কখনও তিনি লাস্যময়ী নায়িকা, কখনও বা ইতিহাসের পাতা থেকে উঠে আসা ‘প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার’। কবি নির্মলেন্দু গুণের ‘কবিকুঞ্জ’ নির্মাণ প্রকল্পে নীরব সহযোগী। ইন্ডাস্ট্রির পাশে দাঁড়ানো মানবিক মুখ। মাদক-যোগের অভিযোগে পুলিশি টানাপড়েনের শিকার। প্রেম, বিয়ে, অন্তঃসত্ত্বা হওয়া নিয়েও লাগাতার চর্চায়। ওপার বাংলার জনপ্রিয় একটি অনলাইনে নিজের জীবন হাটখোলা করে দিলেন অভিনেত্রী পরী মণি।
প্রতিবেদক : মা হওয়ার অপেক্ষায় কেমন কাটছে দিন?
পরী মণি : দারুণ! অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার খবর জানার পর প্রত্যেকটা দিনই আমার কাছে স্মরণীয়। একটা জন্ম আসছে। আমিও যেন একটা নতুন জন্ম পেয়েছি।
প্রতিবেদক : ফেসবুক পোস্ট পড়লে, ছবিগুলো দেখলে মনে হয় পরী মণি এখন এক জন মুগ্ধ প্রেমিকা। এমন পরিবর্তন কোন মন্ত্রে?
পরী মণি : (খুব হেসে) তাই? কী জানি! আমি তো বরাবর আমিই আছি। আমারই মতো। আমি আবেগপ্রবণ। আর রাজের প্রতি আমার আবেগ একদম খাঁটি।
প্রতিবেদক : আপনি নাকি বলেন, রাজের সঙ্গে ছোটবেলায় আলাপ হলে ভাল হত। কেন এমন মনে হয়?
পরী মণি : (আবার হাসি) ছোটবেলায় দেখা হলে আরও বেশি করে পেতাম মানুষটাকে। ভালবাসার জন্য এই এক জীবন কখনও কখনও যথেষ্ট মনে হয় না। মন আরও চায়।
প্রতিবেদক : চুপচাপ জীবনে প্রেম এল। শরিফুল রাজের সঙ্গে বিয়েও হয়ে গেল গোপনে। যখন জানলেন মা হতে চলেছেন, কেমন অনুভূতি হয়েছিল?
পরী মণি : সেই মুহূর্তে মনে হচ্ছিল আমার দুটো ডানা গজিয়েছে। আমি সত্যি সত্যি পরী হয়ে গেছি। আমি উড়ে যাচ্ছি সাদা মেঘের পালের সঙ্গে। পৃথিবীটাকে এক টুকরো স্বর্গ মনে হচ্ছিল তখন!
প্রতিবেদক : মাতৃত্বজনিত কারণে অভিনয় থেকে বিরতি নিয়েছেন। যে ছবিগুলোতে অভিনয় করছিলেন, সেগুলো কী অবস্থায়?
পরী মণি : দূরে আর থাকতে পারলাম কই? যতই বলি ছুটি নিলাম এই সময়টুকুর জন্য, ছুটি তো হল না। ‘মা’ ছবির কাজ পুরোটাই অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায়। ‘কাগজের বউ’ও শেষ করলাম সে ভাবেই। তার পরে শ্যুটিং শেষ হয়ে যাওয়া ছবিগুলো ডাবিং করলাম পরপর। তবে গর্ভাবস্থার শেষ পর্যায়ে আর কোনও ঝুঁকি নেব না আমি। আর কোনও কাজ করা সম্ভব নয়।
প্রতিবেদক : রাশিদ পলাশের ‘প্রীতিলতা’ ছবিতে আপনার লুক সবাইকে মুগ্ধ করেছিল। ছবির কাজ শেষ করেছিলেন?
পরী মণি : না, শেষ করতে পারিনি। ‘প্রীতিলতা’ আমার হৃদয়ের কাছের একটা ছবি। আমাদের সন্তান পৃথিবীতে আসার পরে প্রথম কাজই হবে এই ছবির বাকি কাজটুকু শেষ করে দেওয়া।
প্রতিবেদক : গিয়াসউদ্দিন সেলিমের ‘স্বপ্নজাল’-এর পরেই আপনার অভিনয় জীবন ঝুঁকেছে অন্য ধারার ছবিতে। আর কি বাণিজ্যিক ছবি করবেন না?
