রাশিয়ার সঙ্গে ফের শান্তি আলোচনায় বসতে চায় ইউক্রেন। আগামী আগস্ট মাসের শেষের দিকে এই শান্তি আলোচনার পরিকল্পনা করছে কিয়েভ। এর আগেও দুদেশের মধ্যে শান্তি আলোচনা হয়েছে তবে তা থেকে তেমন কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি।
কিয়েভের প্রধান আলোচক ডেভিড আরাখামিয়া মার্কিন গণমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, আলোচনার জন্য তার দেশ আরও ভালো অবস্থানে থাকবে। তিনি বিশ্বাস করেন যে, ইউক্রেন বিভিন্ন জায়গায় পাল্টা আক্রমণের পাশাপাশি অভিযানও চালাবে। তবে এ বিষয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু বলেননি।
এদিকে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলায় এখন পর্যন্ত ১০ হাজারের বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। এছাড়া শত শত শিশু আহত বা নিহত হয়েছে বলেও জানানো হয়।
জাতিসংঘের অফিস অব দ্য হাই কমিশনার ফর হিউম্যান রাইটস (ওএইচসিএইচআর) তাদের প্রতিদিনের আপডেটে জানিয়েছে, গত ১৬ জুন পর্যন্ত রাজধানী কিয়েভে ৪ হাজার ৫০৯ জন নিহত হয়েছে এবং আহত হয়েছে আরও ৫ হাজার ৫৮৫ জন। নিহতদের মধ্যে ২৯৪ জন শিশুও রয়েছে।
ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চলের লুহানস্ক প্রদেশের সেভারোদোনেৎস্ক শহরে এখনো লড়াই চলছে। যদিও ইতিমধ্যেই রুশ সেনারা শহরটির ৮০% দখল করে নিয়েছে।
ওদিকে, রুশ সেনারা ইজিয়াম শহর থেকে আরও দক্ষিণ দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তাদের লক্ষ্য এবার দোনেৎস্ক প্রদেশের আরও গভীরে হামলা চালানো।
অন্যদিকে, হঠাৎ করেই কিয়েভ সফরে গিয়ে ইউক্রেনীয় নিরাপত্তাবাহিনীগুলোর জন্য সামরিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালুর প্রস্তাব দিয়েছেন ছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। গতকাল শুক্রবার ইউক্রেনের কিয়েভ সফরে গিয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে এ প্রস্তাব দেন তিনি।
কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই গতকাল কিয়েভ সফরে যান বরিস জনসন। ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর এটি তাঁর দ্বিতীয়বারের মতো কিয়েভ সফর। বরিসকে ‘বড় বন্ধু’ হিসেবে উল্লেখ করে স্বাগত জানান জেলেনস্কি।
জনসনের কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, ইউক্রেনীয় বাহিনীগুলোর জন্য বড় ধরনের প্রশিক্ষণ কর্মসূচির প্রস্তাব দিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। প্রতি ১২০ দিনে ১০ হাজার সেনাকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও রোমানিয়ার নেতারা কিয়েভ সফর করার এক দিনের মাথায় শহরটিতে গেলেন বরিস।
এদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ‘এগজিকিউটিভ’ শাখা ইউরোপীয় কমিশন ইউক্রেনের ইইউ সদস্যপদ পাওয়ার ক্ষেত্রে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে। আগামী দিনে বেলজিয়মের ব্রাসেলসে ইইউ-এর সদস্য দেশগুলো এই প্রক্রিয়া নিয়ে বিশদে আলোচনা চালাবে।
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, ইউরোপীয় কমিশনের সবুজ সঙ্কেত নেহাতই আনুষ্ঠানিক, কিন্তু কিয়েভের কাছে বর্তমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে তার তাৎপর্য কম নয়। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও শুক্রবার কিয়েভকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রার্থিতার মর্যাদা দিতে সমর্থন দেওয়ার জন্য ইউরোপীয় কমিশনের সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জেলেনস্কি লিখেছেন, ‘এটি ইইউ সদস্য পদের প্রথম ধাপ, যা অবশ্যই আমাদের বিজয়কে আরও কাছাকাছি নিয়ে আসবে।’
ইউক্রেন খুব বেশি ইউরোপের মুখাপেক্ষী। কিয়েভকে নিয়ে এটাই ছিল মস্কোর সবচেয়ে বড় অভিযোগ। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এই কারণেই ইউক্রেনকে ‘সবক’ শেখাতে ফেব্রুয়ারিতে হামলা চালায় রাশিয়া। যে যুদ্ধ এখনও থামার নাম নেই।
এতদিন কিয়েভের প্রধান অসন্তোষ ছিল, যে ইউরোপ প্রীতির কারণে রাশিয়ার হামলার মুখে পড়েছে তারা, সেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখনও তাদের সদস্যপদ দিচ্ছে না। বস্তুত, বারবার আবেদন নিবেদনেও কাজ না হওয়ায় পুরোদস্তুর যুদ্ধ শুরুর পর ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, কোনও গোষ্ঠীর সদস্য হওয়ার জন্য আর লালায়িত নয় তার দেশ। এবার সেই বহু প্রতীক্ষিত গোষ্ঠীর সদস্যপদ হয়তো বাস্তব হতে চলেছে।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লেয়েন বলেন, ‘ইউক্রেনকে সদস্য দেশ হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো উচিত।’ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইইউ-এর সদস্য হওয়ার পথ দীর্ঘ। সমস্ত শর্ত পূরণ করে পূর্ণ সদস্যপদ পেতে এক দশক গড়িয়ে যেতে পারে। তবে উরসুলার এই মন্তব্যের পর আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়াটি শুরু হল, তা বলা যায়। তিনি আরও জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি সদস্য দেশ আগামী সপ্তাহে ব্রাসেলসে মিলিত হবেন। সেখানে এই সংক্রান্ত বিশদ আলোচনা হবে।
একই সঙ্গে মলডোভাকেও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ দেওয়ার পক্ষে ওকালতি করেছেন উরসুলা। তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার হল, তৃতীয় দাবিদার দেশ জর্জিয়ার ব্যাপারে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি তিনি।