খেলাপি ঋণের ওপর করারোপ * বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে শুল্ক-ভ্যাটে ছাড়
বৈশ্বিক ও মূল্যস্ফীতির মতো সংকট মোকাবিলা করতে গিয়ে নানা শঙ্কা মাথায় রেখেই বহুমুখী চ্যালেঞ্জের বাজেট প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। আগামীতে যে কোনো কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে আয় বাড়ানো ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ঝুঁকিমুক্ত রাখার দিকে সবচেয়ে বেশি নজর দিয়েছেন।
এজন্য করমুক্ত আয়সীমা না বাড়িয়ে আয়কর থেকে আরও বেশি টাকা সংগ্রহের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। নজর দেওয়া হয়েছে আমদানিকৃত ব্যবহার্য পণ্যে বেশি শুল্ক আরোপের ওপর। পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ ভ্যাট বেশি আদায় ও নতুন করে ব্যক্তি আয়কর দাতার সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে।
এছাড়া গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের দাম পর্যায়ক্রমে সমন্বয় করা হবে-এমন ঘোষণাও আছে প্রস্তাবিত বাজেটে। তবে করোনা সংক্রমণের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়ানোর ওপর। তবে প্রস্তাবিত বাজেটে মধ্যবিত্তের জন্য তেমন কোনো সুখবর দিতে পারেননি অর্থমন্ত্রী।
কারণ মূল্যস্ফীতির হার বাড়লেও কমানো হয়েছে রেয়াতযোগ্য বিনিয়োগের সীমা। ফলে সঞ্চয়পত্র থেকে আয়ের পথ সংকুচিত হবে। আর নিত্যব্যবহার্য পণ্যের শুল্ক-কর বাড়ানো এবং ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা প্রত্যাহার করায় জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ার শঙ্কা থাকছেই।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’ শিরোনামে এই বাজেট অর্থমন্ত্রী হিসাবে তার চর্তুথতম। বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তব্যে আগামী অর্থবছরের জন্য ৬ ধরনের চ্যালেঞ্জ শনাক্ত করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে-মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা এবং অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা ; গ্যাস, বিদ্যুৎ ও সারের মূল্য বৃদ্ধির কারণে বাড়তি হারে ভর্তুকির জন্য অর্থের সংস্থান; বৈদেশিক সহায়তার অর্থ ব্যবহার এবং উচ্চ-অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্পগুলোর কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করা; শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের প্রকল্প যথাসময়ে বাস্তবায়ন; অভ্যন্তরীণ মূল্য সংযোজন কর সংগ্রহের পরিমাণ ও ব্যক্তি আয়করদাতার সংখ্যা বৃদ্ধি এবং টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সন্তোষজনক পর্যায়ে রাখা। তিনি উল্লিখিত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ৮ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
এগুলো হচ্ছে-ভর্তুকি বাড়ানো, দরিদ্রদের মধ্যে কম দামে খাদ্য বিতরণ, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে শুল্ক হ্রাস, বিলাসী পণ্য আমদানি শুল্ক ও রপ্তানি আয় বাড়ানো। এছাড়া রেমিট্যান্স, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ, কৃষি উৎপাদন এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করা।
অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় বলেন, এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের অন্তত কৌশলী হতে হবে। কোনো একটি সমস্যা সমাধান না করা গেলে তা সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে পারে। তিনি আর্থিক অভিঘাত মোকাবিলায় ৫ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন।
