কী লেখা আছে আর্জেন্টিনার ভাগ্যে? লিওনেল মেসিরা কি আজকের কঠিন পরীক্ষায় পাশ করে নিজেদের ভাগ্যটাকে নিজেদের মুখী করতে পারবেন? নকআউটে উঠে খুলতে পারবেন পরবর্তী পথের দুয়ার? নাকি গ্রুপ পর্বেই চুরমার হবে তাদের বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন? এ রকম হাজারটা প্রশ্ন মাথায় নিয়েই আজ গ্রুপ পর্বের শেষ পরীক্ষায় বসতে যাচ্ছে মেসির আর্জেন্টিনা।
শুধু আর্জেন্টিনা নয়, এই প্রশ্নগুলো মাথায় নিয়েই আজ গ্রুপ পর্বের শেষ যুদ্ধে নামছে আরো ছয়টি দল। যার একটি আর্জেন্টিনারই প্রতিপক্ষ পোল্যান্ড। হ্যাঁ, ম্যাচ নয়, যুদ্ধই। যে ম্যাচের ওপর নির্ভর করছে টুর্নামেন্টে টিকে থাকা বা ছিটকে পড়ার বিষয়, সেই ম্যাচকে যুদ্ধ বলাই যায়। আর্জেন্টাইনরা তো আরো এক ধাপ এগিয়ে আজকের ম্যাচটাকে ‘ফাইনাল’ হিসেবেই নিয়েছে। মেক্সিকোর বিপক্ষে আশা জাগানো জয়ের পর যেমন মেসি নিজেই বলেছেন, ‘আমাদের বিশ্বকাপ এখন থেকে শুরু। পরের ম্যাচটি আমাদের জন্য ফাইনালের মতো।’ মেসিদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে পোল্যান্ড, সৌদি আরব, মেক্সিকো, অস্ট্রেলিয়া, ডেনমার্ক ও তিউনিসিয়াও বলতে পারে আজ তাদের ‘ফাইনাল’।
সি ও ডি গ্রুপের আট দলের লড়াই আজ। এর মধ্যে ডি গ্রুপের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স প্রথম দুই ম্যাচ জিতেই সবার আগে শেষ ষোলো নিশ্চিত করেছে। ফরাসিরা বাদে দুই গ্রুপের বাকি সাত দলই আশা-নিরাশার দোলাচলে দুলছে। সাত দলেরই যেমন সম্ভাবনা আছে নকআউটে ওঠার, তেমনি সাত দলই কাঁপছে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায়ের শঙ্কায়। পয়েন্টের ভিত্তিতে কারো আশাটাই বড়, কারো বা বাদ পড়ার শঙ্কাটাই বড়। কিন্তু এটাই সত্য যে, এই সাত দলের মধ্যে চারটি দলের বিশ্বকাপ স্বপ্ন আজই ভেঙে খানখান হবে। বিদায় বেদনায় নীল হয়ে খালি হাতেই ধরতে হবে দেশের বিমান। তাদের হতাশার বিপরীতে পরের রাউন্ডে যাওয়ার উৎসবে মাতবে তিনটি দল। যে উৎসব চার দিন আগেই সেরে ফেলেছে ফ্রান্স। তবে ফ্রান্সের জন্য যে ম্যাচটা স্রেফ নিয়ম রক্ষার, তাদের প্রতিপক্ষ তিউনিসিয়ার জন্য সেটিই অগ্নিপরীক্ষা। কিংবা তার চেয়েও বেশি। কারণ, নকআউটে যেতে তিউনিসিয়ার প্রথম দরকার ফ্রান্সের বিপক্ষে জয়, তারপর তাকিয়ে থাকতে হবে অস্ট্রেলিয়া-ডেনমার্ক ম্যাচের ফলের দিকে। মানে তিউনিসিয়ার নকআউট-ভাগ্যটা শুধুই তাদের হাতে নেই। নিজেদের কাজটা ঠিকঠাক করার পর অন্যের সহায়তাও নিতে হবে। দুটো সমীকরণ এক সুতোয় মিললেই কেবল খুলবে নকআউট স্বপ্নের দরজা। অন্যথায় বাদ। তিউনিসিয়ার মতো ডেনমার্ক এবং মেক্সিকোর অবস্থাও একই। নিজেদের ভাগ্য নির্ধারণের ব্যাপারটা শুধুই নিজেদের হাতে নয়, অন্যের সাহায্যও দরকার। তবে মেসির আর্জেন্টিনা, রবার্ট লেভান্ডভস্কির পোল্যান্ড, সৌদি আরব ও অস্ট্রেলিয়ার ভাগ্যটা তাদের নিজেদের হাতেই। যদি নিজ নিজ ম্যাচে তারা জিততে পারে, তাহলে অন্য কারো সহায়তার দরকার হবে না। কিন্তু ড্র বা হারের হতাশায় পুড়তে হয়, তাহলে এদের অনেককেই তাকিয়ে থাকতে হবে অন্যের দিকে।
