কোভিড মহামারীর প্রথম বছরে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগে (এফডিআই) বড় ধরনের পতন হলেও সেই ধাক্কা ভালোভাবে সামলে পরের বছরেই ‘ঘুরে দাঁড়িয়েছে’ বাংলাদেশ; এক পঞ্জিকা বর্ষে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে ১৩ শতাংশ। জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা আঙ্কটাডের সবশেষ প্রতিবেদন সেই সুখবরই দিয়েছে বৃহস্পতিবার। ২০২১ সালে এফডিআই এসেছে প্রায় ২৯০ কোটি ডলার।
শুধু বিদেশি বিনিয়োগ নয়, প্রকল্পে আন্তর্জাতিক অর্থায়নেও বড় ধরনের উল্লম্ফন হয়েছে। এক বছরে আন্তর্জাতিক প্রকল্পের সংখ্যা তিনগুণ বেড়েছে। মহামারীর ক্ষত সারিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আসার সময়কালে ইউক্রেইন যুদ্ধের কারণে তেতে ওঠা আন্তর্জাতিক পণ্য বাজার বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশের অর্থনীতির সূচকগুলো নিম্নমুখী করলেও অর্থবছরের শেষ প্রান্তে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগে ইতিবাচক এ খবর অর্থনীতির জন্য স্বস্তিরই।
আঙ্কটাডের সবশেষ ‘বিশ্ব বিনিয়োগ বিনিয়োগ প্রতিবেদন ২০২২’ এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে বাংলাদেশে এফডিআই আগের বছরের চেয়ে ১৩ শতাংশ বেড়ে মহামারীর প্রায় আগের অবস্থানে চলে এসেছে।
সংস্থাটির হিসাবে বিভিন্ন দেশ থেকে ওই বছর দেশে সরাসরি বিনিয়োগ এসেছে প্রায় ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন (২৮৯ কোটি ৬০ লাখ) ডলার। এর আগে পরপর দুই বছর এফডিআই অনেক বেশি হারে কমে ২০২০ সালে ছিল ২৫৬ কোটি ৪০ লাখ ডলারে এবং ২০১৯ সালে এর পরিমাণ ছিল ২৮৭ কোটি ৪০ লাখ ডলারে নেমেছিল।
তবে দেশে এর আগের বছর ২০১৮ সালে রেকর্ড এফডিআই এসেছিল; ৩৬১ কোটি ৩০ লাখ ডলার।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত আঙ্কটাডের প্রতিবেদনে ২০২১ সালে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক প্রকল্পের চুক্তির পরিমাণ অনেক বাড়ার খবরও প্রকাশ করা হয়েছে। গত বছর মোট ৪৭০ কোটি ডলারের আন্তর্জাতিক ১৪টি প্রকল্পের চুক্তি হয়েছে, যা আগের বছরের তিনগুণ।
এর মধ্যে ২০০ কোটি ডলার ব্যয়ে চট্টগ্রামের উত্তর হালিশহরের আনন্দ বাজারে একটি কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পটি সবচেয়ে বড়।একই সময়ে বিদেশে বাংলাদেশি উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের প্রবাহও আগের বছরের চেয়ে সাত গুণের বেশি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ কোটি ২০ লাখ ডলারে। ২০২০ সালে যা ছিল ১ কোটি ২০ লাখ ডলার।
২০২১ সালে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) মধ্যে এফডিআই টানার ক্ষেত্রে সেবা পাঁচে ছিল বাংলাদেশ। আঙ্কটাডের প্রতিবেদনে দেখা যায়, এলডিসিভুক্ত দেশগুলোতে ১৩ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগ বেড়ে ২৬ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।
শুধু বাংলাদেশে নয়, গত বছর বিশ্বজুড়ে এফডিআই পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। প্রাক মহামারী অবস্থায় পৌঁছেছে বিনিয়োগ, যার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন ডলার। তবে আঙ্কটাডের প্রতিবেদন বলছে, ইউক্রেইন যুদ্ধ ও বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় খাদ্য, জ্বালানি ও অর্থায়ন সংকটে ত্রিমুখী চাপ তৈরি হচ্ছে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে।