দীর্ঘদিন ক্যানসারের সঙ্গে যুদ্ধ করে অবশেষে হার মেনেছেন ব্রাজিল কিংবদন্তি পেলে। গত বৃহস্পতিবার হাসপাতালেই দুনিয়ার ওপর নিজের শেষ নিঃশ্বাসটি ত্যাগ করেছেন তিনি। ৮২ বছর বয়সি পেলের মৃত্যুতে ফুটবল দুনিয়া শোকাচ্ছন্ন। তার দেশ ব্রাজিলে চলছে মাতম। তবে অন্যদের তুলনায় হুয়াও আরায়ো দিদির কষ্টটা অনেক বেশি। এক পেলের মৃত্যুতে তিনি যে ‘ডবল’ ক্ষতির মুখোমুখি। একসঙ্গে হারিয়েছেন দুজনকে। প্রথমত, একজন কাস্টমার হারিয়েছেন তিনি। দ্বিতীয়ত, একজন পরম বন্ধুকে হারিয়েছেন।
পুরো নাম হুয়াও আরায়ো হলেও সবাই তাকে দিদি নামেই ডাকত, যিনি পেলের চেয়ে দুই বছরের বড়। ৮৪ বছর বয়সি এই দিদি কিংবদন্তি পেলের নাপিত। এক-দুই বছর নয়, দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে পেলের চুল ছাঁটতেন তিনি! ব্রাজিলিয়ান ক্লাব সান্তোসের যে বেলমিরো স্টেডিয়ামে নিয়মিত খেলতেন পেলে, সেই স্টেডিয়ামের কাছেই হুয়াও আরায়োর স্যালুন পেরিং ইন। তার স্যালুনটি খুবই পরিচিত। অনেক নামিদামি কাস্টমারই রয়েছে তার। তবে সেই নামিদামি কাস্টমারদের মধ্যে কিংবদন্তি পেলেকেই সবার ওপর ঠাঁই দিতেন হুয়া আরায়ো দিদি।
তার স্যালুনটিকে চাইলে একটা ‘ফুটবল জাদুঘর’ও বলতে পারেন। আরো সংক্ষেপে ‘পেলের জাদুঘরও’ বলতে পারেন। পেলের খেলোয়াড়ীজীবনের অনেক কিছুই স্যালুনটির দেওয়ালে টাঙানো রয়েছে। রয়েছে কিংবদন্তি পেলের বিশালাকৃতির একটা ছবি। পাশাপাশি ‘রাজা’ পেলের কয়েকটি জার্সি এবং শর্টসও ঝুলানো আছে, যা পেলের সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের অন্তরঙ্গ বন্ধুত্বের সাক্ষ্যই দিচ্ছে। পেলের ছবি-জার্সির পাশাপাশি ক্লাব সান্তোস এবং ব্রাজিল জাতীয় দলের নানা অর্জনের স্মৃতিও বহন করছে তার স্যালুন।
আজ দিদির স্যালুনের চারপাশ লোকে লোকারণ্য হয়ে যাবে। কারণ ব্রাজিলিয়ানদের দেখার জন্য যে আজ প্রয়াত পেলের মরদেহটি সান্তোস ক্লাবে রাখা হবে। তার আগে দিদি শোকে মুহ্যমান।
সান্তোসের জার্সি পরা এক তরুণ কাস্টমারের চুল ছাটতে ছাটতে তিন বারের বিশ্বকাপজয়ী সম্রাট পেলের মূল্যায়ন করেন দিদি। বিশ্বখ্যাত সংবাদ সংস্থা এএফপির প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের বড় এক প্রতীককে হারালাম। ব্রাজিল হারিয়েছে এক মহানায়ককে, বিশ্ব হারিয়েছে এক কিংবদন্তিকে। আর দিদি হারিয়েছে অনেক বড় এক কাস্টমারকে এবং মহান এক বন্ধুকে।’