ঢাকা ম্যারাথনে অংশগ্রহণ করতে অনেক দেশ থেকে খেলোয়াড়রা ঢাকায় এসেছেন। এদের মধ্যে ইউক্রেন থেকেও তিন জন দৌড়বিদ ঢাকায় এসেছেন। তিনজনই এখন আর ইউক্রেনে যেতে পারছেন না। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে তিন জনের মা-বাবা আত্মীয়স্বজন ইউক্রেনে। উৎকণ্ঠায় রয়েছেন তারা। এই তিন জনের একজন থাকেন সুইজারল্যান্ডে। যুদ্ধের আগে চলে গিয়েছিলেন আর ফেরা হয়নি। অন্য দুই জন পোল্যান্ডে থাকছেন।
মারিয়ানা নেমচমেনকো এবং তার পুরুষ বন্ধু মিকোলা মেবশা। তিনজনই এসেছেন ঢাকা ম্যারাথনে দৌড়ানোর জন্য। কথা হয় মারিয়ানা নেমচমেনকোর সঙ্গে। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান তিনি। বয়স ২৬ বছর। ঢাকায় এসে খুব খুশি। তার বন্ধুকে নিয়ে এরই মধ্যে নীলক্ষেত এলাকায় ঘুরেছেন। মোবাইল ফোনে ছবি তুলেছেন। ছবি দেখালেন কীভাবে শাকসবজি বিক্রি হয়। বাজারে মাছের দোকানের ছবি তুলেছেন। রাস্তায় ভ্যানে কীভাবে শীতের কাপড় বিক্রি হয়, তা দেখে ছবি না তুলে পারলেন না। হকারদের ব্যবসা দেখে মারিয়ানা নেমচমেনকো এবং তার বন্ধু মিকোলা মেবশা দুই জনেই অবাক হয়েছেন। এমন চিত্র কোনোদিন দেখেননি। আনন্দের মধ্যে থাকলেও তাদের ভেতরে কষ্ট যেন শেষ হয় না। কখন খবর আসে রাশিয়ার বোমার আঘাতে বাবা-মা প্রাণ হারিয়েছেন। হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার খবরে আতঙ্কে পড়ে গিয়েছিলেন। পরে জানলেন তাদের এলাকায় সেটি হয়নি।
মা-বাবা ছেড়ে কীভাবে ইউক্রেন থেকে চলে আসলেন মারিয়ানা নেমচমেনকো-সেই কথা মারিয়ানা বললেন, ‘আমরা গত ফেব্রুয়ারিতে খাজিকাস্তানে গিয়েছিলাম খেলতে। তার চার দিন পরই ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়া। যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। আমরা সেখানে থেকে আর দেশে ফিরে যাইনি।’
খাজিকাস্তানে নিজেদের নিরাপদ মনে করছিলেন না মারিয়ানা নেমচমেনকো এবং তার বন্ধু মিকোলা মেবশা। মারিয়ানা বললেন, ‘আমরা পোল্যান্ড চলে গিয়েছি। জানি না কবে এই যুদ্ধ বন্ধ হবে। আমরা উৎকণ্ঠায় আছি। বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা নেই বছর হতে চলল। খোঁজ নিচ্ছি, এখনো অক্ষত আছেন আমার বাবা-মা। ইন্টারনেটের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে কথা বলি। অনেক সময় কান্না আসে। সেটাকে থামিয়ে রাখি। আমি আমার বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। কেঁদে কি লাভ। খেলা নিয়ে থাকি ভালো থাকার জন্য। বাংলাদেশে এসে মনটা একটু ভালো লাগছে।