স্ত্রীর জন্য ‘তাজমহল’ গড়ে ইতিহাসে স্মরনীয় হয়েছেন স্বামী সম্রাট শাজাহান। কিন্তু কোন মমতাজ স্বামীর জন্য ‘শাজাহান মহল’ গড়েনি। তবে এবার স্বামীকে বাঁচাতে নিজের লিভার দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন চুয়াডাঙ্গার দর্শনা পৌরসভার মেয়র মতিয়ার রহমানের স্ত্রী রোজী রহমান।
বর্তমানে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই সুস্থ আছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মেয়র মতিয়ার রহমানের ছোট ভাই আতিয়ার রহমান হাবু।
তিনি বলেন, “ লিভার সিরোসিস রোগে আক্রান্ত আমার বড় ভাইয়ের প্রায় পুরো লিভারই অকেজো হয়ে পড়েছিল। ডাক্তার জানান, প্রতিস্থাপন করতে হবে নতুন একটি কিংবা একটির বড় অংশ। কিন্তু অন্য কারো সঙ্গে না মেলায় সেই অস্ত্রোপচার সম্ভব হচ্ছিল না। পরে আমার ভাবি (মেয়র পত্নী) রোজী খাতুনের সঙ্গে শতভাগ মিলে যায়। স্বামীকে বাঁচাতে তিনি রাজি হন। এরপর ৯ নভেম্বর আমরা ভারতের দিল্লী এ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করি। সেখানে বৃহ¯পতিবার (২৪ নভেম্বর) রাত ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত টানা ১২ ঘন্টার অস্ত্রোপচারে লিভার প্রতিস্থাপন সফল হয়। স্ত্রী রোজী খাতুন তার স্বামীকে ৩০ শতাংশ লিভার দিয়েছেন। বর্তমানে দুজনেই আশংকামুক্ত বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।”
দর্শনা পৌরসভার প্যানেল মেয়র মোঃ রবিউল হক সুমন বলেন, মেয়র সহেব লিভার সিরোসিজের রোগী ছিলেন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন লিভার টান্সফার করতে হবে। পরে বিভিন্ন জায়গায় চেষ্টা করেও মেলাতে পারেনি। পরে নিজের স্ত্রীর সঙ্গে শতভাগ মিলে যায়। সেই সময় তার স্ত্রী রোজী রহমান বলেন, “আমার স্বামীকে যদি বাঁচাতে পারি তাহলে আমার জীবন ধন্য। এরপরই বৃহস্পতিবার ভারতের দিল্লিতে অ্যাপোলো হাসপাতালে টানা ১২ ঘন্টার অস্ত্রোপচারে লিভার প্রতিস্থাপন সফল হয়। ”
চয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের নব-নির্বাচিত চেয়ারমান ও দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মাহফুজুর রহমান মনজু বলেন, “আমি মেয়র সাহেবকে আমার ছেলের মতো জানি। আমি ‘বাবু’ বলে ডাকি। দর্শনা ইসলাম বাজারে আমার বাড়ি আর তাঁর বাড়ি এক প্রাচীর। তারঁ বাবা মরহুম শামসুল ইসলাম (আমাদের শামসুল ভাই) আর আমি একসাথে রাজনীতি করেছি। ‘বাবু’ দীর্ঘদিন যাবত লিভার সমস্যায় ভুগছিলেন। চিকিৎসক জানিয়েছিলেন লিভার প্রতিস্থাপন করা ছাড়া উপায় নেই। তাই তার স্ত্রী স্বামীকে বাঁচাতে লিভার দিয়েছেন। নিজের জীবন বিপন্ন করে স্বামীকে নিজের লিভার দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন মেয়র পত্নী রোজী খাতুন।”
মেয়র মতিয়ার রহমান দর্শনা পৌরসভার চারবারের নির্বাচিত মেয়র এবং দর্শনা পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি। তার বাবা মরহুম শামসুল ইসলামও ছিলেন তৎকালীন দর্শনা ইউনিয়ন পরিষদের চারবরের চেয়ারম্যান এবং দর্শনা আওয়ামীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন।