২০১৪ কংগ্রেসকে ক্ষমতাচ্যুত করে দিল্লির মসনদে আসীন হয় নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার। সরকারে আসার আগেই মোদি ঘোষণা করেছিলেন, বিজেপি ক্ষমতায় এলে ফিরিয়ে আনা হবে সুইস ব্যাঙ্কে জমা রাখা সমস্ত টাকা। সেই টাকা ফিরে এলে প্রত্যেক ভারতীয় নাকি বেশ কয়েক লক্ষ টাকার মালিক হয়ে যাবে। অনেকটা সেই লক্ষ্যেই করা হলো নোটবন্দী। ভারতীয়দের টাকা রাস্তায় গড়াগড়ি খেল বটে, তবে সুইস ব্যঙ্ক থেকে টাকা আর এল না। ভারতীয়দেরও আর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে কয়েক লক্ষ করে টাকা পাওয়া হলোনা। যাই হোক, নাম-পরিচয় গোপন রেখে অর্থ জমা রাখার জন্য ধনীদের স্বর্গ রাজ্য হলো সুইজারল্যান্ডের সুইস ব্যাংক। সুইস ব্যাংকগুলোতে সারা বিশ্ব থেকেই বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ রাখা হয় প্রতি বছর। সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে, এর মধ্যে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে গত এক বছরে ভারতীয়রা টাকা রাখার পরিমাণে রেকর্ড গড়ে ফেলেছে। যদিও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই বলে আসছেন ‘আচ্ছে দিন’ আসবেই। কিভাবে আসবে? বিদেশ থেকে ভারতীয়দের কালো টাকা ফিরে এলেই আসবে। ফিরিয়ে আনার জন্য একাধিক নির্বাচনি প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন। কিন্তু বাস্তব চিত্র বলছে অন্য কথা। টাকাও ফিরে আসেনি। ‘আচ্ছে দিন’ও দিব্বি বেপাত্তা। উল্টে বিদেশ থেকে টাকা ফেরা তো দূরের কথা, সুইস ব্যাংকে ভারতীয়দের জমা টাকার পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে।
সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২১ সালে সেখানে ভারতীয় ব্যক্তি ও সংস্থাগুলির মোট আমানতের পরিমাণ ৩৮৩ কোটি সুইস ফ্রাঁ (প্রায় ৩০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা)। গত ১৪ বছরের মধ্যে এই টাকার পরিমাণ সর্বোচ্চ। ২০২০ সালে সুইস ব্যাংকে ভারতীয় ব্যক্তি ও সংস্থাগুলির মোট আমানতের পরিমাণ ২৫৫ কোটি সুইস ফ্রাঁ (প্রায় ২০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা)। অর্থাৎ এক বছরের মধ্যে তা বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ।গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীনই নরেন্দ্র মোদী একাধিক বার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে সুইস ব্যাংকে জমা কালো টাকা ফেরত আনার দাবি তুলছিলেন। প্রতিশ্রুতিও দেন, বিজেপি ক্ষমতায় এলে সুইস ব্যাংকে জমা কালো টাকা দেশে ফেরত আনারও। তবে সে প্রতিশ্রুতি তিনি রাখতে পারেননি। উল্টো ফান্ড, বন্ড, ডিবেঞ্চারের পাশাপাশি ভারতীয় অ্যাকাউন্টগুলিতে জমা পড়েছে ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। পরিসংখ্যান বলছে গত সাত বছরে এটা রেকর্ড। বিরোধীরা কটাক্ষ করে বলছেন এটাই নাকি ‘আচ্ছে দিন’, তবে সেটা সুইস ব্যাঙ্কের জন্য।