প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়ন হলে নিম্ন মধ্যবিত্ত ও প্রান্তিক মানুষের ক্রয়সীমার বাইরে চলে যাবে ল্যাপটপ ও ডেস্কটপ কম্পিউটার। শিক্ষার্থী, তরুণ উদ্যোক্তাসহ প্রত্যেকের হাতে ল্যাপটপ তুলে দেওয়ার স্বপ্ন বাধাগ্রস্ত হবে।
প্রস্তাবিত বাজেট পাস হলে আমদানিকৃত ল্যাপটপের মূল্য ৩১.২৫ শতাংশ এবং প্রিন্টার, টোনার ও কার্টিজে ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। এখন যে ল্যাপটপ ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকায় পাওয়া যায় সেটি কিনতে ৫০ হাজার টাকা ব্যয় করতে হবে। এদিকে আমদানিকৃত ফাইবার ক্যাবলে আগে থেকেই ৪৮ শতাংশ শুল্ক ও কর রয়েছে। নতুন করে আমদানির ওপর ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্কসহ ১০ শতাংশ অগ্রিম কর আরোপ করায় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের দাম ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। এতে করে ঘরে ঘরে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পৌঁছে দিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের
স্বপ্ন বাধাগ্রস্ত হবে।
আজ মঙ্গলবার তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসায়ীদের শীর্ষ পাঁচ সংগঠনের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানানো হয়। অনুষ্ঠানে ল্যাপটপ কম্পিউটার প্রিন্টার, টোনার ও কার্টিজ এবং ইন্টারনেটের ওপর আরোপিত নতুন ভ্যাট-ট্যাক্স প্রত্যাহারের দাবি জানান সংগঠনগুলোর নেতারা।
বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস), ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কন্টাক্ট সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্কো) এবং ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) যৌথভাবে এ সংবাদ সম্মেলন আজাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিসিএস সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার সুব্রত সরকার বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- ল্যাপটপ এখন বিলাসী পণ্য নয়। ২০২৫ সালের মধ্যে সরকারের ৫ বিলিয়ন ডলার উপার্জনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ফ্রিল্যান্সার থেকে শুরু করে উদ্যোক্তাদের প্রধান হাতিয়ার ল্যাপটপ। এ ছাড়াও শিক্ষা উপকরণ হিসেবেও ল্যাপটপ স্বীকৃত। তাই ল্যাপটপের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক ও কর আরোপ ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার স
বেসিস সহসভাপতি আবু দাউদ খান বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে বেসিসের দাবিগুলো বাজেটে প্রতিফলিত হয়নি। স্থানীয় প্রযুক্তি পণ্য উৎপাদন ক্ষমতা, চাহিদা পূরণে সক্ষম না হওয়া পর্যন্ত ল্যাপটপ আমদানিতে অতিরিক্ত শুল্ক সাধারণ ব্যবহারকারীদের ল্যাপটপ চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হবে। প্রযুক্তি পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক প্রত্যাহার করে ২০৩০ পর্যন্ত কর অব্যাহতি সুবিধা দিতে হবে।
আইএসপিএবি সভাপতি মো. ইমদাদুল হক বলেন, দেশে বর্তমানে এক কোটি ২০ লাখ ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছে। তবে দেশের মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর এটি মাত্র ৭ শতাংশ। তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর উন্নত বাংলাদেশ গড়তে হলে ব্রডব্যান্ড ব্যবহারকারী ৫০ শতাংশেরও বেশি থাকা অপরিহার্য। বাজেটে ব্রডব্যান্ড সেবাদাতা
প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর ১০ শতাংশ অগ্রিম কর এবং অপটিক্যাল ফাইবার কেবল আমদানিতে নতুন করে ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করায় ইন্টারনেট সংযোগের খরচ বেড়ে যাবে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের অন্যতম অনুষঙ্গ হচ্ছে ইন্টারনেট। কিন্তু আমাদের দাবিসত্ত্বেও ব্রডব্যান্ডকে তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর সেবা (আইটিএস) ঘোষণা করা হয়নি। আমরা ব্রডব্যান্ডকে আইটিএস সেবার পাশাপাশি এ খাতে আরোপিত নতুন ট্যাক্স-ভ্যাট প্রত্যাহারের অনুরোধ জানাই।
সংবাদ সম্মেলনে বাক্কো সভাপতি ওয়াহিদ শরীফ বলেন, ল্যাপটপ ও প্রিন্টারের ওপর প্রস্তাবিত কর ও শুল্ক বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং (বিপিও) খাতকেও প্রভাবিত করবে। ভ্যাট আরোপ হওয়ার ফলে খরচ বৃদ্ধি পাবে। এতে অনেক প্রতিষ্ঠান আউটসোর্সিংয়ের কাজ করতে চাইবে না। তিনি তথ্যপ্রযুক্তি প্রশিক্ষণে আরোপিত ২৭.৫ শতাংশ কর প্রত্যাহারের দাবি জানান।
ই-ক্যাব সভাপতি শমী কায়সার বলেন, বাজেটে নতুন উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানদের প্রণোদনা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়ার জন্য আমরা সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। বর্তমানে দেশে ই-কমার্স খাত সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এই সময়ে যদি ল্যাপটপ, কম্পিউটার ও ইন্টারনেটে নতুন করে ভ্যাট-ট্যাক্স আরোপ নতুন উদ্যোক্তা তৈরির পথ রুদ্ধ করবে। স্মার্ট বাংলাদেশের যাত্রাকে সহজ করার জন্য প্রযুক্তিপণ্যেসংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিসিএসের সহসভাপতি মো. রাশেদ আলী ভূঁইয়া, মহাসচিব কামরুজ্জামান ভূঁইয়া, পরিচালক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম, মুহাম্মদ মনিরুল ইসলামসহ অন্যান্য সংগঠনের নেতারা। আরোপিত শুল্ক এবং কর প্রত্যাহার করা উচিত।