সি গ্রুপে পয়েন্ট তালিকার সবার ওপরে পোল্যান্ড। ৪ পয়েন্ট তাদের। সমান ৩ পয়েন্ট করে হলেও গোল ব্যবধানে এগিয়ে থাকায় আর্জেন্টিনা দুইয়ে, সৌদি আরব তিনে। মাত্র ১ পয়েন্টের মালিক মেক্সিকো সবার নিচে। এই চার দলের শীর্ষ দুটি দলই আজকের কঠিন পরীক্ষায় মুখোমুখি। পোল্যান্ডের সামনে আর্জেন্টিনা। গ্রুপের অন্য ম্যাচে মুখোমুখি হবে সৌদি আরব ও মেক্সিকো। ডি গ্রুপে কে কার মুখোমুখি সেটি তো আগেই বলা হয়েছে।
কঠিন সমীকরণের ভিত্তিতে আজকের প্রতিটি ম্যাচই ফাইনাল। তার পরও আর্জেন্টিনা ও পোল্যান্ড ম্যাচ নিয়েই ফুটবলপ্রেমীদের কৌতূহল থাকবে বেশি। সেটি মেসি এবং তার আর্জেন্টিনার কারণেই। কেউ কেউ ম্যাচটি নিয়ে আগ্রহের কারণ হিসেবে রবার্ট লেভান্ডভস্কির নামটিও নিতে পারেন। নিশ্চিতভাবেই বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা ফরোয়ার্ডদের একজন লেভান্ডভস্কি। গ্রুপ পর্ব থেকেই তার বিশ্বকাপ মিশন শেষ হয়ে গেল, সেটা হবে দুঃখের। আফসোসেরও। আর একই প্রসঙ্গে যদি মেসি ও তার আর্জেন্টিনার নাম আসে, তাহলে? সেক্ষেত্রে আক্ষেপের মাত্রাটা আরো ভারী হবে।
বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা চিরকালীন ফেভারিট। এবারও শিরোপার মিশন নিয়েই এসেছে তারা। আর এই মিশনে আর্জেন্টিনাকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন যিনি, সেই মেসি ফুটবলে সম্ভাব্য সবকিছুই জিতেছেন। বাকি শুধু এই বিশ্বকাপ। ফুটবলপ্রেমীদের অনেকেরই অভিমত, মেসি যে মানের খেলোয়াড়, তাতে তার হাতে অন্তত একবার বিশ্বকাপ ট্রফি তুলে দেওয়াটা ফুটবলের দায়! নয়তো মেসির কাছে চির ঋণী হয়ে থাকবে ফুটবল! সেই দায় কাতার বিশ্বকাপ মেটাবে কি না, বলবে সময়। তবে গ্রুপ পর্ব থেকেই মেসি এবং তার আর্জেন্টিনা বিদায় নিলে, সেটা হবে বিশ্বকাপের জন্যও ক্ষতিকর। তেমনটা হলে অনেকটাই রং হারিয়ে ফেলবে কাতার বিশ্বকাপ!
ফুটবল তার দায় মেটাক বা না মেটাক, মেসি নিজ এবং তার দল নিজ হাতেই নিজেদের ভাগ্যের চাকাটা ঘুরিয়ে নিজেদের মুখী করতে বদ্ধপরিকর। মেক্সিকোর বিপক্ষে পাওয়া জয়টিকে তারা বানিয়ে নিয়েছে ফুরফুরে মেজাজে থাকার টনিক। আজকের কঠিন পরীক্ষার আগে সত্যিকার অর্থেই খোশ মেজাজে আছেন মেসি ও তার দল। দলকে মানসিকভাবে চাঙ্গা রাখার কাজে মেসি নিজেই নেতৃত্ব দিচ্ছেন। মেক্সিকোর বিপক্ষে জয়ের পর যেমন মেসি ড্রেসিংরুমে গিয়ে উদোম গায়ে নেচেছেন। সতীর্থদেরও নাচতে অনুপ্রাণিত করেছেন। শুধু তাই নয়, সতীর্থদের আনন্দে রাখতে নিজ হাতে মাংস রান্না করেও খাইয়েছেন মেসি। রেকর্ড সাতবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী তারকার এত কিছু করার কারণ একটাই, দলকে কঠিন যুদ্ধে জিতিয়ে নকআউটের টিকিট কাটা। মেসিরা পারবেন নকআউট আশা পূরণ করে আরো বড় স্বপ্নের দরজা খুলতে?
সি গ্রুপে আর্জেন্টিনা-পোল্যান্ড ও সৌদি আরব-মেক্সিকোর ম্যাচ দুটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় আজ রাত ১টায়। ডি গ্রুপে ফ্রান্স-তিউনিসিয়া ও অস্ট্রেলিয়া-ডেনমার্ক ম্যাচটি দুটি শুরু হবে রাত ৯টায়।