চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে নভেম্বর পর্যন্ত আয়কর রিটার্ন দাখিল বেড়েছে প্রায় ৩৬ শতাংশ। যার মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আয় এসেছে ২ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা। এনবিআরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত মোট রিটার্ন দাখিল হয়েছে প্রায় সাড়ে ২২ লাখ। যার মাধ্যমে আয় হয়েছে ২ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা। রাজস্ব আদায়েও ৪১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে বলে জানা গেছে।
গত অর্থবছরে রিটার্ন দাখিল করা করদাতা সংখ্যা ২৬ লাখের বেশি হয়েছিল। বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের দাবি ও করদাতাদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় আরও এক মাস বাড়ানো হয়েছে। আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত রিটার্ন জমা দিতে পারবেন করদাতারা। বুধবার এনবিআরের সম্মেলন কক্ষে সংস্থাটির চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম সময় বাড়ানোর এ ঘোষণা দিয়েছেন। আগের ঘোষণা অনুযায়ী রিটার্ন দাখিলের শেষ দিন ছিল ৩০ নভেম্বর। উল্লেখ্য, এবারের বাজেটে ৪০ ধরনের সেবায় রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ দেখানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সে হিসেবে এবার রিটার্ন দাখিল বাড়ছে এমনটিই প্রত্যাশা করা হয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছে, এবার রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা ৪০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে। যদিও দেশে ই-টিআইএনধারীর সংখ্যা সাড়ে ৮২ লাখ ছাড়িয়েছে।
করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় গত বছরে ধারাবাহিকতায় এবারও আয়কর মেলা অনুষ্ঠিত হয়নি। তবে দেশের ৩১টি কর অফিসে গত ১ নভেম্বর থেকে মেলার পরিবেশে করদাতাদের সেবা দেওয়া হচ্ছে। আয়কর নির্দেশিকা ২০২২-২৩ অনুযায়ী ৪০ ধরনের সেবায় রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ দেখানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যে কারণে রিটার্ন দাখিলের বিকল্প নেই ই-টিআইএনধারীদের। তা না হলে পড়তে হবে নানা জটিলতায়।
সাধারণত কোনো ব্যক্তি-করদাতার আয় যদি বছরে ৩ লাখ টাকার বেশি হয়, তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তি, নারী ও ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সের করদাতার আয় যদি বছরে সাড়ে ৩ লাখ টাকার বেশি হয়, গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা করদাতার আয় যদি বছরে ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকার বেশি হয় এবং প্রতিবন্ধী করদাতার আয় ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি হলে তার রিটার্ন দাখিল করা বাধ্যতামূলক। এছাড়া আরও অনেক কারণে ব্যক্তিকে আবশ্যিকভাবে রিটার্ন দাখিল করতে হয়। চলতি অর্থবছর থেকে শুধু রিটার্ন দাখিল করলেই হবে না, বিভিন্ন সরকারি সেবা পেতে হলে রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্রও দেখাতে হবে।
এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বুধবার জাতীয় আয়কর দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বলেছেন, ডিজিটাল সংযোগের মাধ্যমে করদাতা শনাক্তকরণে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া বর্তমানে মোট রাজস্বে আয়করের অংশ ৩৪ শতাংশ। আমরা এটাকে ৫০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য স্থির করেছি। এই লক্ষ্য অর্জন করতে হলে করের আওতা বাড়ানোর বিকল্প নেই। এ জন্য ডিজিটালাইজেশনের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। তবে গতানুগতিক প্রক্রিয়ায় কর আহরণ বাড়ানো যাবে না। প্রয়োজন বড় ধরনের সংস্কার। কর ব্যবস্থাকে যত সহজ করা যাবে নেট তত বেশি বাড়বে। আয়কর আইন খুবই জটিল মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, এটা সহজ করা কঠিন। তবে সংস্কারের সুযোগ আছে।
উল্লেখ্য, ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে করদাতা শনাক্তকরণ নম্বরধারীর (টিআইএন) সংখ্যা ছিল সাড়ে ৬২ লাখ। যা পরবর্তী সময়ে জুলাই মাসে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় প্রায় ৭৬ লাখে। বর্তমানে ই-টিআইএনধারীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৮২ লাখ। এর আগে ২০২০-২১ করবর্ষে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ২০ লাখ ৪২ হাজার করদাতা আয়কর রিটার্ন দাখিল করেছিল। আর রিটার্ন দাখিলের জন্য অতিরিক্ত সময় চেয়ে আবেদন জমা পড়ে ১ লাখ ৫০ হাজার। যদিও সব মিলিয়ে ঐ অর্থবছরে ২৪ লাখ করদাতার আয়কর রিটার্ন দাখিল করেছিল।