোকেশন নেই। দূরের লোকেশনে একটা আর্থিক ব্যাপার থাকে। তাই আশপাশের মানুষের সঙ্গে মিশতে মিশতে এই গল্পটির সৃষ্টি হয়। বস্তিতে সময় কাটানোর অভিজ্ঞতা তো অল্প বাক্যে বলা যাবে না তবে মজার ব্যাপার হলো বস্তিবাসী আমাকে গোয়েন্দা সংস্থার লোক মনে করে আর পুলিশ ভেবেছে আমি মাদক কারবারির সদস্য এবং পুলিশ আমায় গ্রেফতারও করে। বস্তিবাসীকে বার বার বললেও তারা আমাকে বিশ্বাস করেনি। তবে যখন আন্তর্জাতিক স্বীকৃত পেলাম, তাদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করলাম, নিউজ হলো এসব দেখে বস্তির যেসব মানুষ অভিনয় করছে পাশাপাশি অন্যরাও খুশিতে আমাকে নিয়ে নানান কথা বলছে, সংবর্ধনা দেওয়ার কথাও বলছে। তাদের চিন্তার এই পরিবর্তন আমার ভালো লাগছে।
তারকাহীন সিনেমা ‘আদিম’ দর্শকদের কতটুকু চাহিদা মেটাতে পারবে?
তারকাহীন সিনেমা দর্শকদের চাহিদায় কোনো প্রভাব ফেলবে কিনা জানি না। তবে আমি আশাবাদী, দর্শকদের সিনেমা দেখার দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে। দিন দিন গল্প নির্ভর সিনেমা দেখার দর্শক তৈরি হচ্ছে।
সিনেমা নিয়ে সামনের পরিকল্পনা কি?
আমি মুহূর্তে বাঁচা মানুষ, তেমন কোনো পরিকল্পনা নেই। সামনে কি হবে সেটা নিয়ে ভাবি না। আমি আসলে আমার কাজ নিয়েই থাকতে চাই। অনেক প্রডিউসার আমাকে পরবর্তী কাজের জন্যে বললেও আমি আসলে পরিকল্পনা করে কাজ করতে পারিনা। হঠাৎ কিছু মাথায় আসলে সেটা নিয়ে ভাবতে শুরু করি। আপাতত, সময় নিচ্ছি আমি।