ফাইনালে ফ্রান্সকে টাইব্রেকারে হারিয়ে বিশ্বকাপ জিতেছে আর্জেন্টিনা। দীর্ঘ ৩৬ বছরের অপেক্ষা ঘোচানোয় চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা দলের প্রত্যেকেই বিশ্বকাপ জয়ী তারকা। দলের ২৬ জনকেই দেওয়া হয়েছে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পদক। কিন্তু দলের ২৬ সদস্যই চ্যাম্পিয়ন তকমা এবং পদক পেলেও তাদের মধ্যে দুজন রয়েছেন, যারা না খেলেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। কাতার বিশ্বকাপে তারা এক মিনিটও খেলেননি। দলের সঙ্গী হয়ে রিজার্ভ বেঞ্চ গরম করেই কাটাতে হয়েছে পুরো টুর্নামেন্ট।
অভাগা বলুন বা সৌভাগ্যবান বলুন, সেই দুজন হলেন ফ্রাঙ্কো আরমানি ও হেরোনিমো রুলি। দুজনই গোলরক্ষক। কাতার বিশ্বকাপের ২৬ সদস্যের স্কোয়াডে মোট তিনজন গোলরক্ষক নিয়েছিলেন আর্জেন্টাইন কোচ লিওনেল স্কালোনি। এর মধ্যে এক নম্বর গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজকেই পুরো টুর্নামেন্টে খেলিয়েছেন কোচ। মাঠের অন্য খেলোয়াড়দের অদল-বদল করে খেলালেও গোলপোস্টের নিচে সে পথে হাঁটেনি আর্জেন্টিনার কোচ।
তিনি এক মার্টিনেজেই আস্থা রাখায় দলে থেকেও বিশ্বকাপে মাঠে নামা হয়নি আরমানি ও রুলির। দল চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় নিশ্চিতভাবেই তারা খুশি। আর চ্যাম্পিয়ন দলের অংশী হওয়ায় হয়তো নিজেদের সৌভাগ্যবানও দাবি করবেন তারা। তবে দলে থেকেও এক মিনিটও খেলতে না পারায় তারা নিজেদের খানিকটা অভাগাও ভাবতে পারেন।
শুধু আর্জেন্টিনা দলই নয়, ফ্রান্সও যদি বিম্বকাপ জিততে, তাহলে তাদের দলেরও দুজন না খেলেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হতেন। যেমন না খেলেই তারা রানার্সআপ পদক পেয়েছেন। ফ্রান্সের সেই অভাগা-সৌভাগ্যবান দুজন হলেন করিম বেনজেমা ও আলফোনসে আরেওলা। এর মধ্যে ফরোয়ার্ড বেনজেমা চোটের কারণে বিশ্বকাপ শুরুর আগে আগে দল থেকে ছিটকে পড়েন। তবে ফ্রান্স কোচ দিদিয়ের দেশম তার বিকল্প কাউকে দলে নেয়নি। ফলে করিম বেনজেমা না থেকেও ফ্রান্স দলের অংশ ছিলেন। পেয়েছেন পদকও। সঙ্গে না খেলেই পদক পাওয়া অন্যজন হলেন গোলরক্ষক আলফোনসে আরেওলা। স্কালোনির মতো ফ্রান্স কোচ দিদিয়ের দেশমও দলে তিন জন গোলরক্ষক রেখেছিলেন। তার মধ্যে দুজনকে তিনি খেলিয়েছেন কাতারে। অধিনায়ক হুগো লরিস খেলেছেন ৬ ম্যাচে। দ্বিতীয় গোলরক্ষক স্টিভ মানদানদাকে নামিয়েছিলেন এক ম্যাচে, তিউনিসিয়ার বিপক্ষে গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে। আগেই শেষ ষোলো নিশ্চিত হওয়ায় সেই ম্যাচে লরিসকে বিশ্রাম দিয়ে মানদানদাকে নামান দেশম। কিন্তু আলফোনসের ভাগ্যে মাঠে নামার সুযোগ হয়নি। অবাক বিষয় হলো, ফ্রান্সের ২৯ বছর বয়সি এই গোলরক্ষক ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপেও একই দুর্ভাগ্যের শিকার হয়েছিলেন। সেবার তিনি না খেলেই পেয়েছিলেন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন খেতাব।
এই যে না খেলেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের খেতাব এবং পদক পাওয়া, বিশ্বকাপের প্রতিটা আসরেই এমন ঘটনা ঘটেছে। এবং প্রতিবারই দুই বা তার বেশি খেলোয়াড়কে এমন অভিজ্ঞতার স্বাদ পেতে হয়েছে। ইতিহাস ঘেটে জানা যাচ্ছে বিশ্বকাপের ২২টি আসর মিলিয়ে এ নিয়ে মোট ১০৩ জন খেলোয়াড় এই কীর্তির ভাগিদার। এই তিতা-মিঠা অভিজ্ঞতার শিকার সবচেয়ে বেশি খেলোয়াড় হয়েছিলেন ১৯৬২ বিশ্বকাপে। চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলের ২২ সদস্যের স্কোয়াডের ১০ জনই চ্যাম্পিয়ন পদক পেয়েছিলেন এক মিনিটও না খেলে! মানে ব্রাজিলের ঐ বিশ্বকাপজয়ী কোচ আইমোরে মোরেইরা ২২ সদস্যের দলের মাত্র ১২ জনকে খেলিয়েছিলেন পুরো টুর্নামেন্টে। গ্রুপপর্ব থেকে ফাইনাল, প্রতিটা ম্যাচেই তিনি ১০ জনকে নিয়মিত এবং পুরো সময় খেলেছিলেন। অদল-বদল করে খেলেছেন দুজন। প্রথম দুটি ম্যাচ খেলে চোটে পড়েন কিংবদন্তি পেলে। তার পরিবর্তে পরের ম্যাচগুলোতে খেলেন আমারিলদো।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮ জন করে খেলোয়াড়ের এই অভিজ্ঞতা হয়েছে দুটি বিশ্বকাপে, ১৯৩৮ (চ্যাম্পিয়ন ইতালি) ও ১৯৫০ বিশ্বকাপে (চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ে)। ৭ জন করে খেলোয়াড় এই স্বাদ পান ৩টি বিশ্বকাপে—১৯৩০ (উরুগুয়ে), ১৯৬৬ (ইংল্যান্ড) ও ১৯৮২ বিশ্বকাপে (ইতালি)।