দেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি পদে কে আসছেন- কিছুদিন ধরে এনিয়ে জল্পনার শেষ নেই। এই জল্পনা শেষ হতে পারে আগামী মঙ্গলবার। ওইদিন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় সংসদ ভবনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভা ডাকা হয়েছে। সংসদ ভবনের লেভেল ৯-এ সরকারি দলের সভাকক্ষে এই সভা হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সভায় দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি পদে দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত করতে পারে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সেক্রেটারি ও সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী (লিটন চৌধুরী) গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বলেন, ‘মঙ্গলবার সংসদীয় দলের সভায় রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন চূড়ান্ত হতে পারে। রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন ছাড়াও সঙ্গত কারণেই সমসাময়িক রাজনৈতিক ইস্যু নিয়েও কথা হবে। আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দলীয় সংসদ সদস্যদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনাও দেবেন প্রধানমন্ত্রী।’
আওয়ামী লীগের নীতিকাররা জানান, রাষ্ট্রপতি পদে যেসব নাম নিয়ে গত কিছুদিন ধরে আলোচনা চলছে, সেগুলোর বেশিরভাগই অনুমাননির্ভর। প্রকৃতপক্ষে রাষ্ট্রপতি পদে একজনকে বাছাই করবেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার সংসদীয় দলের সভায় তার বাছাই করা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা শেষে সেটি চূড়ান্ত করা আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।
২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা দ্বিতীয় দফায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন মো. আবদুল হামিদ। এরপর ওই বছরেরই ২৪ এপ্রিল দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন তিনি। দুই দফায় রাষ্ট্রপতি থাকায়, সংবিধান অনুযায়ী তার আবারও রাষ্ট্রপতি হওয়ার সুযোগ নেই। আগামী ২৩ এপ্রিল শেষ হচ্ছে তার মেয়াদ। তবে, সংবিধানে বলা হয়েছে- রাষ্ট্রপতি পদের মেয়াদ অবসানের কারণে এ পদ শূন্য হলে মেয়াদ সমাপ্তির তারিখের আগের ৯০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে শূন্য পদ পূরণের জন্য নির্বাচন হবে। অর্থাৎ, ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেই অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন (ইসি) ইতোমধ্যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। তফসিল অনুসারে, দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হবে ১৯ ফেব্রুয়ারি। আগ্রহী প্রার্থীরা আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন। ১৩ ফেব্রুয়ারি যাচাই-বাছাইয়ের পর ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে।
সংসদীয় গণতন্ত্রের যুগে ১৯৯১ সালের পর আর কখনো রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোটের প্রয়োজন হয়নি। বরাবরই ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি পদে আসীন হয়ে আসছেন। এখন নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ঘিরে সংসদে প্রতিনিধিত্বশীল অন্যান্য দল থেকে রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী দেওয়ার কোনো তৎপরতা বা আলোচনা নেই। সেক্ষেত্রে একক প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। ফলে যিনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী তিনিই হবেন পরবর্তী রাষ্ট্রপতি, এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। এ পরিস্থিতিতে ভোটেরও আর প্রয়োজন পড়বে না। এমনকি, কে হচ্ছেন বঙ্গভবনের পরবর্তী বাসিন্দা- ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রার্থিতা যাচাই-বাছাইয়ের পরই সেটি নিশ্চিত হওয়ার কথা থাকলেও আসলে সেটি জানা যেতে পারে মঙ্গলবারেই। ফলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীর দিকেই সবার নজর।
রাষ্ট্রপতি পদে দলীয় প্রার্থী নির্ধারণের বিষয়ে আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে স্পষ্ট করে কিছু বলা নেই। তবে দলের একটি সংসদীয় বোর্ড আছে। এই বোর্ডের দায়িত্ব হচ্ছে জাতীয় সংসদসহ জাতীয় পর্যায়ের সব নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া। তবে এর আগে রাষ্ট্রপতি পদে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছে দলীয় সংসদ সদস্যদের নিয়ে গঠিত সংসদীয় দলের বৈঠকে।
এদিকে, রাষ্ট্রপতি পদে কে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাচ্ছেন- এনিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনেও চলছে নানামুখী আলোচনা ও বিচার-বিশ্লেষণ। আওয়ামী লীগসহ রাজনৈতিক অঙ্গনে এবং গণমাধ্যমে নতুন রাষ্ট্রপতি পদে গত কিছুদিন ধরে সবচেয়ে বেশি যেই দু’জনের নাম আলোচনায় তারা হচ্ছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। তাদের মধ্যে শিরীন শারমিন সংসদ সদস্য, ড. মসিউর সংসদ সদস্য নন। ড. মসিউর প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ছাড়াও আওয়ামী লীগের অর্থনীতি বিষয়ক উপ-কমিটির চেয়ারম্যানও। শিরীন শারমিন চৌধুরী রাষ্ট্রপতি হলে সংসদের নতুন স্পিকার কে হবেন- এনিয়েও জল্পনার অন্ত নেই।