ভারতের ঝাড়খণ্ডে নির্মাণাধীন আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আগামী মার্চ থেকে এ আমদানি শুরু হচ্ছে। ইতিমধ্যে ভারত থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ আনার জন্য স্বতন্ত্র সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গতকাল মঙ্গলবার এ তথ্য জানিয়েছেন। ভারত সফররত প্রতিমন্ত্রী ভারতের ঝাড়খণ্ডে নির্মাণাধীন ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিদর্শন শেষে এসব কথা বলেন। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ সচিব মো. হাবিবুর রহমান ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান।
২০১৭ সালের ৫ নভেম্বর বিদ্যুৎ বিভাগ ও ভারতীয় কোম্পানি আদানি পাওয়ার লিমিটেডের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির আওতায় ভারতের ঝাড়খণ্ডে এ ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে। দুই ইউনিটের কেন্দ্রটির প্রতিটির উৎপাদন সক্ষমতা ৮০০ মেগাওয়াট। এটি থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বাংলাদেশে সরবরাহ করা হবে। সেজন্য স্বতন্ত্র সঞ্চালন লাইনের অংশ হিসেবে বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও বগুড়ায় দুইটি সাবস্টেশন ও অন্যান্য সঞ্চালন কাজ পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি (পিজিসিবি) নির্মাণ করেছে। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট হতে ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আগামী মার্চের মাঝামাঝি পাওয়া যেতে পারে। আগামী গ্রীষ্মের চাহিদা পূরণে আরো বিদ্যুৎ প্রয়োজন। জ্বালানির বিকল্প উৎসও আমরা খুঁজছি। সাশ্রয়ী মূল্যে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছি। ’
এদিকে ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিকস অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিসের (আইইইএফএ) এক রিপোর্টে সম্প্রতি বলা হয়েছে, আদানি গ্রুপ গড্ডা কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনে অস্ট্রেলিয়ার কারমাইকেল খনির কয়লা ব্যবহার করবে। অস্ট্রেলিয়া থেকে আনা কয়লা খালাস হবে ভারতের ওড়িশার ধামরায় অবস্থিত আদানির নিজস্ব বন্দরে। সেই বন্দর থেকে গড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যন্ত ৭০০ কিলোমিটার রেলপথে কয়লা গ্রহণ করা হবে। আইইইএফএর রিপোর্ট অনুযায়ী, আদানির প্রতি ইউনিট (কিলোওয়াট ঘণ্টা) বিদ্যুৎ বাংলাদেশকে ১৬-১৭ টাকায় কিনতে হবে । যদিও বাংলাদেশে আমদানি করা কয়লা দিয়ে উৎপাদিত পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম পড়ছে ৮-৯ টাকা।
পিডিবির এক রিপোর্টেও দামের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে বলা হয়েছে—আদানির কেন্দ্র থেকে চলতি অর্থবছর (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ আমদানির সম্ভাব্য পরিমাণ ২৯৮ কোটি ৭০ লাখ ইউনিট (কিলোওয়াট)। এজন্য ব্যয় হবে ৫ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা। প্রতি ইউনিটের দাম পড়বে ১৭ টাকা ৮৭ পয়সা। এই দাম ভারত থেকে বর্তমানে বাংলাদেশে আমদানি করা বিদ্যুতের গড় দামের প্রায় তিন গুণ। পিডিবির তথ্য মতে, গত অর্থবছর ভারত থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের প্রতি ইউনিটের দাম পড়ে ৬ টাকা ১১ পয়সা। চলতি অর্থবছর প্রতি ইউনিটের গড় দাম পড়বে ৬ টাকা ৪১ পয়সা। আদানির বিদ্যুৎ এতে যুক্ত হলে গড় দাম বেড়ে যাবে।