নীল দলের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সম্প্রতি শিক্ষাঙ্গনসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করার অপপ্রয়াস লক্ষ করা যাচ্ছে। একাত্তরের পরাজিত শক্তি ও পাকিস্তানিদের প্রেতাত্মা সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর মদদদাতাদের ষড়যন্ত্র ও আস্ফালন শুরু হয়েছে। আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারী পঁচাত্তরের খুনি চক্রও নতুন করে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের সশস্ত্র অনুপ্রবেশের অপচেষ্টা এবং ষড়যন্ত্রকারী দেশীয় ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তির তৎপরতা এসবের ইঙ্গিত দেয়। এ ধরনের কার্যক্রমের পেছনে গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে আমরা মনে করি। দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্র অতিক্রম করে অমিত সাহসী রাষ্ট্রনায়ক বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার দৃঢ়তায় নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের তারিখও ঘোষণা করা হয়েছে।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘পদ্মা সেতু চালু হলে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি তথা জনগণের আত্মবিশ্বাসে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটবে। শত ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে যখন পদ্মা সেতু উদ্বোধন হতে যাচ্ছে, সেই মুহূর্তে জনগণের মনোযোগ ভিন্ন খাতে সরিয়ে নিতে এ ধরনের অপতৎপরতা শুরু হয়েছে বলে আমরা মনে করি। পদ্মা সেতুতে বিদেশি অর্থায়ন বন্ধ করেও প্রকল্পটি বাতিল করতে না পেরে তারা ভিন্ন কৌশলে এর কৃতিত্বকে ম্লান করতে চাইছে। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অশালীন বক্তব্য দেওয়াসহ পঁচাত্তরের প্রসঙ্গ টেনে এনে প্রকারান্তরে তাঁকে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তারা ভুলে গেছে, দেশের মাটিতে পঁচাত্তরের কালো অধ্যায়ের পুনরাবৃত্তি আর কোনোক্রমেই সম্ভব নয়। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তি এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সজাগ ও সক্রিয়।’
আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষকসমাজ এ ধরনের অপতৎপরতার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করছে। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বিঘ্নিত করা এবং দেশে বিরাজমান শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনষ্ট করার যেকোনো অশুভ তৎপরতাকে প্রতিহত করে শান্তিপূর্ণ শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে আমরা বদ্ধপরিকর। আমরা বিশ্বাস করি, দেশের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন নাগরিকেরা অন্ধকারের শক্তির অপতৎপরতাকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান ও প্রতিহত করবে। খুনি চক্রের দোসর ও মদদদাতাদের নতুন ষড়যন্ত্রের নীলনকশা উন্মোচন করে ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নিতে আমরা সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
সম্পাদক সাইফ মাহমুদের দেওয়া এক বক্তব্যকে কেন্দ্র করে ২২ মে সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র–শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) এলাকায় ছাত্রদলের নেতা–কর্মীদের ওপর প্রথমে হামলা চালায় ছাত্রলীগ। এর প্রতিবাদ ও সাইফ মাহমুদের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে ২৪ মে ছাত্রদল সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিল।
গত ২৪ মে সকালে টিএসসিতে পূর্বঘোষিত সংবাদ সম্মেলনে যাওয়ার পথে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে ছাত্রলীগের হামলার শিকার হন ছাত্রদলের নেতা–কর্মীরা। ওই ঘটনায় নিজেদের ৩০ জন নেতা–কর্মী আহত হন বলে দাবি করে ছাত্রদল। সেদিন দুপুরে দোয়েল চত্বরে দুই পক্ষে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে। এরপর ২৬ মে দুপুরে ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঢোকার চেষ্টা করলে হাইকোর্ট মোড়ে ছাত্রলীগের সঙ্গে তাদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। একপর্যায়ে ছাত্রলীগের ধাওয়ার মুখে ছাত্রদলের নেতা–কর্মীদের একটি অংশ সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়ে। সেখানে গিয়ে ছাত্রদলের নেতা–কর্মীদের পেটায় ছাত্রলীগ। এর পর থেকে ছাত্রলীগের কঠোর অবস্থানের কারণে ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারছে না। এমন প্রেক্ষাপটে গতকাল বুধবার বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল ক্যাম্পাসের অপরাজেয় বাংলায় মানববন্ধন করে। এরপরই আজ নীল দলের বিবৃতি এলো।