জমাকালো এক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পর্দা উঠে গেছে মরুর বুকের প্রথম কাতার বিশ্বকাপের। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেশ চমক দেখিয়েছে আয়োজক কাতার। বিতর্ককে পাশ কাঁটিয়ে বিশ্বের সবার কাছে প্রশংশিতও হয়েছে দুর্দান্ত এক উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।
আল-বায়াত স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছিল চমকের পর চমক। সবচেয়ে বড় চমক ছিল কিংবদন্তি অভিনেতা মরগ্যান ফ্রীম্যানের উপস্থিতি। সেই পারফরম্যান্সকে বিশ্বের সকল মানুষের নজর কেড়েছে তার সঙ্গে ঘানিম আল মুফতাহ এর অংশগ্রহণ।
২০০২ সালের ৫ মে বিরল সিডিএস (কডাল রিগ্রেশন সিনড্রোম) রোগ নিয়েই জন্মগ্রহণ করেন এই তরুণ। ঘানিমের জন্মের পূর্বেই এই রোগ ধরা পড়লে অনেকেই ঘানিমের মাকে গর্ভপাত করার কথা বলেন। কিন্তু ঘানিমের মা রাজি না হয়ে এমন অবস্থায় সন্তানকে লালন-পালন করার সিদ্ধান্ত নেন। ঘানিমের মা তার বাবাকে বলেন, সন্তানের নিম্নাংশ নেই তো কি হয়েছে, আমি হবো তার বাম পা আর তুমি হবে তার ডান পা।
ঘানিমের জন্য বেড়ে ওঠাটা খুব একটা সহজ ছিল না, স্কুলের সহপাঠীদের দ্বারা সব সময় বুলিংয়ের শিকার হয়েছেন তিনি। কিন্তু তার মায়ের অদম্য চেষ্টায় ঘানিম এই সমস্যা কাটিয়ে ওঠেন। ঘানিমের দমে না যাওয়ার চেষ্টায় তাকে কাতারের একজন সফল মিডিয়া ব্যাক্তিত্ব হিসেবে গড়ে তোলে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘানিমের ৩০ লক্ষেরও বেশি ফলোয়ার রয়েছে। ঘানিমের জীবনটা প্রথম থেকেই কঠিন, প্রতিনিয়ত বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে পার করতে হয় তাকে। এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরণের টেস্ট এবং অপারেশন। কিন্তু প্রতিনিয়ত এই ধরণের মেডিকেল রুটিনের পরও দমে যাননি ঘানিম। কঠিন পরিশ্রম আর ইচ্ছা শক্তির জোরে সে এখন সফল একজন ব্যাক্তিত্ব। পড়াশোনার প্রতি ঘানিমের রয়েছে যথেষ্ট আগ্রহ, বর্তমানে তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পড়াশোনা করছেন।
বিভিন্ন আলোচনা-সমালোচনার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে কাতার বিশ্বকাপ। আপাতত সকল আলোচনার বাইরে এই তরুণ, মরগ্যান ফ্রীম্যানের সঙ্গে তার এই পারফরম্যান্স জয় করে নিয়েছে দর্শকদের মন।
ঘানিম পৃথিবীর সকল মানুষের কাছেই এক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। কারণ কোনো প্রতিবন্ধকতা তাকে তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে বাধা সৃষ্টি করতে পারে নাই। অদম্য মনোবলের জোরে ঘানিম এগিয়ে চলেছে তার লক্ষ্যে।