বিদ্যমান চাহিদার প্রবৃদ্ধি কমিয়ে সরবরাহ বাড়ানো হবে-এটি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মূল কৌশল হিসাবে নেওয়া হয়েছে। মূল্যস্ফীতি আগামী বছর ৫.৬ শতাংশের মধ্যে বলে আশা করছেন অর্থমন্ত্রী। সে লক্ষ্যে আমদানিনির্ভর ও কম গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ব্যয় বন্ধ রাখা হবে। নিম্ন অগ্রাধিকার প্রকল্প বাস্তবায়ন গতি হ্রাস করা হবে। একই সঙ্গে মধ্যম ও উচ্চ অগ্রাধিকার প্রাপ্য প্রকল্পের বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করা হবে।
দেশ থেকে বিভিন্ন উপায়ে পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ কর দিয়ে বৈধ করার সুযোগ রাখা হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেট। এই প্রক্রিয়ায় কর দিয়ে অর্থ বৈধ হয়ে গেলে তা নিয়ে প্রশ্ন করবে না কর্তৃপক্ষ।
এদিকে আয় বৈষম্য কমাতে সাধারণ মানুষের কর্মদক্ষতা বাড়ানো প্রয়োজন। তার জন্য দরকার পরিকাঠামোর প্রসার। অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরণে ঘোষণা করতে দ্বিধা করেননি। অথচ তার আর্থিক নীতির কোথাও বৈষম্য নিরসনের বিষয়টি সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ নেই।
বাজেটের কর ব্যবস্থায় বেশ কিছু পরিবর্তনের উল্লেখ করা হয়েছে। বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়তে কোম্পানির করপোরেট কর হ্রাস, এক ব্যক্তির কোম্পানিতে কর ছাড় এবং স্টার্টআপ কোম্পানির কর হ্রাসের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তৈরি পোশাক খাতে করপোরেট কর সাধারণ গার্মেন্টসের জন্য ১২ শতাংশ এবং সবুজ কারখানার জন্য ১০ শতাংশ। অন্যান্য ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ পর্যন্ত দিতে হয়। রপ্তানি পণ্যের বিকেন্দ্রীকরণের জন্য সব ধরনের রপ্তানিমুখী শিল্পের করপোরেট কর ১২ শতাংশ ধার্য করা হয়েছে।
এছাড়া স্টার্টআপ উদ্যোক্তাদের আয়কর রিটার্ন দাখিল ছাড়া অন্য সব ধরনের রিপোর্টিংয়ের বাধ্যবাধকতা হতে অব্যাহতি দেওয়া, কোম্পানির লোকসান ৯ বছর পর্যন্ত সমন্বয়, ব্যয়সংক্রান্ত বিধিনিষেধ প্রত্যাহার এবং টার্নওভার কর দশমিক ৬০ শতাংশ থেকে দশমিক ১০ শতাংশ করা হয়েছে।
এদিকে ব্যবসা পরিচালনা সহজ করাসহ ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে চাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। এজন্য খরচ কমানোর লক্ষ্যে উৎসে কর উৎপাদকদের কাঁচামাল সরবরাহের ক্ষেত্রে ৭ শতাংশ কমিয়ে ৪ শতাংশ, ব্যবসায়িক পণ্যের সরবরাহে ৭ শতাংশের পরিবর্তে ৫ শতাংশ এবং সরকারি ছাড়া অন্য বই সরবরাহের ক্ষেত্রে ৭ নামিয়ে ৩ শতাংশ করা হয়।
ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রসারের জন্য অনাবাসী ব্যান্ডউইথ পেমেন্টের ওপর উৎস কর হার ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ এবং বিদেশি সংস্থাগুলোতে পরিষেবা প্রদান থেকে উৎস কর ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে।
এছাড়া বেভারেজ বা পানীয়র কাঁচামাল, পরিষেবা রপ্তানি, অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচলকারী জাহাজ ও বাণিজ্যিক যানবাহন আমদানিকালে সমন্বয়ের পর ৫ শতাংশ কর ন্যূনতম কর হিসাবে গণ্য করা হবে। বাবা-মা সন্তানের কাছ থেকে কোনো জমি-অর্থ উপহার পেলে তা করমুক্ত রাখা হবে।
এছাড়া আমদানি করা পণ্য নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়েছে। যাদের কফি খাওয়ার অভ্যাস আছে, আগামী অর্থবছরে তাদের খরচ বাড়বে। কারণ কফি আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে ২০ শতাশ। বর্তমান মোবাইল একটি প্রয়োজনীয় পণ্য। স্মার্ট সেটের ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করায় এর দাম বাড়বে। সব ধরনের বিড়ি ও সিগারেটের মূল্যস্তর বাড়ানো হয়েছে। এতে বিড়ি ও সিগারেটের দাম বাড়তে পারে।
