তৈরি পোশাক রপ্তানিতে উৎসে করের হার পরিবর্তন না করতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছে এ খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ। বর্তমান শুন্য দশমিক ৫ শতাংশ হারের এ কর আরও ৫ বছরের জন্য অপরিবর্তিত রাখার অনুরোধ জানানো হয়েছে সংগঠনের পক্ষ থেকে।
বাজেট পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবিসহ পোশাক খাতের আরও কিছু দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান। জাতীয় এবং স্থানীয় নানামুখী চ্যালেঞ্জের মুখে বড় আকারের প্রস্তাবিত বাজেটকে সরকারের সাহসী সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখছে বিজিএমইএ। রপ্তানি খাতের করপোরেট কর, ম্যান মেইড ফাইবারের ওপর প্রযোজ্য ভ্যাট অর্ধেকে নামিয়ে আনা সহ প্রস্তাবিত বাজেটের কর কাঠামোর বিভিন্ন পরিবর্তনের প্রশংসা করা হয়েছে। তিনি বলেন এসব উদ্যোগের ফলে বিনিয়োগ উৎসাহিত হবে। বিশ্ববাজারের চাহিদা মত ম্যানমেইড ফাইবারের পোশাক উৎপাদন এবং রপ্তানি আগামীতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন ফারুক হাসান। গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে পেশ করা বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী পোশাক খাতসহ সব ধরনের রপ্তানি পণ্যে উৎসে কর ১ শতাংশ করার কথা বলেন। এ খাতে বর্তমান উৎসে কর দশমিক ৫০ শতাংশ। অর্থাৎ ১০০ টাকা মূল্যের পোশাক রপ্তানিতে ৫০ পয়সা উৎসে কর দেন উদ্যোক্তারা। প্রস্তাবিত বাজেটে এ সংক্রান্ত কোন পরিবর্তন না এলে প্রতি ১০০ টাকায় ১ টাকা উৎসে কর দিতে হবে তাদের। উৎসে কর না বাড়ানোর দাবির পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, করোনার ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতে রাশিয়া- ইউক্রেন যুদ্ধ এবং বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল ও খাদ্যসহ সব পণ্যের দরে উর্ধ্বগতি। ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্টে মূল্যস্ফীতি তীব্র আকার নিয়েছে। ওই সব দেশের মানুষ পোশাকের চাইতে খাবারের পেছনেই বেশি ব্যয় করছে। ইউরোপের কিছু কিছু দেশে অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা বাড়ছে। এতে পোশাকের চাহিদা কমেছে। আগামীতে আরও কমবে। বর্তমানে আরও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে পোশাক খাতে। এ সব বিবেচনায় উৎসে কর বাড়ানোর এটা উপযুক্ত সময় নয়। দ্বিগুন হারে উৎসে কর কাটলে শিল্পের জন্য তা অত্যন্ত ক্ষতিকর হবে।
তিনি বলেন, এসব বাস্তবতায় উৎসে কর বর্তমানে যেই অবস্থায় রয়েছে সে অবস্থায় রাখার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রী সদয় বিবেচনায় রাখবেন। আগামী ৫ বছরের জন্য উৎসে করের এ হার বহাল রাখা হলে বর্তমান সংকটের সময়ও স্বস্তিতে থাকবে শিল্প। শিল্প টিকে থাকলে রাজস্ব বাড়বে। নতুন কর্মসংস্থান হবে।
বক্তব্যে বিগত কয়েক বছরে কি পরিমাণ উৎসে কর দিয়েছেন উদ্যোক্তারা তার পরিসংখ্যান তুলে ধরে বিজিএমইএ সভাপতি। গত অর্থবছর ২ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকার পোশাক রপ্তানির বিপরীতে শুন্য ৫ শতাংশ হারে এক হাজার ৩২০ কোটি টাকা উৎসে কর দিয়েছেন তারা। চলতি অর্থবছর ৩ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা রপ্তানির আশা করা হচ্ছে। সে হিসেবে এক হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা উৎসে কর দেবেন তারা।
বিদ্যমান হারে উৎসে কর দাঁড়াবে দুই হাজার ৭০ কোটি টাকা। অর্থাৎ উৎসে করের সুবিধায় বছর বছর রপ্তানি বেড়েছে। সরকারের রাজস্বও বেড়েছে। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমে রপ্তানি বাড়ানো গেলে করের হার না বাড়িয়েই রাজস্ব বাড়ানো সম্ভব হবে।