কোন রাজনৈতিক দলের সমাবেশ ছিল না। সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক সংগঠন খুলনা জেলা ইমাম পরিষদ বরাবরই ধর্মীয় বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে নগরীর ডাকবাংলা চত্বরেই সমাবেশ করে আসছে। এবারও তেমন প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিল প্রায় দু’সপ্তাহ আগে। নগরীতে মাইকিংও হয় ৩/৪দিন আগে থেকে। কিন্তু মাত্র একদিন আগেই কেএমপি থেকে ডাকবাংলার পরিবর্তে নিউ মার্কেট বায়তুন নূর মসজিদ চত্বরে সমাবেশের অনুরোধ জানানো হয়। সড়কে যান চলাচল যাতে বাঁধাগ্রস্ত না হয় সেজন্যই কেএমপির এমন অনুরোধ। কেএমপি কমিশনারের অনুরোধকে সম্মান জানিয়ে ইমাম পরিষদও গতকালকের পূর্ব নির্ধারিত সমাবেশস্থল পরিবর্তন করে নিউ মার্কেট সংলগ্ন বায়তুন নূর শপিং কমপ্লেক্স চত্বরে আয়োজন করে। নির্ধারিত সময় ছিল বিকেল তিনটা। কিন্তু জুমার নামাজের পর পরই বিভিন্ন স্থান থেকে মিছিল আসতে থাকে সমাবেশস্থলে। তিনটা বাজার সাথে সাথেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় সমাবেশস্থল। এমনকি সামনের মেইন সড়কও তখন লোকে লোকারণ্য। দু’ঘন্টাব্যাপী সমাবেশ চলাকালে নগরীর জোড়াগেট থেকে ফেরিঘাট পর্যন্ত রাস্তায় তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না।
ভারতের নুপুর শর্মা ও নবীন জিন্দাল কর্তৃক মহানবী(স:) ও হযরত আয়েশা(রা:) কে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্যের প্রতিবাদে গতকালকের খুলনা জেলা ইমাম পরিষদের বিক্ষোভ সমাবেশ এভাবেই শেষ হয়।
এ সমাবেশ থেকে নুপুর শর্মা ও নবীন জিন্দালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় ভারতীয় পণ্য বর্জনের হুঁশিয়ারী দেয়া হয়। বক্তারা বলেন, ভারতে এখন মুসলমানদের উপর রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চলছে।
মহানবীকে(স:) নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করা হলে কোন মুসলমান সেটি সহ্য করতে পারে না উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, নুপুর শর্মাদের যারা সমর্থন করবে তারাও ওই দলের। সুতরাং একজন মুসলমানের শরীরে এক বিন্দু রক্ত থাকতেও মহানবীর(স:) অপমান সহ্য করা হবে না।
খুলনা জেলা ইমাম পরিষদের সভাপতি মাওলানা মোহাম্মদ সালেহ’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে বক্তৃতা করেন, পরিষদের সহ-সভাপতি হাফেজ মাওলানা মোস্তাক আহমেদ, মাওলানা শেখ আব্দুল্লাহ, অধ্যক্ষ মাওলানা রহমত আলী, সাধারণ সম্পাদক মাওলানা গোলাম কিবরিয়া, যুগ্ম সম্পাদক মাওলানা নাসির উদ্দিন কাসেমী, অধ্যক্ষ মাওলানা এ এফ এম নাজমুস সউদ, মুফতি গোলামুর রহমান, হাফেজ মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, মোল্লা মেরাজুল হক, মাওলানা কারামাত আলী, মাওলানা সিদ্দিকুর রহমান, মাওলানা নূর সাইদ জালালী, মাওলানা আহমদ আলী, শেখ মোঃ নাসির উদ্দিন, শেখ হাসান ওবায়দুল করিম, শায়খুল ইসলাম বিন হাসান, মুফতী রবিউল ইসলাম রাফে, মাওলানা শহিদুল ইসলাম, অধ্যাপক জাফর সাদিক, মাওলানা আনোয়ারুল আজিম, মাওলানা শফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা মোহাম্মদ সালেহ বলেন, অবিলম্বে মহানবী (স:)কে নিয়ে কটূক্তির প্রতিবাদে জাতীয় সংসদে নিন্দা প্রস্তাব পাশ করতে হবে। বাংলাদেশে আমরা সকল ধর্মাবলম্বীদের নিয়ে সহাবস্থানে বসবাস করছি। মুসলমানরা অসভ্য জাতি নয়। তিনি ভারতের অন্যায়ের কারণে যেন বাংলাদেশে কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটানো হয় এজন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ভারত সরকারকে মহানবী (স:)কে নিয়ে অবমাননাকারী দুর্বৃত্তদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। শত কোটি মানুষের প্রাণের স্পন্দন মহানবী (স:)-এর সম্মানহানি করা এবং প্রতিবাদী জনতার উপর যে হিংস্রতা বিজেপি শাসিত ভারত দেখাচ্ছে, তা সভ্যতার এক কলঙ্কজনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বিজেপির এই বর্বরতা ভারতের ভিত্তি-শর্ত ভঙ্গ করেছে। এর পরিণতিতে ভারতের অখন্ডতা হুমকিতে পড়বে।
