বাংলাদেশের জাতীয় ফুটবল দলের একসময়ের অধিনায়ক মোনেম মুন্নার কথা হয়তো আপনাদের অনেকের মনে আছে। তিনি গত শতাব্দীর নব্বই দশকের শেষ দিকে আমার কাছে এসেছিলেন উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসার জন্য। তাঁর কাছ থেকে জেনেছিলাম, ফুটবল খেলার জীবনে অধিকাংশ সময় তিনি উচ্চ রক্তচাপ নিয়েই খেলেছেন। কিন্তু তিনি কোনো অসুবিধা বোধ করেননি।
ফুটবল থেকে অবসর নেওয়ার পর মোনেম মুন্না কিছু শারীরিক অসুবিধা বোধ করছিলেন। তাই তাঁর পরিচিত চিকিৎসক তারেক আল নাসেরের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি মুন্নাকে উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসার জন্য আমার কাছে পাঠান। তাঁর শারীরিক পরীক্ষার পর আমি ধরতে পারি, তিনি রক্তশূন্যতায় ভুগছেন। তাঁর পায়ে পানি এসেছে, তাঁর রক্তচাপ অনেক বেশি। তিনি দুর্বলতাবোধ করেন এবং তাঁর ঘন ঘন প্রস্রাব হয়। আমি তাঁকে কিছু পরীক্ষা দিই। সেই পরীক্ষায় জানতে পারি, তাঁর দুটি কিডনি অনেক দিন ধরে বিকল হয়ে আছে। অর্থাৎ মুন্না ক্রনিক কিডনি রোগে ভুগছেন।
এরপরের কথা হয়তো আপনাদের স্মৃতিতে আছে। মোনেম মুন্নার কিডনি ডায়ালাইসিস শুরু করা হয় এবং পরবর্তীকালে তাঁর কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়। তারপরও তিনি খুব বেশি দিন সুস্থ থাকেননি এবং অকালে আমরা একজন বিখ্যাত ফুটবলারকে হারাই।
আমি অনুমান করি, পাঠক বুঝতে পেরেছেন উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না রাখলে খুব দ্রুত কিডনি বিকল হয় এবং জীবন সংক্ষিপ্ত হয়ে যায়। তাই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা অতি জরুরি। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের রক্তচাপ ১২০/৮০ মিলিমিটার মার্কারি থাকলে আমরা স্বাভাবিক রক্তচাপ বলি। সেই রক্তচাপ ১৪০/৯০ মিলিমিটার মার্কারির ওপরে গেলে আমরা উচ্চ রক্তচাপ বলি। এর মধ্যবর্তী অংশে রক্তচাপ থাকলে তা নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনো ওষুধের প্রয়োজন হয় না সাধারণত। কিন্তু তার জীবনযাত্রার পরিবর্তন আনতে হয়। শারীরিক পরিশ্রম, ব্যায়াম, হাঁটা ও খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন আনতে হয়। শারীরিক স্থূলতা থাকলে ওজন কমিয়ে ফেলতে হয়। এসব অভ্যাস করার পরও যদি রক্তচাপ ১৪০/৯০নিয়ন্ত্রণহীন উচ্চ রক্তচাপের কারণে কিডনি বিকল হয়, এটাও আমরা জানতে পারলাম। এটাও জানা প্রয়োজন, কিডনি রোগ থাকলেও উচ্চ রক্তচাপ হয়। তখন উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করলেই হয় না, প্রাথমিক রোগেরও চিকিৎসা করাতে হয়।
মিলিমিটার মার্কারির ওপরে চলে যায়, তখন ওষুধ গ্রহণের প্রয়োজউচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য যা যা করা প্রয়োজন
নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম, পরিশ্রম ও হাঁটা।
খাদ্যে অতিরিক্ত লবণ ও লবণাক্ত খাবার পরিহার করা।
নিয়মিত বিশ্রাম গ্রহণ ও অতিরিক্ত মানসিক চাপ পরিহার করা।
উচ্চ রক্তচাপের সঙ্গে অন্যান্য রোগ যেমন ডায়াবেটিস, রক্তে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা।
উচ্চ রক্তচাপের পারিবারিক ইতিহাস থাকলে পূর্ণবয়স্ক সব সদস্যের নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করা।
তামাকজাতীয় দ্রব্য গ্রহণ ও ধূমপান পরিহার করা।
ন হয়।