বিপিএল বাংলাদেশের ক্রিকেটের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আসর। বিপিএলের নাম গত বছর ছিল ‘বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ’। এবার আর ‘বঙ্গবন্ধু’ শব্দটি নাই। অথচ গত বছর বিসিবি সভাপতি বলেছিলেন প্রতি বছরই বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ হিসেবে বিপিএল চলবে। বিসিবির এমন কথা আর কাজে মিল না পাওয়া অবশ্য নতুন কিছু নয়।
না মেনে উপায় নেই, দেশে হযবরল বিপিএল চলছে। গত বছরের মতো এবারও বিপিএলেও আম্পায়ার ডিসিশন রিভিউ সিস্টেম (ডিআরএস) নেই। যার কারণে সব সময় আম্পায়ারিং প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। বিসিবি সভাপতি এ বিষয়ে অবশ্য কিছু স্পষ্ট উত্তরও দিয়েছেন; কিন্তু অনেকের কাছে সব উত্তর জুতসই মনে হয়নি। যেটা ভারত পারে, সেটা বাংলাদেশ পারে না কেন, সেটাই এখন ক্রিকেট ভক্তদের কাছে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিসিবির সভাপতি বলেছেন, আফ্রিকা লীগ এবং আবুধাবি লীগ ভারত নিয়ন্ত্রণ করছে। তাই তাদের ওখানে ডিআরএস। সেই সঙ্গে আফ্রিকা নাকি অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে সিরিজ বাদ দিয়ে লীগ চালাচ্ছে। যার কারণে ডিআরএস পেয়েছে। বাংলাদেশও নাকি ভারতের সঙ্গে সিরিজ না খেললে ডিআরএস পেত। এমন সস্তা ও সাধারণ যুক্তি যখন একজন বোর্ড প্রেসিডেন্ট থেকে আসে তখন সত্যি অবাক হতে হয়! প্রশ্ন জাগে—আমাদের ক্রিকেট আসলে নিয়ন্ত্রণ করছেন কারা? আবার আরেক জন পরিচালক বলেছেন, সবকিছুই আছে, শুধু ডিআরএস চালানোর লোক নেই। কথা হচ্ছে, ৯০০ কোটিরও বেশি আর্থিক সম্পদ থাকা বিসিবির কি এরকম দক্ষ লোক কেনার সামর্থ্য ছিল না?
ঘটনা এখানেই সীমাবদ্ধ নয়। ডিআরএস নেই। তাই এডিআরএস নিয়ে খেলা চলছে। এই ডিআরএস না থাকায় যতটা না সমস্যা, তার দ্বিগুণ সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে এডিআরএস যুক্ত হওয়ায়। এ ধরনের থার্ডক্লাস প্রযুক্তি দিয়ে এখনকার ক্রিকেট যে চলে না, তা বোধহয় বিসিবি বারবার ভুলেই যায়! সেই সঙ্গে মাঠে আমাদের দেশের আম্পায়ারদের সার্কাস দেখলে আরো অবাক হতে হয়। একটা সিদ্ধান্ত কয়েক বার পালটাতেও দেখা যায়। এ নিয়ে তো মাঠে খেলোয়াড়দের সঙ্গে নিয়মিত বাগিবতণ্ডও হচ্ছে! কখনো তামিম তো কখনো সাকিব। একজন বিদেশি খেলোয়াড় তো বলেই বসলেন, এমন আম্পায়ারিং জীবনে আর কোথাও দেখেননি। তাহলে বুঝতে হবে আমাদের বিপিএলে কেমন আম্পায়ারিং হচ্ছে।
এই যে অদক্ষ আম্পায়ার এবং অদক্ষ পরিচালকগণ নিয়ে বছরের পর বছর বিপিএল পরিচালিত হচ্ছে, এতে আমাদের বিপিএল মুখ থুবড়ে পড়তে আর বেশিদিন বাকি নেই। বাংলাদেশের পরে এসে পিএসএল আমাদের ছাড়িয়ে গেছে। আফ্রিকা লীগ, আবুধাবি লীগও এখন যতটা জৌলুসে হচ্ছে তার ছিটেফোঁটাও নেই বিপিএলে। তবে এত কিছুর পরও বিপিএল আলোকিত করছে খেলোয়াড়রা। সেই সঙ্গে পিচের জন্য ধন্যবাদ দিতেই হবে বিসিবি এবং কিউরেটরদের।
বিপিএলের চলতি আসরের এখন পর্যন্ত খেলাগুলো হচ্ছে জম্পেশ। রান হচ্ছে ভালো, খেলার উত্তেজনাও থাকছে বেশ। সেই সঙ্গে আমাদের তরুণরাও দারুণ ক্রিকেট খেলছে মাঠে। সবমিলিয়ে কালো মেঘে ডাকা আকাশে এক চিলতে রোদের হাসি। তবে এসব হাসি আবারও কালো মেঘের আড়ালে চলে যেতে সময় লাগবে না। আমাদের বিপিএলে পারফরম করা খেলোয়াড়রা জাতীয় দলে এলে আবার কোথায় যেন হারিয়ে যান! ইতিপূর্বে এমন দৃশ্যও কম দেখেননি বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তরা। গণমাধ্যমে সাকিব আল হাসান নিজেই বলেছেন, এই বিপিএল থেকে আসলে কোনো প্লেয়ারই তেমন আসে না। হাতেগোনা কয়েক জনের নাম হয়তো বলা যাবে। বিপিএল শুরু হওয়ার আগ থেকেই দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় ব্র্যান্ড সাকিব যখন একের পর এক বোমা ফাটান, তখন বুঝতে হবে আমাদের বিপিএল নিয়ে আমাদের ক্রিকেটাররাই সন্তুষ্ট নন। মাশরাফিও এই বিপিএলের সমস্যা নিয়ে সাকিবের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন।
তবে এতকিছুর পরও দিনশেষে বিপিএল লোকাল খেলোয়াড়দের জন্য একটা বড় আশা। তারা সারা বছর চেয়ে থাকেন এই আসরের জন্য। তাদের আয়ের একটা বড় অংশও আসে এই বিপিএল থেকে। যদিও দুঃখজনকভাবে তাদের সেই ভরসার আসরটা প্রতিবারই যেন ক্ষীণ হয়ে আসে। এই লীগের অযত্ন আর অবহেলা দিনদিন যেভাবে বাড়ছে, তাতে মনে হয় এটার মান আরো নিচে নামতে শুরু করবে; কিন্তু এভাবে আর কতদিন?