সোশ্যাল মিডিয়া আধুনিক সমাজের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের জন্য বিশেষভাবে সত্য। দেশে ৩০ মিলিয়নেরও বেশি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছে। এর মধ্যে যারা তরুণ তাদের কাছে ফেসবুক, ইমো, মেসেঞ্জার, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক ইত্যাদি প্ল্যাটফরমগুলো অবিশ্বাস্যভাবে জনপ্রিয় । বিষয়টা নিয়ে খুব বেশি অবাক হওয়ার কিছু নেই।
সবারই জানা আছে, বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের জীবন প্রভাবিত করার সবচেয়ে বড় উপায়গুলোর মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়া একটি। অনেক যুবক-যুবতির জন্য সোশ্যাল মিডিয়া এমন একটি জায়গা, যেখানে তারা তাদের চিন্তাভাবনা, ধারণা এবং সৃষ্টিকে অনেকের সঙ্গে শেয়ার করতে পারে। এছাড়াও এটি এমন একটি প্ল্যাটফরম যেখানে তারা তাদের প্রতিভা এবং দক্ষতা প্রদর্শন করতে পারে। যেমন—বর্তমানে ‘অনলাইন বিজনেস’ ধারণাটি তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। তরুণ-তরুণীরা এখন নিজেদের বেকার জীবনের কালো অধ্যায় ঝলমলে করতে সক্ষম হচ্ছে অনলাইন বিজনেস করে। এক্ষেত্রে তারা তাদের নিজেস্ব প্রোডাক্টের গুণাগুণ ঘরে বসে জনসাধারণের মধ্যে প্রচার করার জন্য সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করছে। মোটকথা, তরুণ সমাজের উপার্জনক্ষম হওয়ার পেছনে সোশ্যাল মিডিয়া ঢালস্বরূপ। উপরন্তু সোশ্যাল মিডিয়ার বদৌলতে তরুণেরা নিজেদের অবসর সময় এখন প্রোডাক্টিভ কাজে লাগাতে সক্ষম।
সোশ্যাল মিডিয়ার উপকারিতার পাশাপাশি এটি স্বীকার করা গুরুত্বপূর্ণ যে, সোশ্যাল মিডিয়া বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের ওপর নেতিবাচক প্রভাবও ফেলছে। উদাহরণস্বরূপ, মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব সম্পর্কে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ বেড়েই চলেছে, বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, সোশ্যাল মিডিয়ার অত্যধিক ব্যবহার উদ্বেগ, বিষণ্ণতার পাশাপাশি তরুণ দেহে ও মনে অলসতার বীজ বুনে দিচ্ছে। এছাড়াও সাইবার বুলিংয়ের সমস্যা রয়েছে, যা বিশেষ করে তরুণদের অপরাধ জগতে প্রবেশ করিয়ে দিচ্ছে। স্পষ্টত, সোশ্যাল মিডিয়ার তরুণদেরকে প্রকৃত সমাজ থেকে বিছিন্ন করে ভার্চুয়াল সমাজের কর্মকাণ্ডের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি করছে। এর ফলে মাঠে খেলাধুলা না করে, তারা ফেসবুকের লাইক, কমেন্ট, শেয়ার সেকশনে নিজেদের মনকে সীমাবদ্ধ করে রাখছে। এই উদ্বেগ সত্ত্বেও এটা স্পষ্ট যে, বাংলাদেশের তরুণদের জীবন উন্নত করার জন্য সোশ্যাল মিডিয়া একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। আত্মপ্রকাশ, সৃজনশীলতা, আত্ম-উন্নতি সৃষ্টি করাসহ সোশ্যাল মিডিয়া মানুষের সঙ্গে মানুষের ইতিবাচক সংযোগ স্থাপন করা এবং বিশ্বে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষম। যদি কি না আমরা ইতিবাচকভাবে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করি।
তরুণদের জন্য দায়িত্বশীলভাবে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করা এবং তাদের মানসিক স্বাস্থ্য ও সুস্থতার ওপর সোশ্যাল মিডিয়ার সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাবগুলো সম্পর্কে তাদের সচেতন করা দরকার। এর অর্থ হলো—সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের ওপর তাদের জন্য সীমা নির্ধারণ করা। এছাড়া যদি তারা অনলাইনে হয়রানির শিকার হয় তাৎক্ষণিক আইনি সাহায্য নেওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা। একই সঙ্গে এটা শেখানো উচিত যে, তারা যেন কোনোভাবেই অন্যায়কে প্রশ্রয় না দেয়। সর্বোপরি, সোশ্যাল মিডিয়াতে তারা যে তথ্য শেয়ার করে সে সম্পর্কেও সচেতন হওয়া ।