বিজেপির উগ্র সাম্প্রদায়িক আচরণ অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশের শান্তিকামী জনতা সকল প্রকার ভারতীয় পণ্য-সেবাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে সর্বাত্মক বয়কট করবে উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, সভ্যতার এই উৎকর্ষের যুগে বিজেপি যা করেছে তা রীতিমত প্রস্তর যুগীয় বর্বরতা। এই বর্বরতা অব্যাহত থাকলে বিশ্বব্যাপী শুভবুদ্ধির মানুষ সম্মিলিতভাবে এই বর্বরদের প্রতিহত করবে।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, শতকরা ৯২ ভাগ মুসলমান ও শতভাগ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের সরকার বিজেপির বিভৎস সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কোন নিন্দা পর্যন্ত জানাতে পারেনি। সরকারকে আহ্বান জানিয়ে বক্তারা বলেন, অবিলম্বে চলতি সংসদেই ভারতীয় আচরণের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব আনুন।
বক্তারা জাতিসংঘ, ওআইসিসহ বিশ্ব শক্তির প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ভারতের বর্বরতা রোধে অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা নিন। অন্যথায় বিশ্বব্যাপী অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়বে। জাতিসংঘ মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে। ভারত নিজেদেরকে ধর্মনিরপেক্ষ সরকার দাবি করলেও হিন্দু ছাড়া অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের ধর্ম পালন করতে দিচ্ছে না। বিশ্ব মিডিয়ায় উঠে আসছে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছে সে দেশের মুসলমানরা।
সর্ববৃহৎ এ সমাবেশ এক পর্যায়ে জনসমুদ্রে পরিণত হয়। দল-মত নির্বিশেষে ইমাম পরিষদ আহুত এ সমাবেশে যোগ দেয় হাজার হাজার মানুষ। সমাবেশের পর মিছিলের কোন পরিবেশ সৃষ্টি করা না গেলেও পুরো এলাকা জুড়েই মিছিল আর শ্লোগান চলতে থাকে। আনুষ্ঠানিক মিছিল শুরু করলে সেটি কোন জায়গা থেকে শুরু হবে আর কোন জায়গায় গিয়ে শেষ হবে তা’ নিয়েও শংকা দেখা দেয়। এজন্য আসরের নামাজের আগে সমাবেশ সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।
এদিকে, ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির মুখপাত্র নূপুর শর্মা ও মিডিয়া সেল প্রধান নবীন জিন্দাল কর্তৃক মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স:) ও উম্মাহাতুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রাঃ) কে নিয়ে চরম অশ্লীল ও অবমাননাকর মন্তব্য করার প্রতিবাদ ও ভারতীয় পণ্য বয়কট এবং বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে নিন্দা প্রস্তাব ও প্রতিবাদ জানানোর দাবি জানিয়ে রূপসায় সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার বাদ জুম্মা রূপসা উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন কাজদিয়া বাজারে এই বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। মিছিল ও সমাবেশে কয়েক হাজার ধর্মপ্রাণ মুসল্লি অংশগ্রহণ করেন ।
মো: মুফতি আহসান উল্লাহ’র সভাপতিত্বে ও আবুল হোসেন দুয়ারির পরিচালনায় অনুষ্ঠিত মিছিলপূর্ব সমাবেশে বক্তৃতা করেন, ইমরান বিন লুতফার, মাওলানা মনির আহম্মেদ, হাফেজ হেদায়েত উল্লাহ, ইব্রাহিম, আমিরুল ইসলাম, মাওলানা কবির, হাফেজ হারুনুর রশিদ, মাওলানা ফজলে রাব্বী, নাইম, সালমান, আহাদ, ওয়াছিব, রসুল, রোহান, ছরোয়ার, ফাহিম, সাদ, ইসলাইল সৌরব, আরজু, তুষার, রকিবুল হানিফ, কামরুজ্জামান টুকু, এস, এম মনিরুজ্জামান প্রমুখ।