সময় নদীর স্রোতের মতোই বহমান। এ কারণে বলা হয়ে থাকে, ‘অর্থের চেয়ে সময়ের মূল্য অনেক বেশি’। অস্বীকার করার উপায় নেই, অন্যান্য উন্নত দেশের মানুষের তুলনায় আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বহুগুণ পিছিয়ে, যার অন্যতম কারণ সময়ের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে না পারা। লক্ষ্য ও পূর্বপরিকল্পনাবিহীন জীবন সাফল্য লাভের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায়। তাই সফলতা অর্জনের অন্যতম প্রধান শর্ত হলো নির্দিষ্ট লক্ষ্য ও পরিকল্পনা থাকা। অ্যালান লেকিনের একটি বিখ্যাত উক্তি, ‘তুমি পরিকল্পনা করতে ব্যর্থ হচ্ছ মানে তুমি আসলে ব্যর্থ হওয়ার পরিকল্পনা করছ।’ অর্থাৎ, পরিকল্পনা প্রণয়ন করা জরুরি যাত্রার শুরুতেই। পূর্বের সব ব্যর্থতা ভুলে গিয়ে, তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে নতুন করে পথচলা শুরু করাটা বুদ্ধিমানের পরিচায়ক।
সময়ের বিবর্তনে ২০২২ সালের বিদায়ের মধ্য দিয়ে শুরু হলো ২০২৩-এ পথচলা। চারদিকে নতুনের জয়গান। নতুন নতুন স্বপ্ন নিয়ে নতুন বছরে পা রেখেছি আমরা। তবে নতুন বছরটি কেমন কাটবে, তা নির্ভর করছে আমাদের লক্ষ্যের ওপর—কতটা সঠিক লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারলাম আমরা। একটি দেশ যেমন তার অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা নির্দিষ্ট করা ছাড়া সামনে এগিয়ে যেতে পারে না, ঠিক মানুষের ক্ষেত্রেও নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়া সর্বোচ্চ সফলতা অর্জন করা যায় না। তাই বছরটি শুরুর আগে একটা ছক কষে নিতে হবে, যেখানে কী কী ইতিবাচক অভ্যাস অর্জন করতে চাই এবং নেতিবাচক অভ্যাস ত্যাগ করতে চাই, তা লিখে ফেলতে হবে। বছরটিকে কেন্দ্র করে স্বল্প ও দীর্ঘ মাত্রার লক্ষ্যগুলো সাজাতে হবে। কত সময়ের মধ্যে তা অর্জন করতে হবে, কী উপায়ে করতে হবে, তার পরিকল্পনাও টুকে নিতে হবে। খেয়াল করলে দেখা যায়, যারা ব্যক্তি ও কর্মজীবনে সফল, তারা সময়কে কদর করেছেন। নির্দিষ্ট পরিকল্পনা তথা রুটিনমাফিক এগিয়েছেন। সত্যিকার অর্থে, লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ছাড়া ব্যক্তি ও কর্মজীবনে সফলতা অর্জন দুরূহ ব্যাপার।
বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে নিজেকে এগিয়ে রাখতে হলে অন্য জনের চেয়ে ভিন্ন কিছু করতে হবে। এক্ষেত্রে সুস্থ থাকার পরিকল্পনা করতে হবে সর্বাগ্রে। দৈনিক অন্তত ৩০ মিনিট শরীরচর্চার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে তা নিঃসন্দেহে আমাদের এগিয়ে রাখবে কয়েক ধাপ। বর্তমান সময়ে দক্ষতা ছাড়া ভালো কিছু করা অসম্ভব। তাই অন্ততপক্ষে কোনো একটা বিষয়ে নিজেকে দক্ষ করে তোলা সময়ের দাবি। ভবিষ্যতে অর্থের প্রয়োজনীয়তা মেটাতে এই পন্থা মহৌষধের মতো কাজে দেবে। এছাড়া ক্যারিয়ার নিয়ে পরিকল্পনা গুছিয়ে রাখতে হবে। অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য ধারাবাহিক প্রস্তুতি শুরু করতে দেরি করা যাবে না মোটেও। প্রবাদ আছে, ‘অর্থই শক্তি’। তাই সবকিছুর পাশাপাশি কিছু অর্থ সঞ্চয় করা অপরিহার্য, যেটা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি নন-একাডেমিক বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। তাই বছর জুড়ে কোন কোন বই পড়া হবে, সেগুলোর তালিকা করে রাখতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পড়া সম্পন্ন করতে পারলে নতুন নতুন বিষয়ের ওপর জ্ঞান অর্জন সম্ভব হবে। বর্তমান সময়ে খুব সহজে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ সহজতর হয়েছে। প্রতিদিন নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার মাধ্যমে নতুন কিছু জানার সুযোগ কাজে লাগানো যেতে পারে।
মোট কথা, নতুন বছরের সবকিছু শুরু করতে হবে নতুন মোড়কে। নতুন পরিকল্পনা, নতুন চলার শুরু। নতুন স্বপ্ন, নতুন আশা ও স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। ২০২৩-এর বিশ্বে সংকট কেটে ফুটুক আশার আলো, নবজীবন লাভ করুক বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তের মানুষ। নতুন বছরে প্রত্যাশা রইল, কেটে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা, ধূলিধরায় নেমে আসুক শান্তির অমিয় বাণী।