সামগ্রিকভাবে বাজেটের আকার মোটেই বড় নয়। জিডিপির আনুপাতিক হারে বাজেট ১৫ শতাংশ। এটি পৃথিবীর অন্যতম সর্বনিম্ন। কিন্তু আকার ছোট হলেও বাস্তবায়ন বড় সমস্যা।
এ বছর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাড়লেও ১০ মাসে বাস্তবায়ন ৫০ শতাংশের কিছুটা বেশি। এ অবস্থায় এডিপির আকার বাড়ানো হয়েছে। ফলে এটি কতটুকু বাস্তবায়ন হবে, তা সন্দেহ রয়েছে। রাজস্ব আহরণে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তায় বরাদ্দ বাড়ানো জরুরি।
কয়েক বছরে জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে দারিদ্র্য পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছিল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে দারিদ্র্য পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। কয়েক বছর আগে ১ দশমিক ৮ শতাংশ হারে দারিদ্র্য কমে আসছিল। বর্তমানে তা ১ দশমিক ২ শতাংশ। অন্যদিকে করোনার কারণে দারিদ্র্যসীমার নিচে সংখ্যা আরও বেড়েছে। এই কারণে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়ানো জরুরি। কিন্তু ওইভাবে বাড়েনি।
বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। এটি আরও বাড়লেও কোনো সমস্যা ছিল না। কিন্তু ঘাটতি অর্থায়নের ক্ষেত্রে ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ানো হয়েছে। এটি ভালো পদক্ষেপ নয়। কিন্তু বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি মুদ্রানীতির লক্ষ্যমাত্রার নিচে রয়েছে। ফলে সরকার ব্যাংক থেকে এত বেশি ঋণ নিলে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কমে যাবে।
এতে বাজেটে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর যে লক্ষ্যমাত্রার কথা বলা হয়েছে, তা পূরণ হবে না। ফলে দুটি বিষয় সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বাজেট বাস্তবায়নে এটি বিবেচনায় নিতে হবে। পাচার করা টাকা ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, নীতিগতভাবে আমি এর সঙ্গে একমত নই। টাকা পাচার করে আবার তার কর রেয়াতি সুবিধা পাচ্ছে, এটি যৌক্তিক নয়।
এছাড়া এর আগে কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হলেও সেখান থেকে অর্থ খুব বেশি আসেনি। ফলে এ ধরনের কাজে উৎসাহিত করা যুক্তিসঙ্গত নয়। জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এটি উচ্চাভিলাষী।
কারণ বিশ্বব্যাংক বলেছে, প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। ফলে লক্ষ্যমাত্রা ৬-এর কিছুটা ওপরে ধরাই সঠিক ছিল। এছাড়া মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। এটিও অবাস্তব। কারণ এপ্রিলে মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ২৯ শতাংশ। ফলে মূল্যস্ফীতি কমার খুব বেশি লক্ষণ দেখছি না।
বাজেট বাস্তবায়নের জন্য আয় বাড়ানোর বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) দক্ষতা বাড়াতে হবে। কিন্তু প্রত্যেক বছর দেখা যায়, আয়-ব্যয়ের যে লক্ষ্য থাকে সংশোধিত বাজেটে তার চেয়ে কমানো হয়। বাস্তবায়ন হয় তারা চেয়ে আরও কম।
বর্তমানে যে পরিমাণ টিআইএন (করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর) রয়েছে, কর দেয় তার চেয়ে অনেক কম। এক্ষেত্রে টিআইএনধারীদের কর নিশ্চিত করতে হবে। অন্যদিকে ভ্যাটের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। দোকানদাররা ভ্যাট দিতে চায় না। অনেক প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন নেই। ক্রেতারাও রসিদ নিতে আগ্রহী নয়। এছাড়া উপজেলা পর্যায়ে অনেক ব্যবসায়ী রয়েছে। ইতোমধ্যে এরা করের আওতায় এসেছে। তাদের কর নিশ্চিত করতে হবে। অর্থাৎ করের হার না বাড়িয়ে আওতা বাড়াতে হবে।
এডিপিতে অনেক বেশি প্রকল্প নেওয়া হয়। যার ফলে প্রকল্পগুলোতে যে বরাদ্দ দেওয়া হয়, তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। এক্ষেত্রে প্রকল্প বরাদ্দের ক্ষেত্রে যে সময়সীমা দেওয়া হয়, পরবর্তী সময় তার বাড়ে। এতে ব্যয়ও বেড়ে যায়। এ বছর সরকার প্রকল্প কমানোর কথা বলছে।
কিন্তু এরপর কিছু অনুমোদিত প্রকল্প এডিপিতে ঢুকে যায়। সবকিছু মিলে এডিপির জন্য আমাদের আরও বাস্তবধর্মী হওয়া উচিত। সামাজিক খাতগুলোর মধ্যে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। দুই খাতে জিডিপির অনুপাতে যে বরাদ্দ দেওয়া হয়, তা আশপাশের যে কোনো দেশের চেয়ে কম। তবে খরচের দিক থেকেও সমস্যা রয়েছে। কারণ প্রতিবছরই এ খাতে যে বরাদ্দ দেওয়া হয়, তা অব্যবহৃত থাকে। ফলে এই বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় সংস্কার আনতে হবে।