তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক শেষে গতকাল হয়ে গেল কিংবদন্তি পেলের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার প্রথম পর্ব। ব্রাজিল কিংবদন্তি শেষ বারের মতো একটা দিন কাটালেন সান্তোস এফসি ক্লাবে। দুই পায়ে দাঁড়িয়ে নয়, প্রিয় সান্তোসে শেষ দিনটা তার কাটল কফিনের ভেতর সাদা কাপড় আর ফুলের পাপড়ি বিছানো বিছানায় ঘুমিয়ে। চারদিকে কত শব্দ, চেঁচামেচি হইচই, বাজল বিউগলের মায়াবি করুণ সুর। কিন্তু কোনো কিছুই কিংবদন্তি পেলের ঘুম ভাঙাতে পারল না। নিথর দেহে কফিনের ভেতরেই কাটিয়ে দিলেন সারাটা দিন।
সান্তোস এফসি। ব্রাজিলের এই ক্লাবটিতেই ‘পেলে’ হয়ে উঠেছিলেন পেলে। সাও পাওলোর এই ক্লাবটিতেই কাটিয়েছেন ক্যারিয়ারের দীর্ঘ ১৮টি বছর। বিশ্ব ফুটবলের কিংবদন্তি পেলের যত অর্জন-কীর্তি, নামডাক—সবই হয়েছে এই সান্তোসে থাকতে। কিংবদন্তি পেলেই সান্তোস ক্লাবকে বিখ্যাত বানিয়ে ছিলেন বিশ্ব জুড়ে। যে মাঠে কাল শেষ দিনটি পার করলেন, সেই ভিলা বেলমিরো স্টেডিয়ামের মাটি, ঘাস, এমনকি বাতাসেও পেলের গন্ধ মিলে। স্টেডিয়ামের গ্যালারি, খেলোয়াড় ড্রেসিংরুম, প্যাভিলিয়ন, টানেল—সর্বত্রই বহন করে চলেছে কিংবদন্তি পেলের অর্জন-কীর্তি। মাঠটির সবুজ ঘাসে কত বার যে জাদুকরী পায়ে ফুটবলের ফুল ফুটিয়েছেন পেলে! যে তার সারা জীবনের কীর্তির বোঝা বহন করে চলেছে, সেই মাঠে পেলে শেষ দিনটি পার করলেন নিথর দেহে!
কর্মসূচি আগেই ঘোষণা করা ছিল—শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য ২ জানুয়ারি কিংবদন্তি পেলের মরদেহ রাখা হবে সান্তোসের ভিলা বেলমিরো স্টেডিয়ামে। ফলে আগে থেকেই ব্রাজিলের সাধারণ মানুষ ভিড় জমায় ভিলা বেলমিরো স্টেডিয়াম চত্বরে। অপেক্ষায় থাকে কিংবদন্তির মরদেহ বহনকারী কফিন আসার, শেষ বারের মতো শ্রদ্ধা জানানোর জন্য।
পূর্ব ঘোষণা মতোই ব্রাজিলের স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় ভিলা বেলমিরো স্টেডিয়ামে নেওয়া হয় তিন বারের বিশ্বকাপজয়ী পেলের মরদেহ বহনকারী কফিন। কফিন বহনে নেতৃত্ব দেন কিংবদন্তি পেলের ছেলে এডিনহো। কফিন নিয়ে রাখা হয় স্টেডিয়ামের ঠিক মধ্যখানে। যেখানে আগে থেকেই মঞ্চ বানিয়ে রাখা হয়েছিল। সেখানে গিয়ে প্রথমেই ব্রাজিল কিংবদন্তির গলায় লকেট পরিয়ে দেন তার তৃতীয় স্ত্রী মার্সিয়া সিবেলে আয়োকি। এরপর শ্রদ্ধা জানাতে আসা মানুষকে ভেতরে প্রবেশের জন্য খুলে দেওয়া হয় স্টেডিয়ামটির ২ ও ৩ নম্বর গেট। সারিবদ্ধভাবে ব্রাজিলের সাধারণ মানুষ এক এক করে ভেতরে প্রবেশ করে শেষ বারের মতো শ্রদ্ধা জানান চিরনিদ্রায় শায়িত ফুটবলের রাজাকে।
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার প্রথম পর্ব হিসেবে সাধারণ মানুষকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য কিংবদন্তির মরদেহ পুরো একটা দিন, মানে ২৪ ঘণ্টা ভিলা বেলমিরো স্টেডিয়ামে রাখা হয়। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার প্রথম পর্বে উপস্থিত ছিলেন ফিফা সভাপতি জিয়ান্তি ইনফান্তিনোসহ বিশ্ব ফুটবলের অনেক কর্তাসহ বিশ্বের অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি। ব্রাজিলের প্যারিস থেকে উড়ে গিয়েছিলেন নেইমার। সান্তোস মাঠে সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধার্ঘ্য পর্ব শেষে ব্রাজিল কিংবদন্তির মরদেহ নিয়ে সান্তোসের চার দিকের রাস্তায় প্রদক্ষিণ করা হবে। তখন থেকেই মূলত শুরু হবে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার মূল পর্ব। ঐ সময় শুধু ফুটবলের রাজার পরিবারের সদস্য ও কাছের মানুষ উপস্থিত থাকবেন। এই পর্বে ছেলেকে শেষ বিদায় জানাবেন পেলে শতবর্ষী মা ডোনা সেলেস্তে অরান্তেসও। যিনি বেঁচে আছেন বটে, তবে শয্যাশায়ী। এরপর তাকে সমাধিস্থ করা হবে নেক্রোপোল একুমেনিকাতে।