প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নিজস্ব অর্থায়নে বহুলপ্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত বিশ্বের দরবারে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। এতে জাতির আত্মবিশ্বাসও বেড়েছে। রোববার সেনা সদর দপ্তরের মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে আর্মি সিলেকশন বোর্ড সভায় তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি পদ্মা সেতু প্রকল্পে মিথ্যা দুর্নীতির অভিযোগ আনায়-কোনো বোর্ড মিটিং না করেই বিশ্বব্যাংক সেতুটি নির্মাণে অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছিল। যদিও পরে ওই অভিযোগ ভিত্তিহীন প্রমাণিত হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যে অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্জন করেছি (বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি অর্জন করেছে) তা নিয়ে আমাদের আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে।
সেনাবাহিনীর বিভিন্ন গঠনমূলক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশ আর্মি সব সময়ই অবকাঠামো নির্মাণসহ দেশের সার্বিক উন্নয়নে অবদান রেখে গেছে। কোভিড-১৯ মহামারিতে সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, বিজিবিসহ সবাই জনগণের দুঃসময়ে পাশে দাঁড়িয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রশমন ও অভিযোজন সংক্রান্ত সরকারি পদক্ষেপ সম্পর্কে তিনি বলেন, জলবায়ু উদ্বাস্তুদের আশ্রয় দিতে কক্সবাজারের খুরুসকুলে ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হয়েছে। সারা দেশে কেউ ভূমিহীন এবং গৃহহীন থাকবে না। কারণ সরকার বিনামূল্যে জমি দিয়ে বাড়ি করে দিচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বে বাংলাদেশই একমাত্র উদাহরণ, যেখান থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গতিশীল নেতৃত্বে তিন মাসের মধ্যে মিত্রবাহিনী তাদের দেশে ফিরে গেছে।
তৎকালীন পূর্ব (বর্তমানে বাংলাদেশ) এবং পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে প্রতিটি সেক্টরে বিশেষ করে সরকারি চাকরিতে বৈষম্যের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, পাকিস্তানি সামরিক সার্ভিসে শুধু একজন কর্নেল ছিলেন। তবে এখন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে জেনারেল আছেন। বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে বলেই এটা সম্ভব হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের ঊর্ধ্বে উঠে নেতৃত্বের জন্য পেশাদারি দক্ষতা, উৎকর্ষ, সততা ও দেশপ্রেমসম্পন্ন কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, নিরপেক্ষ মূল্যায়নের মাধ্যমে দক্ষ নেতৃত্ব নির্বাচন করা সম্ভব এবং পদোন্নতির জন্য উচ্চ নৈতিক চরিত্রের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। যারা দায়িত্বে আছেন, তারা সততা, ন্যায়পরায়ণতা এবং ন্যায়বিচারের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন।
তিনি বলেন, আনুগত্যসহ নেতৃত্বের জন্য দৃঢ় মানসিকতা, সততা এবং অন্যান্য গুণাবলিসম্পন্ন কর্মকর্তারা উচ্চতর পদোন্নতির জন্য যোগ্য। যাদের সামরিক জীবনে সফল নেতৃত্বের রেকর্ড রয়েছে-এমন অফিসারদের পদোন্নতির জন্য বিবেচনা করা উচিত।’
সেনাবাহিনীর সদস্যরা সর্বদা জনগণের পাশে থাকে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তারা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অত্যন্ত প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে বিশ্বব্যাপী দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি উন্নত, পেশাদার ও প্রশিক্ষিত বাহিনী গড়ে তুলতে ১৯৭২ সালে কুমিল্লায় মিলিটারি একাডেমি প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। তিনি ১৯৭৪ সালে প্রতিরক্ষা নীতি প্রণয়ন করেন। আমরা সেই নীতি অনুসরণ করে ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’ প্রণয়নের মাধ্যমে সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন অব্যাহত রেখেছি।
প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব গোলাম মো. হাসিবুল আলম প্রমুখ সভায় উপস্থিত ছিলেন।