পৃথিবীব্যাপী প্রায় ৪০ কোটি মানুষ টেলিভিশন সেটের সামনে ছিলেন চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল দেখার জন্য। টেলিভিশন পর্দায় ম্যাচ শুরুর নির্ধারিত সময়ের আগেই ভেসে উঠলো, “স্টেডিয়ামে ঢুকতে সমর্থকদের দেরি হওয়ার কারণে ১৫ মিনিট দেরিতে শুরু হবে ম্যাচ।”
শেষ পর্যন্ত ৩৬ মিনিট দেরিতে শুরু হয় রেয়াল মাদ্রিদ ও লিভারপুলের ম্যাচ।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালের ভেন্যু স্তাদে ডি ফ্রান্সে এমন এক ঘটনা ঘটলো সচরাচর দেখা যায় না।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালের জন্য ভেন্যুতে প্রায় আশি হাজার সমর্থকদের বসার ব্যবস্থা ছিল, কিন্তু অনেকেই নিরাপত্তা প্রাচীর ভেদ করে চলে আসতে চাইলেই ঘটে বিপত্তি।
এসময় পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ টিয়ার শেলও নিক্ষেপ করে।
ছবিতে উঠে এসেছে প্যারিসে এই রাতে স্টেডিয়ামের আশে পাশে লম্বা লাইন ছিল, যেখানে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছিল।
অনেকে দাবি করেন, নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই স্টেডিয়ামের গেটে ভিড় করেছিলেন তারা, কিন্তু তাদের ঢুকতে দেয়া হয়নি।
লিভারপুল ক্লাব এই ঘটনায় একটি বিবৃতি দিয়েছে, “আমরা সত্যিই হতাশ স্টেডিয়ামে ঢোকা নিয়ে যা হয়েছে তা কাম্য নয়। নিরাপত্তাও ভেঙ্গে পড়েছিল একটা সময়। লিভারপুলের সমর্থকরা যে পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে তা প্রত্যাশিত নয়।”
“এটা ইউরোপের সেরা ম্যাচ, এখানে সমর্থকরা যে অভিজ্ঞতা পেল তা কোনওভাবেই কাম্য নয়।”
ইউরোপিয়ান ফুটবল সংস্থা ইউয়েফা একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, “যারা এই ঘটনায় প্রভাবিত হয়েছেন তাদের প্রতি সহমর্মী, দ্রুতই ফরাসী পুলিশ ও কর্তৃপক্ষের কাছে একটা তদন্ত প্রতিবেদন চাওয়া হবে।”
“খেলার আগে লিভারপুল সমর্থকদের যে গেট সেখানে টিকিট চেক করার বুথে অনেকেই জড়ো হয়েছিল যাদের হাতে ছিল ভুয়া টিকিট এবং সেটা মেশিনে রিড করেনি।”
“এটা একটা হট্টগোল তৈরি করেছে মাঠে ঢোকার মুখে। যে কারণে ৩৫ মিনিট দেরি করা হলো এবং এমন ব্যবস্থা তৈরি করতে হলো যাতে যাদের কাছে আসল টিকিট আছে তারা ঢুকতে পারেন স্টেডিয়ামে।”
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, মাঠে খেলা শুরু হওয়ার পরেও আরও অনেকে মাঠে ঢোকার চেষ্টা করেন। তখন পুলিশ টিয়ার গ্যাস দিয়ে তাদের স্টেডিয়ামে ঢুকতে বাধা দেয়।”
ফরাসী পুলিশ নির্ধারিত সময়ের বিশ মিনিট আগে একটি টুইট করে অনুরোধ জানায় যাতে কোনও সমর্থক জোর করে ঢোকার চেষ্টা না করে।
কিন্তু দেখা যায় খেলার সময় চলে আসার পরেও অনেক সিট ফাঁকা।
বাইরে বিশৃঙ্খল পরিবেশ, কেউ কেউ প্রাচীর বেয়ে ওঠার চেষ্টা করেছে কেউ কেউ নিরাপত্তা কর্মীদের ফাঁকি দিয়ে ঢোকার চেষ্টা করছে।
সেখানে দাঙ্গা পুলিশও ছিল।
লিভারপুলের ফুটবলাররা প্যারিসের স্থানীয় সময় আটটা ছয় মিনিটে মাঠে নামে তখন মাঠের বড় স্ক্রিনে দেখা যায় সমর্থকদের ঢুকতে দেরি হওয়ায় খেলা শুরু হতে দেরি হচ্ছে।
