বিদেশে পালিয়েও বাঁচতে পারলেন না আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপুকে গুলি করে হত্যাকাণ্ডের সন্দেহভাজন সমন্বয়কারী সুমন শিকদার মুসা। তাকে ওমান থেকে দেশে ফিরতেই হলো। বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশের তিন সদস্যের একটি দল তাকে নিয়ে দেশে ফিরেছে। বর্তমানে তিনি টিপু হত্যা মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) হেফাজতে রয়েছেন। বিকালে মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে আনা হয় তাকে। আজ শুক্রবার রিমান্ড চেয়ে তাকে আদালতে পাঠাবে পুলিশ। প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে এ হত্যাকাণ্ডের অনেক রহস্য উদ্ঘাটন হবে বলে আশা ডিবি কর্মকর্তাদের।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) রিফাত রহমান শামীম যুগান্তরকে বলেন, টিপুহত্যা মামলার জন্য মুসা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিতে সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। তাকে দেশে ফেরানোর মাধ্যমে একটা মেসেজ আমরা দিতে চাই, তা হলো-অপরাধ যেই করুক, যেখানেই থাকুক পার পাবে না। অপরাধীদের আইনের আওতায় আসতেই হবে।
সূত্রগুলো জানায়, ২৪ মার্চ রাতে টিপু হত্যার ১২ দিন আগে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে দুবাই পালান মুসা। সেখান থেকেও মতিঝিলের ফুটপাতসহ বিভিন্ন স্থানের নিয়ন্ত্রণকারীদের ফোন করে টাকার ভাগ চান। বিভিন্নজনকে হুমকি দিতে থাকেন। এরপর গত মাসের শুরুর দিকে দুবাই থেকে ওমান যান তিনি। তাকে গ্রেফতারের জন্য ১০ মে ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) ঢাকার পক্ষ থেকে এনসিবি মাস্কাটকে অনুরোধ জানানো হয়। ১৭ মে এনসিবি মাস্কাট তাকে গ্রেফতারের খবর ঢাকাকে জানায়। পুলিশ কর্মকর্তাদের তিন সদস্যের দলটি রোববার ওমানে পৌঁছে।
এদিকে মুসাকে ফেরানোর ঘটনায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন টিপুর স্ত্রী ফারহানা ইসলাম ডলি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তিনি যুগান্তরকে বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। পাশাপাশি ডিবি পুলিশ ও গণমাধ্যমের প্রতিও আমি কৃতজ্ঞ। এখন মুসার পেছনে কারা রয়েছেন, তা খুঁজে বের করতে হবে। কারা তাকে অর্থ দিয়ে ও বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করতেন, তাও জানতে হবে। মোল্লা শামীমকে খুঁজে বের করার প্রতিও জোর দেন তিনি।
পুলিশ সূত্র জানায়, মুসার পাসপোর্টের নাম সুমন শিকদার। তার বাবার নাম আবু সাঈদ শিকদার। মা জরিনা আক্তার। স্ত্রী নাসিমা আক্তার। চট্টগ্রামের আনোয়ারা থানার পরাইকরা কইখাইন গ্রামে তার বাড়ি। মুসার বিরুদ্ধে পল্লবী থানায় ১০টি এবং মতিঝিল থানায় একটি মামলা আছে। হত্যা, অস্ত্র, মাদক ও চাঁদাবাজির আইনে এসব মামলা করা হয়।
আওয়ামী লীগ নেতা টিপুসহ জোড়া খুনের ঘটনায় ২৫ মার্চ শাহজাহানপুর থানায় একটি মামলা হয়। এ হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে দুজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাদের মধ্যে ‘শুটার’ মাসুম মোহাম্মদ আকাশের জবানবন্দিতে হত্যার পরিকল্পনায় সুমন শিকদারের নাম আসে। তবে ঘটনার দুই মাসেও সবেচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলামত হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র ও মোটরসাইকেল উদ্ধার হয়নি। শুটার মাসুমকে বহনকারী মোটরসাইকেলের চালক মোল্লা শামীম এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। এতে হত্যার সময় ‘একাধিক অস্ত্রের ব্যবহার’ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেলেও এর নেপথ্যের অনেক ঘটনা এখনো রহস্য হয়ে আছে।