আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের ৩০তম জাতীয় সম্মেলন আজ মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ১০টায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব পাবে ঐতিহ্যবাহী এই ছাত্র সংগঠনটি। ছাত্রলীগের গঠণতন্ত্রে বয়সসীমা রয়েছে অনূর্ধ্ব ২৭ বছর। কিন্তু নিয়মিত সম্মেলন না হওয়ায় গত তিন সম্মেলনে ছাত্রলীগের বয়সসীমা দুই বছর বাড়িয়ে অনূর্ধ্ব ২৯ বছর করা হয়। এবারও নেতৃত্বের বয়সসীমা ঊনত্রিশই থাকছে। এর কারণে বাদ পড়তে যাচ্ছেন ‘হেভিয়েট’রা, যারা ইতিপূর্বে বেশ আলোচনায় ছিলেন। জানা গেছে, বয়স কম দেখিয়ে শীর্ষ দুই পদের দখল নিতে কয়েকজন তথ্য জালিয়াতি করেছেন, যেটা গোয়েন্দাদের কাছে ধরা পড়েছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। জালিয়াতি করে কেউ পদ পেলে পরে তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি দুই বছর পরপর ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলন হওয়ার কথা। তবে বিভিন্ন কারণে মেয়াদপূর্তির দুই বছর পর এবারের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ কারণে এবার সম্মেলনকে ঘিরে নেতাকর্মীর উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনা বেশি দেখা যাচ্ছে। ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই পদে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করতে তাদের তথ্য সংগ্রহ ও যাচাই-বাছাই করেছেন গোয়েন্দারা। প্রথমে শতাধিক প্রার্থীর একটি লিস্ট তৈরি করা হয়। পরে সেটিকে আরো ছোট করে প্রার্থীদের একাডেমিক কোয়ালিফিকেশন, পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড ও বিতর্কমুক্ত কি না, সেসব বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে। বয়সের ব্যাপারটি নিশ্চিত হতে প্রার্থীর স্ব স্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে খোঁজ নেওয়া হয়েছে। ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই পদে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হতে ইচ্ছুক নেতারা শেষ মুহূর্তের লবিং-তদবির চালিয়ে গেছেন। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা ও প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের সুদৃষ্টির আশায় দৌড়ঝাঁপ করেছেন পদপ্রত্যাশীরা। আজ সম্মেলনস্থলেই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে। তবে পৃথক সূত্র বলছে, কমিটি ঘোষণা হতে আরো কয়েক দিন অপেক্ষা করা লাগতে পারে।
কেন্দ্রীয় কমিটিতে আলোচনায় যারা : এবার ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসার বিষয়ে আলোচনায় আছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসম্পাদক জোবায়ের হাসান, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকিউল ইসলাম ফুয়াদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক ডাকসু এজিএস সাদ্দাম হোসেন, আপ্যায়ন সম্পাদক আশরাফুল ফাহাদ, আইন সম্পাদক ফুয়াদ হাসান শাহাদাত, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক তাহসান আহমেদ রাসেল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপসম্পাদক সবুর খান কলিন্স, মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক মেহেদী হাসান তাপস, উপকর্মসংস্থান বিষয়ক খাদিমুল বাশার জয়, উপপ্রচার সম্পাদক আল আমিন শেখ, উপগণশিক্ষা বিষয়ক উপসম্পাদক সোলাইমান ইসলাম মুন্না, উপ-তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক রশিদ শাহরিয়ার উদয়, শিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ লিমন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক মেহেদী হাসান সানী এবং উপ-সমাজসেবা সম্পাদক শেখ সাঈদ আনোয়ার সিজার। বয়সের কারণে শেষ পর্যন্ত বাদ পড়ে যেতে পারেন বিদায়ি কমিটির সহসভাপতি সোহান খান, সৈয়দ আরিফ হোসেন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান আল ইমরান, মাহবুব খান, সাংগঠনিক সম্পাদক ফেরদৌস আলম, সোহানুর রহমান রহমান, প্রশিক্ষণ সম্পাদক হায়দার মোহাম্মদ জিতু, গণশিক্ষা সম্পাদক আবদুল্লাহ হিল বারী প্রমুখ।
ঢাবির নেতৃত্বে আলোচনায় যারা : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবার কেবল সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদের জন্যই ২৫০ জন পদপ্রত্যাশী মনোনয়ন ফর্ম কিনেছেন, যা নিকট-অতীতের চেয়েও অনেক বেশি। জানা গেছে, ঢাবি শাখার শীর্ষপদে আলোচনায় রয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল শাখার সাধারণ সম্পাদক হাসিবুল হোসেন শান্ত, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের সভাপতি শহিদুল হক শিশির, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের সভাপতি কামাল উদ্দিন রানা ও সাধারণ সম্পাদক রুবেল হোসেন, ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্ হলের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম জাহিদ, ফজলুল হক মুসলিম হলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন নাঈম, সাবেক ডাকসু সদস্য ও ঢাবি ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম তালুকদার সবুজ প্রমুখ। আরো আলোচনায় রয়েছেন বিদায়ি কেন্দ্রীয় কমিটির উপসাহিত্য সম্পাদক জয়জিৎ দত্ত, নাট্য ও বিতর্কবিষয়ক সম্পাদক মুহাম্মদ ফয়সাল মাহমুদ, গণশিক্ষা বিষয়ক উপসম্পাদক সাইফুল্লাহ আব্বাসী অনন্ত, সহসম্পাদক এস এম রাকিব সিরাজী, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের সাবেক ভিপি এম এম কামাল উদ্দিন, শিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক উপসম্পাদক খালিদ উর রহমান বাদল প্রমুখ। তবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি ফরিদা পারভীন, উপসাহিত্য সম্পাদক ফালগুনী দাস তন্বী এবং রোকেয়া হল ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকা বিনতে হোসাইনের নামও আছে আলোচনায়।
কমিটির দাবি ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের : এদিকে, ঢাকা কলেজে নতুন করে কমিটি ঘোষণার দাবিতে ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়েছেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। গতকাল বেলা ১১টার পর থেকে বিজয় চত্বরে জড়ো হতে শুরু করে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় ‘জয়বাংলা’, ‘শেখ হাসিনা, শেখ হাসিনা’, ‘ঢাকা কলেজের কমিটি চাই’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায় নেতাকর্মীদের।