ক্লাব পিএসজিতে তারা সতীর্থ। বয়সে কাছাকাছি বলে দুজনের বন্ধুত্বটাও গভীর। কিন্তু সেই দুই সতীর্থকেই এক অন্যের চরম শত্রু বানিয়ে দিচ্ছে কাতার বিশ্বকাপ। বলা হচ্ছে কিলিয়ান এমবাপ্পে ও আশরাফ হাকিমির কথা। কাতার বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে মুখোমুখি হতে যাচ্ছে এমবাপ্পের ফ্রান্স ও আশরাফ হাকিমির মরক্কো। তাই বন্ধুত্ব-সতীর্থের সম্পর্ককে এক পাশে সরিয়ে রেখে ১৪ ডিসেম্বর তারা হয়ে যাবেন একে অন্যের সম্মুখ শত্রু।
ফরোয়ার্ড হলেও এমবাপ্পে মূলত লেফট-উইঙ্গার হিসেবে খেলেন। কাতারে প্রতিটা ম্যাচেই তিনি এই পজিশনেই খেলছেন। আর হাকিমি রাউট-ব্যাক। মানে ১৪ ডিসেম্বর খলিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে এমবাপ্পে ও হাকিমি লিপ্ত হবেন সম্মুখ দ্বৈরথে! ক্লাবের জার্সি গায়ে যে এমবাপ্পেকে গোল বানিয়ে দেন, গোল করলে দৌড়ে গিয়ে বুকে আলিঙ্গনে বাঁধেন। ১৪ ডিসেম্বর হাকিমির প্রধান দায়িত্ব থাকবে সেই এমবাপ্পেকে আটকে রাখার, এমবাপ্পের গতি রোধ করে তার প্রতিটা আক্রমণ নষ্ট করার। বল দখলের লড়াইয়ে দুজনেই জড়াবেন ধাক্কাধাক্কিতে। পা থেকে বল কেড়ে নেওয়ার কাজ তো করবেনই, প্রয়োজনে একে অন্যকে কড়া ফাউল করতেও কার্পণ্য করবেন না তারা। মানে সেদিন দুই বন্ধু সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত হবেন।
মজার ব্যাপার হলো, সম্মুখ সেই যুদ্ধের আগে মরক্কোর হাকিমি একটা সতর্ক বার্তা দিয়ে রাখলেন ফ্রান্সের এমবাপ্পেকে। পরশু দিনের প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালে পর্তুগালকে ১-০ গোলে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠে হাকিমিরা অপেক্ষায় ছিলেন, কারা হবে তাদের সেমির প্রতিপক্ষ। রাতের ম্যাচে ইংল্যান্ডকে ২-১ গোলে হারিয়ে দেয় ফ্রান্স। হাকিমিরাও সঙ্গে সঙ্গে জেনে যান, এমবাপ্পের ফ্রান্সের মুখোমুখিই হতে হবে তাদের। এবং তাকে মুখোমুখি হতে হবে এমবাপ্পের। এটা নিশ্চিত হওয়ার পরই তাই ২৪ বছর বয়সি হাকিমি একটা বার্তা পাঠিয়ে দেন ২৩ বছর বয়সি এমবাপ্পেকে। টুইটারে এমবাপ্পেকে ট্যাগ করে হাকিমি লেখেন, ‘তোমার সঙ্গে দেখা হচ্ছে বন্ধু।’ জবাব দিতে এমবাপ্পেও দেরি করেননি। তিনি অবশ্য কিছু লিখেননি। হাকিমির পোস্টে তিনি শুধু তিনটি ভালোবাসার ইমোজি দিয়েছেন।
প্রশ্ন হলো হাকিমি কি পারবেন দূরন্ত এমবাপ্পেকে আটকে রাখতে। মাঠে এমবাপ্পে কতটা গতির ঝড় তুলতে পারেন, সেটা ফুটবল দুনিয়া জানে। সতীর্থ হিসেবে হাকিমি তা আরো ভালো করে জানেন। তবে হাকিমিরাও কম যাচ্ছে না। বরং হাকিমিসহ মরক্কোর রক্ষণভাগ নিজেদের রক্ষণকে কাতার বিশ্বকাপে নিচ্ছিদ্র দুর্গ বানিয়ে ফেলেছেন! কাতারে কোনো দলই এখনো পর্যন্ত মরক্কোর জমাট রক্ষণভাগে ফাটল তৈরি করতে পারেনি। সেমিফাইনালে ওঠা পর্যন্ত মরক্কো ৫ ম্যাচে কোনো গোল খায়নি! মরক্কোর গোলরক্ষককে ফাঁকি দিয়ে একবার যে বল মরক্কোর জাল ছুঁয়েছে, কানাডার বিপক্ষে সেই গোলটাও এক মরক্কানের। দলকে বিপদমুক্ত করতে গিয়ে বল নিজেদের জালেই জড়িয়ে দেন নায়েফ আগুয়ের্ড, আত্মঘাতী গোল! সুতরাং হাকিমি-এমবাপ্পের দ্বৈরথটা জমবে বলেই মনে হচ্ছে।