ফরাসী পুলিশ বলছে, অনেকে ভুয়া টিকিট নেয়ার চেষ্টা করলে সেখানে পুলিশ দ্রুত হস্তক্ষেপ করে এবং আসল টিকিট পাওয়াদের ঢোকার ব্যবস্থা করে দেয়।
তারা আরও যোগ করেছে ‘তেমন কোনও ঝামেলা ছাড়াই’ অনেক মানুষ সরিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিল পুলিশ।
যদিও লিভারপুলের ফ্যানজোন কোর্স ডি ভিনসেন থেকে ৫০০ মানুষ সরিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটেছে, শহরের অন্য ফ্যানজোনেও তেমন কোনও বড় ঘটনা ঘটেনি বলেই জানিয়েছে পুলিশ যেখানে সমর্থকরা জড়ো হয়ে বড় পর্দায় খেলা দেখেছে।
একেবারেই অযৌক্তিক একটা পরিস্থিতি
বিবিসির সাংবাদিক নিক প্যারোট ছিলেন মাঠের ঠিক বাইরে তিনি বিবিসি রেডিও ফাইভের লাইভে বলেন, “জীবনে প্রথমবার আমি মরিচের গুঁড়ো ছেটাতে দেখলাম। আমি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে আগেও এসেছি কিন্তু এমন পরিস্থিতি তৈরি হতে দেখিনি।”
“আমি গেট ওয়াইয়ের বাইরে ছিলাম। এটা একবার খোলা হচ্ছিল ও বন্ধ করা হচ্ছিল এক দেড় ঘণ্টা ধরে। কিন্তু কাউকেই ভিতরে যেতে দেখিনি এসময়। সেখানে নিরাপত্তাকর্মীরা এগিয়ে এসে মরিচের গুঁড়ো ছেটালো।”
স্থানীয় সময় আটটা বিশ মিনিটের দিকে ফাইনালের আগের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হয়। প্যারিসের সময় অনুযায়ী আটটায় ম্যাচ শুরু হওয়ার কথা ছিল।
ফুটবল সাপোর্টার্স ইউরোপ নামে একটি সংগঠন থেকে ম্যাচ শুরুর দশ মিনিট পরে বলা হয়, “এখনো হাজারো সমর্থক গেটের বাইরে আটকে আছে। একেবারেই অযৌক্তিক একটা পরিস্থিতিতে শান্ত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছেন তারা।”
“আজ যা হলো তাতে সমর্থকদের মোটেও কোনও দায় নেই।”
বিবিসি স্পোর্টের জন ওয়াটসন মাঠ থেকে জানান, “খেলা শুরু হওয়ার ঘন্টা খানেক আগে থেকেই শত শত লিভারপুল সমর্থকদের দেখেছি লাইনে দাড়িয়ে আছেন। কিন্তু তাদের ঢুকতে দেয়া হচ্ছিল না তখন।”
“মাঠে বলা হচ্ছিল সমর্থকরা আসতে দেরি হওয়ায় খেলা শুরু হতে দেরি হচ্ছে যা দেখে আমি হতভম্ব আসলে।”
লিভারপুলের ওয়েস্ট ডার্বির এমবি ইয়ান বাইর্ন টুইটারে লিখেছেন, “এটা আমার জীবনের সবচেয়ে বাজে অভিজ্ঞতা।”
তিনি এমন পরিস্থিতি, নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য ইউয়েফাকে দায়ি করছেন।”
তিনি যোগ করেন, “আশা করছি কোনও সমর্থক আহত হননি বা কোনও ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি কারও।”
সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইলের ডমিনিক কিং বিবিসি রেডিও ফাইভ লাইভে বলেছেন, তিনি সমর্থকদের সাথে কথা বলছিলেন।
“এটা কেন হলো জানি না। কোনও ধরনের উৎপাত বা সহিংসতা দেখিনি সমর্থকদের মধ্যে। সেখানে কর্তৃপক্ষ যেই ব্যবহারটা তাদের সাথে করছিল তারা অবাক হয়ে দেখছিলের।”
বিবিসি রেডিও ফাইভ লাইভে কথা বলেন লিভারপুলের সমর্থক টাইলার তিনি এক হাজার পাউন্ড খরচা করে টিকিট কিনেছিলেন।
“আমি ৪৫ মিনিট আগে সেখানে যাই এবং দেখি আমাদের যেখানে ঢোকার কথা সেখানে লোকে লোকারণ্য।”
এই ফাইনাল ম্যাচটি হওয়ার কথা ছিল রাশিয়ার সেইন্ট পিটার্সবুর্গে, রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ করার পর ভেন্যু বদল করা হয়।