পরী মণি : কই? করছি তো। দিনের শেষে সব ছবিই তো বিনোদনের জন্য। আলাদা দর্শক, আলাদা বিনোদন। পরিচালক ছবি বানান। আমরা অভিনয় করি। সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করি।
প্রতিবেদক : ‘গুণিন’ ছবিতে একসঙ্গে অভিনয় করতে গিয়েই তো রাজের সঙ্গে পরিচয়, প্রেম, বিয়ে। অভিনেতা রাজকে কেমন মনে হয়?
পরী মণি: রাজ অভিনয়ের জন্য নিবেদিতপ্রাণ। ওর ডেডিকেশন আমাকে মুগ্ধ করে। অনুপ্রাণিতও হই আমি। অস্থির স্বভাব সরিয়ে গভীর মনোযোগী হতে হবে শিল্পীকে- এটাই শিখছি আমি ওর সংস্পর্শে এসে। রাজ বড় কিছু করবেই, আমি জানি।
প্রতিবেদক : নেটমাধ্যমে স্ফীত গর্ভের ছবি দিচ্ছেন। চারপাশে কী প্রতিক্রিয়া?
পরী মণি : এত প্রতিক্রিয়া দেখে বা জেনে কী হবে বলুন? নিজের ইচ্ছেয় মাতৃত্ব উদযাপনের ছবি দিই। মানুষ দেখেন। যাদের ভাল লাগে তো লাগে। যাদের ভাল লাগে না, তাদের নিয়ে আমার কোনও ভাবনা নেই। কিছু যায়ও আসে না। খারাপ মানুষ, খারাপ মন্তব্যকে গুরুত্ব দিয়ে নিজের বেঁচে থাকার আনন্দ নষ্ট করতে রাজি নই।
প্রতিবেদক : গর্ভাবস্থাকে আপনি সুন্দর ভাবে উদ্যাপন করছেন। সমুদ্রে, অরণ্যে, পাহাড়ে। গর্বিত নারীত্বের সচেতন উদ্যাপন?
পরী মণি : (হাসি) আমি মন ভরে আমার গর্ভধারণের সময়টুকু উপভোগ করছি, এটাই বড় কথা। শারীরিক ভাবে যেমন এই সময়ে ঠিক থাকাটা জরুরি, তেমনই মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন প্রয়োজন। তাই আমাকে সুন্দরের কাছে নিয়ে যায় রাজ। আমি এতে ভাল থাকি। মন খুশি হয়।
প্রতিবেদক : আপনার জীবনসঙ্গী সব সময়ে আপনার সব ইচ্ছের শরিক। রাজের এই ভূমিকা নিয়ে কী বলবেন?
পরী মণি : রাজ আমার জীবনে দেবদূতের মতো। আমার মুখ দেখেই সে বুঝে যায় অনেক কিছু। আমাকে বলতে হয় না। আমার অবাক লাগে মাঝে মাঝে। এটা সে পারে, কারণ রাজ নারীকে সম্মান করে।
প্রতিবেদক : আপনার বিপদে পাশে দাঁড়িয়েছিলেন ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানের রচয়িতা, প্রয়াত আবদুল গফ্ফর চৌধুরী। তার স্মরণে কিছু বলবেন?
পরী মণি : তিনি আমার পাশেই আছেন। বাংলাদেশেরও পাশে আছেন। চিরকাল থাকবেন। ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো…’ গানের মৃত্যু নেই। সেই অমর রচনা যার, সেই মানুষেরও মৃত্যু নেই। ব্যক্তিগত ভাবে তার ভালবাসার কাছে আমি নতজানু।
প্রতিবেদক : গর্ভের সন্তান যে-পৃথিবীতে আসবে, সেই পৃথিবী কেমন হলে আপনার সবচেয়ে ভাল লাগত?
পরী মণি : সেই পৃথিবীতে যেন মিথ্যা না থাকে। যেন সব মিথ্যা সে আসার আগেই মুছে যায়। এত বিদ্বেষ, যুদ্ধ, হিংস্রতা যেন কিছুই না থাকে। ভালবাসায় পূর্ণ থাকুক পৃথিবীটা।