বিশ্বকাপ জেতার জন্য যে রকম স্কোয়াড প্রয়োজন, সেটাই রয়েছে ফ্রান্সের। রক্ষণ, মাঝমাঠ, আক্রমণভাগ—সব ক্ষেত্রেই দারুণ সব খেলোয়াড় আছে এই দলে। চোটের কারণে যে বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় নেই, সেটি টেরই পাওয়া যাচ্ছে না। বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা ঠিক চ্যাম্পিয়নদের মতোই খেলছে কাতারে।
ফাইনালে যদি প্রত্যেক খেলোয়াড় নিজ নিজ পজিশনে সেরাটা দিতে পারে, তাহলে টানা দ্বিতীয়বার বিশ্ব জয় করবে দিদিয়ের দেশমের দল।
আর্জেন্টিনার মতো সুসংগঠিত দলকে হারাতে হলে ফ্রান্সকে সেরা ফুটবলই খেলতে হবে। দলের সেরা তারকা এমবাপ্পেকে বাড়তি দায়িত্ব নিতে হবে। ওর বয়স মাত্র ২৩, কিন্তু কী দুর্দান্ত খেলছে ছেলেটা! ওর গতি, ড্রিবলিং আর গোল করা দক্ষতা ফ্রান্সকে ফাইনাল জয়ের পথ দেখাতে পারে। সঙ্গে আছে অলিভিয়ের জিরুর মতো স্ট্রাইকার। এই বিশ্বকাপে তো সে তার দক্ষতা দেখিয়েছে। করিম বেনজিমার অভাব মোটেও বুঝতে দিচ্ছে না জিরু।
ফাইনালে ফ্রান্সের ত্রাতা হতে পারে আন্তোয়ান গ্রিয়েজমান। নিঃসন্দেহে এই বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় সে। ফ্রান্সের এই দলটির নিউক্লিয়াস হিসেবে নিজেকে তুলে ধরেছে। একজন প্লেমেকার হিসেবে খেলছে। ক্লাব ফুটবলে একটু ওপরের দিকে খেলে থাকলেও ফ্রান্স দলে গ্রিয়েজমানের দায়িত্বটা ভিন্ন। সামনে জিরু এবং দুই পাশে এমবাপ্পে ও দেম্বেলে। এর ঠিক পেছনেই দেখা যাচ্ছে গ্রিয়েজমানকে। ওর পায়েই ফ্রান্সের মধ্যমাঠ থেকে আক্রমণভাগের যোগসূত্রটা। পল পগবা, এনগোলো কান্তে না থাকলেও ফ্রান্সের মধ্যমাঠকে কক্ষপথে রেখেছে গ্রিয়েজমান। বিশ্বকাপ শুরুর আগে মধ্যমাঠ নিয়ে চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল ফরাসিরা। কিন্তু চিন্তার কালো মেঘ সরিয়ে আলো ফুটিয়েছে এই গ্রিয়েজমান। শুধু আক্রমণেই নয়, রক্ষণেও দারুণ ভূমিকা রেখেছে। নিচে নেমে জুল কুন্দে, রাফায়েল ভারানেদের সঙ্গে কাঁধ মেলাচ্ছে। এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় শিরোপা জিততে হলে গ্রিয়েজমানকে সেরা একটি ম্যাচই খেলতে হবে।
এটা নিশ্চিত যে, ফ্রান্সের সামনে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে লিওনেল মেসি। বিশ্বকাপে সেরা ফর্মে আছে ও। মেসিকে আটকাতে পারলেই খুলে যাবে ফরাসিদের ভাগ্য। আমার মনে হয় মেসিকে আটকানোর জন্য ভিন্ন কৌশল বেছে নেবে ফরাসিরা। মেসির পায়ে যখন বল যাবে তখন দমবন্ধ করা প্রেসিং করতে হবে। মেসিকে যদি দুই-তিন দিক থেকে প্রেস করা হয় তবে সে এগিয়ে যাওয়ার জায়গা ও সময় পাবে না। তাহলেই হয়তো মেসিকে আটকানো সম্ভব। এটা একান্তই আমার ভাবনা। মেসিকে আটকানোর জন্য দেশম হয়তো অন্য কোনো কৌশল সাজাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে বড় দায়িত্ব পালন করতে হবে তরুণ অরেলিও চুয়ামেনিকে। দুজনের মধ্যে দারুণ লড়াই হতে যাচ্ছে। এই লড়াই দেখতে আমি মুখিয়ে আছি। রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে নিজের জাত চিনিয়েছে চুয়ামেনি। বিশ্বকাপেও ফ্রান্সের অন্যতম একজন হয়ে মাঠ মাতাচ্ছে। ‘বক্স-টু-বক্স’ মিডফিল্ডারদের মধ্যে ওকে ধরা হয় সবচেয়ে প্রতিভাবানদের একজন হিসেবে। তাই মেসির মতো একজনকে থামানোর চ্যালেঞ্জ নিতে হবে চুয়ামেনিকে। যদিও কাজটা বেশ কঠিনই।
কাতার বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত কোচের পরিকল্পনা পুরোপুরি প্রয়োগ করতে পেরেছে এমবাপ্পে-গ্রিয়েজমানরা। দেশমের কৌশল রপ্ত করে প্রতি ম্যাচেই প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দিয়েছে তারা, শুধুমাত্র তিউনিশিয়া ম্যাচে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে গিয়ে হারতে হয়েছে। যদিও ওই হার দলটির ওপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারেনি। ফ্রান্সের এই দলের বড় অনুপ্রেরণা কোচ দিদিয়ের দেশম নিজেই। তাঁর ৪-২-৩-১ ছকের সঙ্গে সবাই খুব ভালোভাবে অভ্যস্ত। ফাইনালেও হয়তো এই কৌশলেই খেলবে তারা। এই ছকেই কিন্তু টুর্নামেন্টজুড়েই অসাধারণ ফুটবল খেলছে ফ্রান্স। আমি বলব, এখন পর্যন্ত কাতার বিশ্বকাপের সেরা দল তারাই। কিন্তু ফাইনাল ম্যাচ নিয়ে আগেই কিছু বলা খুব কঠিন কাজ। এখানে যেকোনো কিছু হতে পারে। ফেভারিট বলতে কিছু নেই। সেরা দুটি দলের একটি বলেই তো ফ্রান্স আর আর্জেন্টিনা ফাইনালে এসেছে। তবে ফাইনালের আগে রক্ষণ নিয়ে খানিকটা দুশ্চিন্তায় পড়তেই পারে ফরাসিরা।