এক জনের নাম লিওনেল স্কালোনি। আরেক জনের নাম লিওনেল মেসি। তাদের সম্পর্কটা এখন গুরু-শিষ্যের। তবে এর আগে তারা ছিলেন জাতীয় দলে একে অন্যের সতীর্থ। জাতীয় দলের হয়ে মেসির অভিষেক ২০০৫ সালে। তার চেয়ে ৯ বছরের বড় স্কালোনির অভিষেক তার মাত্র দুই বছর আগে, ২০০৩ সালে। তবে ২০০৩ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত জাতীয় দলের হয়ে মাত্র ৭টা ম্যাচ খেলেছেন স্কালোনি। এটুকু পথেই তিনি মেসির সতীর্থ ছিলেন। সেই স্কালোনিই ২০১৭ সালে মেসিদের কোচ হয়ে আসেন। তবে প্রথমে তিনি ছিলেন দলের সহকারী কোচ। ২০১৮ বিশ্বকাপ ব্যর্থতার পর হন পূর্ণ কোচ। তবে স্কালোনি কখনোই মেসিকে শিষ্যের চোখে দেখেন না। গুরু-শিষ্যের চেয়ে বরং তাদের বন্ধুত্বটাই বড়।
সেই কোচ-সতীর্থ-বন্ধু স্কালোনি এখন মেসির নায়কও। দীর্ঘ ৩৬ বছরের অপেক্ষা ঘুচিয়ে তৃতীয় বারের মতো বিশ্বকাপ জিতেছে আর্জেন্টিনা। গত পরশু দোহারের লুসাইল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফাইনালে ফ্রান্সকে টাইব্রেকারে হারিয়ে আর্জেন্টিনার এই শিরোপাজয়ের বড় নায়ক অবশ্যই মেসি। তবে কোচ স্কালোনির অবদানটাও কম নয়। দীর্ঘদিন ধরে কোপা আমেরিকা বা বিশ্বকাপ, কোনোটাতেই শিরোপার সাফল্য পাচ্ছিল না আর্জেন্টিনা। স্কালোনি কোচের দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র চার বছরেই সেই আর্জেন্টিনাকে জেতালেন কোপা আমেরিকা ও বিশ্বকাপ।
অথচ চার বছর আগে আর্জেন্টিনার কোচ হিসেবে তার যোগ দেওয়াটাকে খুব একটা ভালো চোখে দেখেনি কেউ। অনেকেই বরং সমালোচনার হুল ফুটিয়েছিলেন। স্কালোনির সমালোচকদের সেই তালিকায় ছিলেন প্রয়াত দিয়েগো মারাদোনাও। স্কালোনি কোচের যোগ্য নন বলেই মন্তব্য করেন তিনি। চার বছরের ব্যবধানে সেই স্কালোনিই এখন আর্জেন্টিনার ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সফল কোচ। ইতিহাস গড়লেন টানা দুটি বৈশ্বিক টুর্নামেন্টের শিরোপা জেতার। ২৮ বছরের শিরোপা বন্ধ্যাত্ব ঘুচিয়ে ২০২১ সালে দলকে এনে দেন কোপার শিরোপা। বছর পেরিয়ে এবার দেশবাসীকে উপহার দিলেন আরো বড় উপহার—বিশ্বকাপ। নাম লেখালেন দেশের সাবেক দুই বিশ্বকাপজয়ী কোচ সিজার লুইস মেনোত্তি ও কার্লোস বিলার্দোর পাশে। মেসির মতো তিনিও তাই এখন আর্জেন্টাইনদের নায়ক, মেসিরও নায়ক।