পশ্চিমা অস্ত্রের ওপর পুরোপুরি নির্ভর করতে হচ্ছে তাদের সেভেরোদনেৎস্কের রাজপথে তীব্র লড়াই চলছে : যুক্তরাজ্য
ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার উপ-প্রধান ভাদিম স্কিবিতস্কি বলেছেন, রণক্ষেত্রে রাশিয়ার বিরুদ্ধে হেরে যাচ্ছে ইউক্রেন এবং রাশিয়াকে ঠেকিয়ে রাখতে তাদের পশ্চিমা অস্ত্রের ওপর পুরোপুরি নির্ভর করতে হচ্ছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘গার্ডিয়ান’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেছেন। শুক্রবার সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছে। ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার উপ-প্রধান বলেন, ‘এটি এখন একটি কামান যুদ্ধে পরিণত হয়েছে। এখন আমরা যে রণক্ষেত্রে রয়েছি, তা ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে এবং কামানের নিরিখে আমরা হেরে যাচ্ছি।’ সংবাদসূত্র : গার্ডিয়ান বিবিসি, রয়টার্স, আল-জাজিরা
স্কিবিতস্কি বলেন, ‘এখন সবকিছু নির্ভর করছে পশ্চিমারা আমাদের কী দিচ্ছে। ইউক্রেনের একটি কামানের বিপরীতের রাশিয়ার রয়েছে ১০ থেকে ১৫টি। রাশিয়া যা আছে, তার মাত্র ১০ শতাংশ আমাদের দিয়েছে পশ্চিমা অংশীদাররা।’ তিনি বলেন, প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয় হাজার কামানের গোলা ব্যবহার করছে ইউক্রেন। আমরা আমাদের কামানের গোলা প্রায় সব শেষ করে ফেলেছি। এখন আমরা ন্যাটো মানের ১৫৫-ক্যালিবার শেল ব্যবহার করছি।’ ইউক্রেনীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, ‘ইউরোপ আমাদের নিম্ন-ক্যালিবারের শেল দিচ্ছিল। কিন্তু তাদের সরবরাহও ফুরিয়ে গেছে। দিন দিন পরিমাণ কমছে।
গত সপ্তাহে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছিলেন, প্রতিদিন ৬০ থেকে ১০০ জন ইউক্রেনীয় সেনা নিহত হচ্ছে এবং আরও ৫০০ জনের মতো আহত হচ্ছে। উলেস্নখ্য, ইউক্রেন নিজেদের সেনাবাহিনীর হতাহতের সংখ্যা এখন পর্যন্ত গোপন রেখেছে। রণক্ষেত্রে মোতায়েন হওয়ার ইউক্রেনীয় সেনারাও গার্ডিয়ানের একই চিত্রের কথা তুলে ধরেছেন। স্কিবিতস্কি পশ্চিমাদের কাছ থেকে দূরপালস্নার রকেট ব্যবস্থা ইউক্রেনকে দেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। যাতে করে দূর থেকে রুশ কামান ধ্বংস করা যায়।
সম্প্রতি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের এক উপদেষ্টা ওলেক্সি আরেস্তোভিচ বলেছিলেন, ইউক্রেনের প্রয়োজন ৬০টি মাল্টিপল রকেট লঞ্চার। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রম্নতির তুলনায় এই সংখ্যা অনেক বেশি।
গত ২৪ ফেব্রম্নয়ারি আক্রমণ শুরুর পর প্রথম দিকে ইউক্রেনে ক্রমাগত রকেট হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। কিন্তু গত দুই মাসে এমন হামলার সংখ্যা কমে এসেছে। স্কিবিতস্কি বলেন, এটি প্রমাণ করে, রাশিয়ার রকেটও কমে এসেছে। নিষেধাজ্ঞার কারণে দ্রম্নত এগুলো উৎপাদন করতে পারছে না মস্কো। এই যুদ্ধে রুশরা তাদের রকেট মজুতের ৬০ শতাংশ ব্যবহার করে ফেলেছে।
ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধানের মতে, রাশিয়া এখন দিনে ১০ থেকে ১৪টি রকেট নিক্ষেপ করছে। তিনি বলেন, ‘দনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলে সবচেয়ে বাজে অবস্থা চলছে আমাদের। বলতে গেলে, সেখানে ইউক্রেনীয় সেনারা প্রায় অস্ত্র ছাড়াই যুদ্ধ করছে।’
সেভেরোদনেৎস্কের রাজপথে তীব্র লড়াই চলছে : যুক্তরাজ্য
এদিকে, গুরুত্বপূর্ণ পূর্বাঞ্চলীয় শহর সেভেরোদনেৎস্কের রাজপথে ইউক্রেনীয় ও রুশ বাহিনীর মধ্যে তীব্র লড়াই চলছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্য। ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সবশেষ গোয়েন্দা পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, এই লড়াইয়ে বিপুল সংখ্যক হতাহত হতে পারে।
ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি, সেভেরোদনেৎস্কের রাজপথে তীব্র লড়াই চললেও রুশ বাহিনী শহরটির দক্ষিণে উলেস্নখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করতে পারেনি। ব্রিটিশ পর্যালোচনায় আরও বলা হয়েছে, ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা ভেঙে দিতে আর্টিলারি এবং বিমান সক্ষমতা দিয়ে ব্যাপক গুলি চালাচ্ছে রাশিয়া।
যুক্তরাজ্য বলেছে, রাশিয়া আরও সুনির্দিষ্ট আধুনিক ক্ষেপণাস্ত্রের অভাব বোধ করছে এবং ইউক্রেনের স্থল লক্ষ্যবস্তুর বিরুদ্ধে ভারী জাহাজ বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের আশ্রয় নিচ্ছে। এগুলো মূলত পারমাণবিক ওয়ারহেড ব্যবহার করে বিমানবাহী রণতরী ধ্বংস করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। উলেস্নখ্য, প্রচলিত ওয়ারহেড যখন স্থল আক্রমণে ব্যবহার করা হয়, তখন সেগুলো মারাত্মক ভুল এবং উলেস্নখযোগ্য ক্ষতি এবং বেসামরিক হতাহতের কারণ হতে পারে।
উলেস্নখ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটোকে ঘিরে দ্বন্দ্বের জেরে সীমান্তে আড়াই মাস সেনা মোতায়েন রাখার পর গত ২৪ ফেব্রম্নয়ারি ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিন। এই ঘোষণা দেওয়ার দু’দিন আগে ইউক্রেনের রুশ বিচ্ছিন্নতাবাদী নিয়ন্ত্রিত দুই অঞ্চল দনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেন তিনি।
শনিবার ১০৮তম দিনে পৌঁছেছে ইউক্রেনে রুশ সেনাদের অভিযান। এরই মধ্যে দেশটির দুই বন্দর শহর খেরসন ও মারিউপোল, দনেৎস্ক প্রদেশের শহর লিয়াম এবং মধ্যাঞ্চলীয় প্রদেশ জাপোরিজ্জিয়ার আংশিক এলাকার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে রুশ বাহিনীর হাতে। বর্তমানে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ লুহানস্কের সেভারদনেৎস্ক শহরে ইউক্রেন সেনাদের সঙ্গে তীব্র সংঘাত চলছে রুশ বাহিনীর।