এইচএসসি পরীক্ষার রেজাল্টের অপেক্ষায় থাকা শিক্ষার্থী অনিমা চন্দ্র সরকার খণ্ডকালীন চাকরি করছেন এবারের ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায়। বিষয়টা নিয়ে তিনি বেশ উচ্ছ্বসিত। এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতেই বললেন, ‘পরীক্ষার ফলাফলের অপেক্ষায় আছি। এই সুযোগে খণ্ডকালীন বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে আন্তর্জাতিক মেলায় কাজ করছি।’ তিনি বলেন, বেতন কম। কিন্তু অভিজ্ঞতা বেশি। কাজের চাপ অনেক। ঘুমানোর সময় ছাড়া বাকি সময় কাজের পেছনেই ছুটতে হয়। তবে আয়ের সঙ্গে অভিজ্ঞতাও হচ্ছে— এটাই বড় পাওয়া। এভাবেই বাণিজ্য মেলায় নিজের কাজের অনুভূতির কথা জানালেন অনিমা সরকার। তিনি গোল্ড কসমেটিকসের বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন।
গাজীপুরের সালনা এলাকার রাতুল আহমেদ মি. বাইট রেস্টুরেন্টের খাবার সরবরাহকারী হিসেবে কাজ করছেন। পঞ্চম শ্রেণিতে লেখাপড়া করার সময় তিনি পিতাকে হারান। মা জহুরা আক্তার অন্যের বাড়িতে কাজ করে তাকে লেখাপড়া করাচ্ছেন। রাতুল এবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সে লেখাপড়া করছেন। অভাব-অনটনের মধ্যে তিনি বাণিজ্য মেলায় কাজ করতে এসেছেন। বাণিজ্য মেলায় কাজের এই আয় দিয়ে তিনি পড়ালেখার খরচ চালাবেন বলে জানালেন।
শুধু অনিমা সরকার আর রাতুল আহমেদ নন, তাদের মতো অনেক শিক্ষার্থী, আবার কেউ কেউ পড়াশোনা শেষ করে চাকরির খোঁজ করছেন—এমন অনেকেই বাণিজ্য মেলায় খণ্ডকালীন চাকরি করছেন। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বাণিজ্য মেলাকে ঘিরে প্রায় ৯ হাজার তরুণ-তরুণীর খণ্ডকালীন চাকরির ব্যবস্থা হয়েছে। এই তরুণ-তরুণীদের কেউ স্টলগুলোতে বিক্রয় প্রতিনিধি। কেউ হিসাবরক্ষক। কেউ-বা খাবার সরবরাহকারী। আবার কেউ প্রহরী। এমন নানা পদে তারা কাজ করছেন। কোনো কোনো স্টলে তরুণীরা একই রঙের জামা কিংবা শাড়ি পরে বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
খাবারের স্টল মি. বাইটের ব্যবস্থাপক আব্দুল আজিজ বলেন, তাদের রেস্টুরেন্টে ৪৫ জন তরুণ বিভিন্ন বিভাগে কাজ করছেন। খাবারের স্টল ফুড বাংলোর মালিক নজরুল ইসলাম বলেন, বেকারদের দিয়েই তিনি কাজ করাচ্ছেন। কিছুটা হলেও তিনি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আনজুমান আরা। অর্থের অভাবে তিনি সারা বছর টিউশনি করেন। লেখাপড়ার খরচ জোগাতেই এই কাজে প্রথমবারের মতো যোগদান করেছেন। তাতে আয় ও অভিজ্ঞতা দুই-ই অর্জিত হচ্ছে। এছাড়া প্রাণ আরএফএলে ৭৫ জন, ওয়ালটনে ৫০ জন, গাজী গ্রুপে ২৭ জন, বিরিয়ানি হাউজে ৪৫ জন তরুণ-তরুণী খণ্ডকালীন চাকরি করছেন। নূর কসমেটিকসের বিক্রয় প্রতিনিধি সুলতানা আক্তার বলেন, তরুণী ও নারীদের পছন্দের তালিকায় কসমেটিকসই সেরা। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত স্টলে প্রচুর ভিড় থাকে। বিক্রিও হচ্ছে অনেক। এই স্টলেই ১৬-১৭ জন নারী বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন বলে জানান। আরআর জুয়েলারি অ্যান্ড টয়েসের বিক্রয় প্রতিনিধি সবিতা রাণী দাস বলেন, নারীদের পছন্দের পণ্যের দোকানে তরুণীরা বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে থাকলে কেনাবেচা ভালো হয় বলে জানান তিনি। তাদের এখানে ১২-১৩ জন বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন বলে তিনি জানান। ইরানি মেলামাইনের ব্যবস্থাপক তপন চৌধুরী বলেন, খণ্ডকালীন চাকরিতে যোগদানকারী তরুণ-তরুণীরা দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করেন। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার জন্য তাদের বিকল্প নেই। তাই বাণিজ্য মেলায় খণ্ডকালীন চাকরির জন্য তরুণ-তরুণীর প্রয়োজনীয়তা বেশি।
এদিকে শিক্ষার্থী, বেকার তরুণ-তরুণীদের পাশাপাশি মেলা ঘিরে আশপাশের ইজিবাইক, রিকশাচালক, অটোচালক, হেলপারসহ ইলেকট্রিশিয়ান, ডেকোরেটরের মালিক—সবারই আয় বেড়েছে।