এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়েছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)। সংস্থাটির নতুন এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক অর্থনীতির গতি কমে যাওয়া এবং ইউক্রেন যুদ্ধের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি ধীর হবে। এর পরেও বিশ্বের অন্য অঞ্চলের চেয়ে এশিয়ার অর্থনীতি তুলনামূলক ভালো অবস্থানে রয়েছে।
গতকাল বুধবার প্রকাশিত এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ বছর শেষ নাগাদ এশিয়ার অর্থনীতি ৪ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে। অথচ গত সেপ্টেম্বরে ৪ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি ২০২৩ সালে প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৪ দশমকি ৬ শতাংশ যা আগে ধরা হয়েছিল ৪ দশমিক ৯ শতাংশ। চীনের বারংবার লকডাউন ও ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ এশিয়ার প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করছে।
চলতি বছর এডিবি এশিয়ায় মূল্যস্ফীতির পূর্বাভাস ৪ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৪ দশমিক ৪ শতাংশে নামিয়েছে। কিন্তু আগামী বছর মূল্যস্ফীতির পূর্বাভাস সংশোধন করে ৪ শতাংশ থেকে ৪ দশমিক ২ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। পূর্বাভাসে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে মন্দার মধ্যে আগামী বছর চীনের প্রবৃদ্ধির ৪ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমে ৪ দশমিক ৩ শতাংশের কথা জানানো হয়েছে। এতে আরো বলা হয়েছে, চীনের পরে এই অঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি ভারতের প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২ শতাংশ অপরিবর্তিত রয়েছে। এ বছর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৫ দশমিক ১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়েছে। কিন্তু পরের বছর এ অঞ্চলে প্রবৃদ্ধি কমে ৪ দশমিক ৭ শতাংশের দিকে যাবে, আগের পূর্বাভাসে যা ছিল ৫ শতাংশ।
অন্যদিকে দক্ষিণ এশিয়া এ বছর ৬ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে। বাংলাদেশের অর্থনীতির গতি কমে যাওয়া এবং পাকিস্তানে ভয়াবহ বন্যার প্রভাবে দক্ষিণ এশিয়ার প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমানো হয়েছে। আর দক্ষিণ এশিয়ায় মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৯ শতাংশে উন্নীত হবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। যেখানে এর আগে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ মূল্যস্ফীতির প্রাক্কলন দেওয়া হয়েছিল। বিশ্লেষণে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার হচ্ছে। কিন্তু একে বাধাগ্রস্ত করছে বৈদেশিক বাণিজ্যের ঘাটতি আর মূল্যস্ফীতি। সেই সঙ্গে বিদ্যুৎ জ্বালানির ঘাটতিও রয়েছে।
বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, বিশ্বের বড় অর্থনীতির দেশগুলো মুদ্রানীতি আগের চেয়ে কঠোর করছে। সুদ হার বাড়নো হয়েছে। যার প্রভাব বিশ্বের অন্যান্য দেশেও পড়ছে। এ প্রসঙ্গে এডিবির প্রধান অর্থনীতিবিদ আলবার্ট পার্ক উল্লেখ করেছেন এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু বিশ্ব পরিস্থিতি আগের চেয়ে আরো খারাপ হচ্ছে। এর প্রভাব এশিয়ার দেশগুলোতে পড়ছে। করোনার চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে এখন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারগুলোকে কাজ করতে হবে। বিশেষ করে দারিদ্র্য ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর ওপর খাদ্য ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব নিয়ে কাজ করতে হবে।