জাতীয় বাজেট ঘোষণার আগের দিন প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তাঁর বক্তব্য এখানে প্রকাশ করা হলো।
এবার একটু অন্য রকম সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশের অর্থনীতি। নানা ধরনের সমস্যা রয়েছে। তবে আমরা বাজেট করছি অত্যন্ত সুচিন্তিতভাবে। মূল্যস্ফীতির কথা যদি বলি। সব সময়ই এটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে ছিল। বিশ্বের অন্য সব দেশের সঙ্গে তুলনা করলে এখনো তা স্বস্তিদায়ক অবস্থার মধ্যেই রয়েছে। তারপরও আমরা এমন সব পদক্ষেপ নিচ্ছি যে মূল্যস্ফীতি বাড়বে না। আমদানি করা মূল্যস্ফীতি বলতে একটা বিষয় আছে। বেশি দাম দিয়ে পণ্য কিনে আনা। এর প্রভাব পড়ে বাজারে। আমরা এটা নিয়ন্ত্রণ করছি। এ ছাড়া বিদেশে যাওয়া প্রায় বন্ধ করেছি। কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প ধীর করে দিচ্ছি।
বিভিন্ন ধরবিভিন্ন ধরনের করের হার কমিয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। করপোরেট কর আরও কমাচ্ছি। কারণ, কর্মসংস্থান না হলে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে। আর কর বেশি থাকলে উৎপাদনমুখী কারখানার জন্য বেশি সমস্যা। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতেই আমাদের মূল নজর। আরও দুটি বড় নজর আছে। অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা। এটা পারব।
আগামী অর্থবছরে আগের চেয়ে ৪৫ হাজার কোটি টাকা বেশি আয়ের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। এটাও অর্জন করা সম্ভব। দেশে চার কোটি মানুষ আছেন মধ্যবিত্ত। তাঁদের কাছে যাব। করের আওতায় আসার যোগ্য অনেকেই আছেন তাঁদের মধ্যে। তাঁদের কাছে পুরোপুরিভাবে পৌঁছাতে পারিনি। এখন পৌঁছাতে হবে। বিষয়টিতে ভবিষ্যতে জোর দেব। আশা করি, তাঁরা নিজেরাই কর দিতে আসবেন।
ব্যবসাবান্ধব করার জন্য ব্যাংক খাতে আমানতের সুদের হার ৬ শতাংশ এবং ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশ করার ব্যাপারে আমরা পদক্ষেপ নিয়েছিলাম। এটা না হলে কোভিডের এ সময়ে বড় সমস্যা হতো। এটা থাকবে। কারণ, এত বেশি সুদ দিয়ে ব্যবসা করা যায় না। প্রবাসী আয়ের কথা যদি বলি, চলতি অর্থবছরের এখন পর্যন্ত দুই হাজার কোটি ডলারের কাছাকাছি হয়েছে। অর্থবছর শেষে ২ হাজার ১০০ কোটি ডলার হবে। যদিও প্রণোদনা দেওয়ার কারণে একবার তা ২ হাজার ৫০০ ডলার কোটি পর্যন্ত উঠেছিল। আবার সেই জায়গায় যাবে। রপ্তানি আয়ও আমরা ৭ হাজার কোটি ডলারে নিয়ে যাচ্ছি। সেভাবে কাজ করছি, প্রস্তুতি নিচ্ছি।
শেয়ারবাজার নিয়ে আগে থেকেই সব করা আছে। সব নীতিই শেয়ারবাজারবান্ধব। এ খাত নিয়ে তাই নতুন কিছু করছি না।
দরিদ্র মানুষ কষ্টে আছেন। তাঁদের কথা মাথায় রেখেই সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বরাদ্দ বড় করা হচ্ছে। ৯৫ হাজার থেকে ১ লাখ ৬ কোটি এবং এবার ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ রাখা হচ্ছে এ খাতে। এক-দেড় বছরের ব্যবধানে ১৮ হাজার কোটি টাকা বৃদ্ধি কম কথা নয়। আমার শেষ কথা হচ্ছে, অর্থনীতিতে উত্থান-পতন থাকে। আমাদের নিরন্তর চেষ্টা হচ্ছে পতন থেকে অর্থনীতিকে উত্থানের দিকে নিয়ে যাওয়া এবং আমরা তেমন কৌশলই করছি যে, তাতে আমরা সফলকাম হব।