মৃত্যুর পরও পাঁচ দিন প্রাণহীন নিথর দেহে কফিনে পড়ে ছিলেন ব্রাজিল কিংবদন্তি পেলে। তবে এখন তিনি শুধুই স্মৃতি। শেষকৃত্যের সব আনুষ্ঠানিকতার পর গত পরশু তাকে সমাহিত করা হয়েছে সান্তোসের মেমোরিয়াল নেক্রোপোল একুমেনিয়াত সমাধিস্থলে। বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু সমাধিস্থলটিতে বাবা ডনডিনহোর পাশেই ওপারের অন্তিমকালের জন্য শায়িত হয়েছেন ফুটবলের রাজা।
সমাধিস্থ হওয়ার আগে পুরো ফুটবল দুনিয়াই শোকার্ত শ্রদ্ধা জানিয়েছে ব্রাজিল কিংবদন্তিকে। ব্রাজিলের সাধারণ মানুষেরা তো শোকে পাথরই হয়ে গিয়েছিল। তিন বারের বিশ্বকাপজয়ী মহানায়ককে শ্রদ্ধা জানিয়েছে ঘুম, নাওয়া-খাওয়া বাদ দিয়ে! দুঃখজনক হলেও সত্যি, সারা দুনিয়ার মানুষ নতশিরে শ্রদ্ধা জানালেও ব্রাজিলেরই অনেক ফুটবলার কিংবদন্তি পেলের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যাননি, জানাননি শেষ শ্রদ্ধা? কেন তারা কিংবদন্তি পেলের শেষকৃত্যে যাননি, এই প্রশ্নের উত্তরটা একমাত্র তারাই দিতে পারবেন। তবে শেষকৃত্যে না যাওয়ার কারণে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন তারা। দেশ ব্রাজিলে তো বটেই; ব্রাজিলের বাইরে ফুটবল দুনিয়া জুড়েই সমালোচিত হচ্ছেন তারা।
তারা কারা? তালিকাটা অনেক লম্বা। ব্রাজিলের ১৯৯৪ বিশ্বকাপজয়ী দলের মাত্র একজন সশরীরে গিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। তিনি মাউরো সিলভা। যিনি বর্তমানে সাও পাওলোর ফুটবল ফেডারেশনের সহসভাপতি। বাকিদের কেউই আসেননি। ব্রাজিলের সর্বশেষ ২০০২ বিশ্বকাপ জয়ী দলের কেউই যাননি কিংবদন্তি পেলের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায়। মানে রোনাল্ডো নাজারিও, রোনালদিনহো, রিভালদো, কাফু, রবার্তো কার্লোস-ব্রাজিলের বড় বড় এই তারকারা কেউই স্বদেশি কিংবদন্তিকে সশরীরে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে যাননি। যাননি ২০০৭ সালের ব্যালন ডি’অর জয়ী কাকা এবং হালের বড় তারকা নেইমারও।
নেইমার বর্তমানে ফরাসি ক্লাব পিএসজির হয়ে ক্লাব ফুটবলে ব্যস্ত। তিনি না গেলেও তার বাবাকে পাঠিয়েছিলেন। নেইমারের বাবা ছেলের হয়ে সেই ব্যাখ্যা দিয়েছেনও। কিন্তু সেই ব্যাখ্যায় ব্রাজিলিয়ানদের মন ভরেনি। ব্রাজিলের সাধারণ মানুষ বরং পেলের মতো মহান ফুটবল ব্যক্তিত্বের শেষকৃত্যে না যাওয়ায় সমালোচনার তীরেই বিদ্ধ করেছেন নেইমারকে।
সমালোচনার কাঠগড়ায় অনেকেই। তবে সমালোচনার তীব্রতাটা বেশি টের পাচ্ছেন নেইমার, কাকা এবং ২০০২ বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা রোনাল্ডো নাজারিও। শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য পেলের মরদেহ যেখানে রাখা হয়েছিল, সেই সান্তোস স্টেডিয়ামের কাছেই একটি বেকারি দোকানে কাজ করেন ৬৭ বছর বয়সি ক্লদিওনর আলভেস। তিনি এই তিন জনের নাম উল্লেখ করেই বলেছেন, ‘কোথায় রোনাল্ডো নাজারি? কোথায় কাকা, কোথায় নেইমার? তারা কি মনে করে, তাদেরও পেলের মতো মনে রাখা হবে?’
ব্রাজিলের সাবেক ফুটবলার, বর্তমানে টেলিভিশন উপস্থাপক হিসেবে কাজ করা হোসে ফেরেইরা নেতো বলেন, ‘যদিও তারা বিশ্বকাপ জিতেছে, কিন্তু পেলেকে দেখতে আসেনি। আমি তাদের নিয়ে কী-ই বা বলতে পারি। এটুকু বলতে পারি, অন্যকে সম্মান জানানোর অভাব রয়েছে তাদের।
পেলের শেষকৃত্যে যাওয়া ব্রাজিলের ১৯৯৪ বিশ্বকাপ জয়ী দলের একমাত্র সদস্য মাউরো সিলভা তো কাকাকে ধুয়ে দিয়েছেন, ‘কাকা এখন কোথায়, যে বলেছিল ব্রাজিলিয়ানরা তাদের নায়কদের সম্মান দিতে জানে না। বেশ কাকা, পেলের শেষকৃত্যে যা দেখলাম, তাতে পরিষ্কার, আপনিই সেই লোক, যিনি নায়কদের বড় সম্মান দিতে জানেন না। মনে রাখবেন, আমরা এই ঘটনা ভুলতে পারব না।’ ইনস্টাগ্রামে পোস্ট দিয়ে শোক প্রকাশ করেই সন্তুষ্ট থাকা নেইমারকে উদ্দেশ করে নতো বলেছেন, ‘যে কেউ ইনস্টাগ্রামে পেলের ছবি পোস্ট করতে পারে। ছুটির দুইটি দিন ব্যয় করলে কি আপনার অনেক বড় ক্ষতি হতো?’