আর কিছু দিন পরেই কাতারে পর্দা ওঠবে ‘দ্যা গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ ফুটবল বিশ্বকাপের। বিশ্বকাপের ম্যাচ মাঠে গড়াতে বাকী আর মাত্র ৩ দিন। কাতারে অনুষ্ঠেয় ২২তম ফিফা বিশ্বকাপই হতে পারে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, লিওনেল মেসি, রবার্ট লেভানদোভস্কি, লুইস সুয়ারেজ, লুকা মড্রিচ, দানি আলভেস, ম্যানুয়েল নয়্যার এবং টমাস মুলারের ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপ। বয়সের কারণে বিশ্বকাপের পরই জাতীয় দলের জার্সি তুলে রাখার ঘোষণা দিতে পারেন একঝাঁক ধ্রুবতারা। এবারের আসরের পর ২০২৬ সালের বিশ্বকাপের মঞ্চে এসব খেলোয়াড়দের না দেখার সম্ভাবনা প্রখর।
ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো (পর্তুগাল): ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর বয়স এখন ৩৭ বছর। ২০১৮ বিশ্বকাপের পরই জানিয়েছিলেন কাতারে শেষ বিশ্বকাপ খেলবেন। শেষ বিশ্বকাপে নিজেকে উজাড় করে দিকে একটুও কার্পণ্য করবেন না রোনালদো। এই মৌসুমে এখন পর্যন্ত ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে হতাশাজনক সময় কাটিয়েছেন রোনালদো। এখন দেখার বিষয় কাতার বিশ্বকাপে কি করতে পারেন তিনি। ইতিমধ্যেই ১১৭ গোল করে আন্তর্জাতিক ফুটবলে সর্বকালের সর্বোচ্চ স্কোরার রোনালদো। পর্তুগালের হয়ে রেকর্ড ১৯১টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। পাঁচবারের ব্যালন ডি’অর জয় করা রোনালদো যেখানে খেলেছেন, সেখানেই গোল করেছেন। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে প্রথম মেয়াদে ট্রফি জিতেছেন। রিয়াল মাদ্রিদে শিরোপা জয়ের সংখ্যা আরও বাড়ে। সিরি আ’তে জুভেন্টাসের হয়ে দু’টি দু’টি শিরোপার স্বাদও নিয়েছেন তিনি। এই মৌসুমে ভালো কিছু করতে পারেননি রোনালদো। প্রিমিয়ার লিগের নয়টি ম্যাচে মাত্র এক গোল করেছেন রোনালদো। যার বেশিরভাগই এসেছে বদলি হিসেবে খেলতে নেমে।
লিওনেল মেসি (আর্জেন্টিনা): আর্জেন্টিনার অনেক আশা রোজারিওর ছোট্ট শিল্পী লিওনেল মেসির উপর। ৩৫ বছর বয়সে কাতার বিশ্বকাপে খেলবেন আর্জেন্টিনার ছোট ফুটবল জাদুকর। সাতটি ব্যালন ডি’অর খেতাব নিয়ে রোনালদোকে ছাড়িয়ে গেছেন তিনি। শেষটি বাদে সবগুলোই ছিলো বার্সেলোনা ক্যারিয়ারে। গেল মৌসুমে ব্যালন ডি’অরের সংক্ষিপ্ত তালিকায় নাম না থাকলেও এই মৌসুমে ছন্দে ফিরেছেন মেসি। ২০১৪ সালে বিশ্বকাপ আর্জেন্টিনাকে ফাইনালে তুলেছিলেন মেসি। কিন্তু ট্রফি মেসির হাতে উঠেনি। ২০২১ কোপা আমেরিকা জিতে প্রথমবারের মত বড় আন্তর্জাতিক শিরোপায় চুমু দিতে পারেন মেসি।
রবার্ট লেভানদোভস্কি (পোল্যান্ড): লিওনেল মেসি এবং ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর ছায়ায় যে কৃতিত্ব পাওয়ার যোগ্য ছিলেন তা পাননি ৩৪ বছর বয়সী রেবার্ট লেভানদোভস্কি। জার্মান বুন্দেস লীগায় বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের হয়ে চার বছর, পরে বায়ান মিউনিখের আট বছর নীরবে গোল করে গেছেন লেভানদোভস্কি। সম্প্রতি বার্সেলোনায় যোগ দেয়ার আগে ডর্টমুন্ড ও মিউনিখের হয়ে ৩৮৪টি ম্যাচে ৩১২ গোল করেছেন লেভানদোভস্কি। পোল্যান্ডের অধিনায়ক লেভানদোভস্কি দেশের হয়ে ১৩৪টি ম্যাচে রেকর্ড ৭৬টি গোল করেছেন। এরমধ্যে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে নয়টি । বিশ্বকাপে এখনও গোল করতে পারেননি লেভানদোভস্কি। ২০১৮ সালে বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছিলো পোল্যান্ড।
লুইস সুয়ারেজ (উরুগুয়ে): ১৩৪ গোল নিয়ে উরুগুয়ের সর্বকালের সর্বোচ্চ স্কোরার ৩৫ বছর বয়সী লুইস সুয়ারেজ। নিজের চতুর্থ বিশ্বকাপ খেলতে নামবেন তিনি। আয়াক্স, লিভারপুল, বার্সেলোনা এবং অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদে বিতর্কে জড়ানোর পর ক্যারিয়ারের এই অর্ধে উরুগুয়ের রাজধানী মন্টেভিডিওতে ছেলেবেলার ক্লাব ন্যাসিওনালের সাথে যুক্ত থাকা অবস্থায় এটি তার প্রথম বিশ^কাপ হবে। ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে সময় গ্রুপ পর্বের ম্যাচে ইতালির ডিফেন্ডার জর্জিও চিয়েলিনির কাঁধে কামড়ানোর জন্য সুয়ারেজকে দেশে পাঠানো হয়েছিলো। ২০২১ সালে ক্লাবের সাথে নিজের প্রথম মৌসুমে অ্যাটলেটিকোকে স্প্যানিশ লিগের শিরোপা জিততে সহায়তা করেছিলেন। ন্যাসিওনালে যোগ দেয়ার আগে আরও একটি মৌসুম সেখানে কাটান। বার্সেলোনা এবং রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে খেলার সময় রোনালদোর সাথে দ্বন্দে জড়িয়েছেন সুয়ারেজ। ২৮ নভেম্বর লুসেল স্টেডিয়ামে পর্তুগালের বিপক্ষে খেলতে নামবে উরুগুয়ে। শীঘ্রই পুরানো প্রতিদ্বন্দ্বী সাথে আবারও দেখা হবে সুয়ারেজের।
লুকা মড্রিচ (ক্রোয়েশিয়া): ৩৭ বছর বয়স হওয়া সত্বেও ক্রমেই আরও বেশি জ্বলে উঠছেন মড্রিচ। রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে নিজের দশম মৌসুমে খেলছেন তিনি। স্প্যানিশ ক্লাবের হয়ে এক দশকের সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন মড্রিচ। এ সময়ে পাঁচটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা এবং তিনটি লিগ শিরোপা জিতেছেন মড্রিচ। এছাড়াও ২০১৮ সালে ব্যালন ডি’অর জিতেছিলেন তিনি। ক্রোয়েশিয়ার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ মড্রিচ। মিডফিল্ডে তার দুর্দান্ত পারফরমেন্স ২০১৮ সালে ক্রোয়েশিয়াকে বিশ্বকাপের ফাইনালে তুলেছিলো। সেই ফাইনালে ফ্রান্সের কাছে হেরেছিল মড্রিচের দল। টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে গোল্ডেন বল জয় করা এ তারকা খেলোয়াড় ক্যারিয়ারে পঞ্চম বিশ্বকাপ খেলতে নামছেন।
দানি আলভেস (ব্রাজিল): সর্বকালের সেরা আক্রমণাত্মক রাইট ব্যাকদের মধ্যে একজন ব্রাজিলের ৩৯ বছর বয়সী দানি আলভেস। আন্তর্জাতিক ক্যারয়িারকে উচ্চতায় শেষ করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ তিনি। বিশেষ করে হাঁটুর ইনজুরির কারণে গত বিশ্বকাপ মিস করার পরে এবার ভালো করতে মরিয়া আলভেস।
মাত্র দুটি বিশ্বকাপ খেলেছেন আলভেস। ২০১০ এবং ২০১৪ সালে। ২০০৮ সালে বার্সেলোনায় যাবার আগে সেভিয়ার হয়ে খেলার সময় মাঠের ডান-প্রান্ত দিয়ে দুর্দান্ত গতিতে বল নিয়ে ছুটে যাবার খ্যাতি পেয়েছিলেন তিনি। জুভেন্টাস এবং প্যারিস সেন্ট-জার্মেইতে যোগ দেয়ার আগে সেভিয়ার হয়ে আটটি শিরোপার স্বাদ নিতে পারেন তিনি। এরপর সাও পাওলো, গত বছর বার্সেলোনায় ছাড়ার পর এ বছর মেক্সিকান ক্লাব পুমাসে যোগ দেন আলভেস।
ম্যানুয়েল নয়্যার (জার্মানি): নিঃসন্দেহে জার্মানি থেকে উঠে আসা সেরা গোলরক্ষকদের একজন ৩৬ বছর বয়সী নয়্যার। ২০১৪ সালে জার্মানির বিশ্বকাপ জয়ে ছিল বড় ভূমিকা ছিলো তার। ঐ আসরে বিশ্বকাপের সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার গোল্ডেন গ্লাভসও জিতেছিলেন তিনি। বছর শেষে ব্যালন ডি অরের সেরা তিনেও জায়গা করে নিয়েছিলেন নয়্যার। যা গত দুই দশকে আর কোনো গোলরক্ষকই করতে পারেননি। ক্লাব ক্যারিয়ারে বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে দু’বার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও টানা ১০ বার বুন্দেসলিগা জিতে ইতোমধ্যেই পেশাদার ফুটবলের কিংবদন্তিদের আসনে জায়গা করে নিয়েছেন নয়্যার। এবার চতুর্থ বিশ্বকাপ খেলতে নামবেন নয়্যার।
থমাস মুলার (জার্মানি): ২০১০ বিশ্বকাপে পাঁচটি গোল করেছিলেন ৩৩ বছর বয়সী থমাস মুলার। এরপর থেকে জার্মানি এবং বায়ার্ন মিউনিখের নিয়মিত সদস্য ছিলেন তিনি। ২০১৮ সালে বিশ্বকাপে বাজে পারফরমেন্সের অজুহাত দিয়ে ২০১৯ সালে মুলারকে বাদ দেন জোয়াচিম লো। কিন্তু গত বছর ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য দলে ফিরিয়ে আনা হয় মুলারকে এবং দলে নিজের জায়গা প্রতিষ্ঠিত করেন তিনি । ২০১০ সাল থেকে জার্মানির হয়ে ১১৮ ম্যাচে ৪৪ গোল করেন মুলার। পেশাদার লিগে বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে ২০০৮ সালে খেলা শুরু করে এখন পর্যন্ত ৪২৩ ম্যাচে ১৩৯ গোল করেছেন তিনি।