চালের দাম নিয়ন্ত্রণে হঠাৎ গজিয়ে ওঠা ব্যবসায়ীরা কারসাজি করছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে কড়া নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বিশেষ করে করপোরেট ব্যবসায়ীদের মধ্যে যারা চালের কারবারে নেমেছেন তাদের সম্পর্কে খোঁজ নিতে বলা হয়েছে।
তাদের এ সংক্রান্ত ব্যবসার অনুমোদন আছে কিনা খতিয়ে দেখতে হবে। মূল্য স্বাভাবিক রাখতে অতিদ্রুত তেলের মতো চালের বাজারেও বিশেষ অভিযান চালানোর জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
কৃষি, খাদ্য ও বাণিজ্য মন্ত্রণায়কে চালের দাম বিষয়ে আরও কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় তা দ্রুত জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এদিকে আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতুর সুপার গর্জিয়াস উদ্বোধন হবে বলেও জানিয়েছেন খন্দকার আনোয়ার। তবে এই বিষয়টি মন্ত্রিসভায় আলোচনা হয়নি।
সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে চালের বিষয়ে এসব নির্দেশ দেওয়া হয়। দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে বিকালে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
বৈঠকের আলোচ্যসূচির বাইরে থাকলেও চালের দামের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এ বিষয়ে গোয়েন্দা প্রতিবেদন এবং কিছু পরামর্শ ছিল তার পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বৈঠক শেষে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রিসভার এক সদস্য বলেন, যখন দেশব্যাপী ধান ঘরে উঠছে ঠিক তখন চালের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই বিষয়টিকে কোনোভাবেই মানতে পারছে না সরকার।
তাই ধান-চাল সংক্রান্ত অবৈধ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অভিযানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে বড় শিল্পগোষ্ঠীর যারা চালের ব্যবসায় নেমেছে, তারা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে কিভাবে বাজার নিয়ন্ত্রন করছে তা খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে।
ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী একটি অস্থির অবস্থা চলছে। তখন দেশের উৎপাদিত প্রধান খাদ্য নিয়ে যেসব ব্যবসায়ী নয়-ছয় করবে তাদের সরকার বিন্দুমাত্র ছাড় দেবে না।
খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, বাজার যাচাই করে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উদাহরণ দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, অনেক ব্যবসায়ী আছেন, তারা মনে করেন একটা লাইসেন্স থাকলেই তারা সব ধরনের ব্যবসা করতে পারবেন।
যেমন-কিছু দিন আগে ডেইরি খাতের একটি প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎকেন্দ্র করার প্রস্তাব নিয়ে এসেছে। আমরা নাকচ করে দিয়েছি। তেমনি অনুমোদন না থাকার পরও যারা চালের ব্যবসায় নেমেছেন তাদের বিষয়ে বড় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, কৃষিমন্ত্রী, খাদ্যমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, খাদ্য সচিব, বাণিজ্য সচিব ও কৃষি সচিবকে দ্রুত চালের দাম বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ তৈরি করতে বলা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কিছু দিন আগে তেলের বাজারে যেভাবে অভিযান চালানো হয়েছে, ওই রকম অভিযান চালানো সিদ্ধান্ত হয়েছে।
উল্লেখ্য, দেশে এখন বোরো ধানের ভরা মৌসুম। প্রতি বছর এ সময় চালের দাম কমতির দিকে থাকে। কিন্তু এবার উলটো চালের দাম বেড়ে যাচ্ছে। গত কয়েক সপ্তাহে চালের দাম তিন থেকে আট টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
এ ছাড়াও গতকালের মন্ত্রিসভা বৈঠকে ‘বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন আইন’, ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট (সংশোধন) আইন’-এর সংশোধনের যথাক্রমে চূড়ান্ত ও নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
বৈঠকে ‘জাতীয় শিক্ষা মূল্যায়ন কেন্দ্র আইন-২০২২’ শীর্ষক একটি নতুন আইন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে প্রস্তাব করা হলেও সেটির প্রয়োজন নেই বলে অনুমোদন দেয়নি মন্ত্রিসভা।
এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, শিক্ষা মূল্যায়নের ক্ষেত্রে বিদ্যমান প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোগুলোর সমন্বয়ের মাধ্যমে এ সংক্রান্ত উদ্যোগ নিতে মন্ত্রিসভা নির্দেশ দিয়েছে। মন্ত্রিসভার বৈঠকে ওমানের সঙ্গে একটি চুক্তির অনুসমর্থনের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এর মাধ্যমে কূটনৈতিক, অফিশিয়াল ও বিশেষ পাসপোর্টধারীদের ওমান যেতে ভিসা লাগবে না। এ ছাড়া ‘আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তি (আরটিএ) নীতি-২০২২’-এর অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এর মাধ্যমে আশপাশের দেশগুলোর সঙ্গে ব্যবসায়িক লেনদেনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
সুইফটের বিকল্প প্রস্তাব : আমদানি-রপ্তানিতে বাংলাদেশ ‘সুইফট’ কোডের মাধ্যমে লেনদেন করেথাকে। এর বিকল্প হিসেবে হংকং ও সিঙ্গাপুরভিত্তিক কিছু আন্তর্জাতিক পেমেন্ট সিস্টেমের প্রস্তাব পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
মন্ত্রিসভায় এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। প্রস্তাবকারীদের রেফারেন্স দিয়ে খন্দকার আনোয়ার জানান, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের প্রস্তাবে বলেছে, বাংলাদেশ যদি তাদের সঙ্গে থাকে তাহলে আমদানি করতে যে এলসি খোলা হবে তার বিপরীতে খুব কম খরচে উৎপাদকদের পেমেন্ট দিয়ে দেবে তারা।
আবার যখন বাংলাদেশ রপ্তানি করবে তখন তাদের ডলার না দিয়ে টাকায় পেমেন্ট করা যাবে। সেই সঙ্গে আমদানি রপ্তানির যে ব্যালেন্স আছে সেটা তারা সমন্বয় করবে।
এতে বাংলাদেশের ডলার ব্যবহারের প্রয়োজন হবে না, এতে দেশে ডলারের ওপর যে চাপ, সেটা থাকবে না। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রাথমিকভাবে কাজ করছে। এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।