এ ছাড়া ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত পণ্যের দাম বৃদ্ধিরও প্রস্তাব করা হয়েছে। দেশীয় ফ্রিজ উৎপাদনে অব্যাহতি সুবিধা প্রত্যাহার এবং আমদানি পর্যায়ে সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়। এতে আগামীতে ফ্রিজ কেনার খরচ বেড়ে যাবে। ভ্যাট অব্যাহতি প্রত্যাহার করা হয়েছে কম্পিউটার প্রিন্টারের। বেশি হারে সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হয়েছে ২০০০ সিসির বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন গাড়িতে। দুগ্ধজাত পণ্য দই-চিজ আমদানিতে ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
দেশে ইলেকট্রিক মোটর উৎপাদিত হওয়ায় আমদানি পর্যায়ে শুল্ক ৫ শতাংশ আরও বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া সোলার প্যানেল, গ্যাস লাইটার, বাসা-বাড়ির কাজে ব্যবহৃত পানির ফিল্টারে শুল্ক আরোপ করা হয়। এ ছাড়া পিপিই ও আরটি-পিসিআর কিট উৎপাদন ও প্রস্তুত করার কাঁচামাল আমদানির ওপর বিদ্যমান শুল্ককর মওকুফের সুবিধা বাদ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
রাজস্ব আহরণে নজর দিয়েছেন কর সংগ্রহে অটোমেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা। এ ছাড়া বাড়ানো হবে ভ্যাট ও আয় করের নেট। বিলাসী ও অপ্রয়োজনীয় আমদানি নিরুৎসাহিত করা হবে। দেশে চার কোটি মানুষ মধ্যবিত্ত ও উচ্চ বিত্ত। যার অধিকাংশই আয়কর দিচ্ছে না। করযোগ্য আয়ধারী সবাইকে কর জালের আওতায় আনা হবে। এক কোটি টিনধারী সংখ্যা উন্নীত করার পরিকল্পনা নিয়েছেন।
নতুন যা থাকছে : বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় বাজেটে বিনিয়োগকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিনির্ভর খাতে ৩০ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। উদীয়মান শিল্পকে ভ্যাট অব্যাহতির সুবিধা দেওয়ার পাশাপাশি চলমান সুবিধার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। মোটরগাড়ি উৎপাদন শিল্পে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা পাচ্ছে।
টিআইএন (করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর) সনদ দিয়ে সরকারি কিছু সেবা পাওয়া যেত। আগামী অর্থবছর থেকে সেসব সেবা পেতে রিটার্ন জমার স্লিপ দিতে হবে। করজাল বাড়াতে আগামী বাজেটে অভিনব উদ্যোগও থাকছে। যেমন সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে টিআইএনের পরিবর্তে রিটার্ন জমার স্লিপ ঝোলানো বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।
এর ব্যত্যয় ঘটলে সর্বনিম্ন পাঁচ হাজার এবং সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান করা হচ্ছে। এর ফলে ছোট-বড় সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে বাধ্যতামূলকভাবে রিটার্ন জমা দিতে হবে। শুধু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নয়, ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদেরও রিটার্ন জমার ক্ষেত্রেও কড়াকড়ি আরোপ করা হচ্ছে।
করখেলাপিদের শায়েস্তা করার উদ্যোগও থাকছে। সময়মতো কর পরিশোধ না করলে বাসাবাড়ি অথবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির লাইন বিচ্ছিন্ন করার বিধান রাখা হচ্ছে।
আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে খেলাপি ঋণের ওপর করারোপ করা হয়। বর্তমানে কোনো ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ মওকুফ করলে করমুক্ত সুবিধা আছে। নতুন নিয়মে প্রাতিষ্ঠানিক করদাতাদের খেলাপি ঋণ মওকুফ করা হলে করযোগ্য আয় হিসাবে গণ্য হবে। মন্দ ঋণের প্রবণতা হ্রাস করতেই বাজেটে এ পদক্ষেপ থাকছে।
কোভিড অভিঘাত ও মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় আগামী বছর ৫০ লাখ গরিব মানুষকে স্বল্পমূল্যে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হবে। সারের ভর্তুকি দেওয়া হবে ১৬ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে প্রথম সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল।
স্বাস্থ্য খাত উন্নয়নে সমন্বিত স্বাস্থ্য বিজ্ঞান, গবেষণা ও উন্নয়ন তহবিলে আরও ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া করোনা মোকাবিলায় আরও পাঁচ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ থাকছে। তবে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী খাতে আগামী অর্থবছরে এক কোটি ১৩ লাখ ৫৭৬ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। এটি মোট বাজেটের ১৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এই উপকারভোগীদের মধ্যে তিন লাখ ৫৭ হাজারজন নতুন প্রতিবন্ধীকে ভাতার আওতায় আনা হবে। তাদের ভাতা ৭৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮৫০ টাকা করা হচ্ছে। এ ছাড়া মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচির আওতায় উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে দুই লাখ ৯ হাজার। এতে মোট উপকারভোগী হবে ১২ লাখ ৫৪ হাজার। এ খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এক হাজার ২৪৩ কোটি টাকা।
বৈশ্বিক সংকটের কথা তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে দেশের বাজারে আমদানি ব্যয় অতিরিক্ত বেড়েছে ৮২০ কোটি মার্কিন ডলার। জ্বালানি তেল, এলএনজি, গম, রাসায়নিক সার ও পামঅয়েল, কয়লা, ভুট্টা ও চাল আমদানিতে এই ব্যয় বেশি হয়েছে। পাশাপাশি জ্বালানি তেল, সার, গ্যাস ও বিদ্যুতের ভর্তুকি বাবদ আগামী বছরে গুনতে হবে ৮২ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা। এই ভর্তুকি ব্যয় আগামী বছরের জন্য চ্যালেঞ্জ মনে করছেন। তবে এই ব্যয় আরও ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বাড়ার আভাস দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডিজিটাল মুদ্রা চালু করবে। এ জন্য একটি ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি পরিচালনা করা হবে।
বাজেট কাঠামো : রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তিন লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআর কর তিন লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা এবং এনবিআরবহির্ভূত কর ১৮ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া কর ব্যতীত রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য ৪৫ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে। এ বছর বৈদেশিক অনুদান পাওয়ার আশা হচ্ছে তিন হাজার ২৭১ কোটি টাকা।
আগামী বছরে পরিচালনা খাতে ব্যয় হবে চার লাখ ১১ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে আবর্তক ব্যয় তিন লাখ ৭৩ হাজার ২৪২ কোটি টাকা। এই আবর্তক ব্যয় থেকে দেশীয় ঋণের সুদ ৭৩ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক ঋণের সুদ খাতে ব্যয় হবে সাত হাজার ২০০ কোটি টাকা। আর মূলধনীয় ব্যয় ৩৮ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা। এ ছাড়া উন্নয়ন খাতে খরচ করা হবে ২৫৯ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) আকার দুই লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা।
এডিপিবহির্ভূত বিশেষ প্রকল্পে সাত হাজার ৭২১ কোটি টাকা এবং কাজের বিনিময় খাদ্য কর্মসূচিতে ব্যয় হবে দুই হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা। পাশাপাশি ঋণ ও অগ্রিম খাতে ছয় হাজার ৫০১ কোটি টাকা ও খাদ্য খাতে ৫৪০ কোটি টাকা ব্যয় হবে।
নতুন বাজেটে ঘাটতি (অনুদানসহ) হবে দুই লাখ ৪১ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। এটি মোট জিডিপির ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক ঋণ নেওয়া হবে এক লাখ ছয় হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্র থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া বিদেশি ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা হলো ৯৫ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা। অন্যান্য খাতে নেওয়া হবে পাঁচ হাজার এক কোটি টাকা।