বিশ্বজুড়ে একটি মন্দার আশঙ্কা করছেন করপোরেট বিশ্বের শীর্ষ ব্যক্তিরাও। তাঁরা বলছেন, যদি খুব বেশি দেরি হয় তবে আগামী বছরের শেষ নাগাদ একটি অর্থনৈতিক মন্দা আসছে। জ্বালানি পণ্যের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি ইউক্রেন যুদ্ধের অনিশ্চয়তায় বিশ্ব অর্থনীতি নিম্নমুখী হচ্ছে। গত শুক্রবার প্রকাশিত এক জরিপে এমনটাই দাবি করেছে কনফারেন্স বোর্ড।
সংস্থার জরিপে বৈশ্বিক কম্পানিগুলোর ৬০ শতাংশের বেশি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এবং শীর্ষ ব্যক্তিরা জানান, তাঁরা আশা করছেন আগামী ১২ থেকে ১৮ মাসের মধ্যে একটি মন্দা হানা দেবে। গত মাসে পরিচালিত এ জরিপে এশিয়া, ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার প্রায় ৪৫০ সিইওসহ ৭৫০ নির্বাহীর মধ্যে ১৫ শতাংশ জানান, তাঁদের অঞ্চল এরই মধ্যে মন্দায় প্রবেশ করেছে।
অর্থনীতির ভাষায়, পর পর দুই প্রান্তিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি সঙ্কুচিত হলে এটিকে মন্দা হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ প্রায় ৩০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ সুদের হার বৃদ্ধির ঘোষণা দেয়। তাই মন্দা নিয়ে অর্থনীতিবিদদের উদ্বেগ আরো বেড়েছে। কারণ একই পথ অনুস্মরণ করেছে ব্যাংক অব ইংল্যান্ডসহ অন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোও। চরম মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বিশ্বের অনেক দেশই সুদের হার বাড়াচ্ছে। এতে ব্যবসায় খরচও বেড়ে যাচ্ছে।
জরিপে বলা হয়, ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলাই মূলত অর্থনীতিতে চরম অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। এতে বিশ্বের দেশে দেশে অর্থনৈতিক অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। কনফারেন্স বোর্ডের প্রধান অর্থনীতিবিদ ডানা পেটারসন বলেন, ‘জ্বালানির ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধি, সরবরাহ চেইনে বিঘ্নতা, উচ্চ ভূরাজনৈতিক ঝুঁকি এবং ভোক্তা আস্থা কমে যাওয়া এর প্রতিটিই বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধিতে নিম্নমুখী প্রবণতা তৈরি করেছে। ’
তিনি আরো বলেন, ‘বিশেষ করে চীনের লকডাউন এবং ইউক্রেন যুদ্ধের বহুমুখী প্রভাব সংকট ঘনীভূত করেছে। সেই সঙ্গে মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতির সীমাবদ্ধতা মন্দার আশঙ্কায় ঘি ঢালছে। ’
সংস্থাটি আশা করছে, ২০২২ সালে বিশ্বে প্রবৃদ্ধি আসবে ২.৯ শতাংশ এবং ২০২৩ সালে আসবে ২.৩ শতাংশ। কিন্তু একটি বড় ঘটনা বা অনেক বিপত্তির সম্মিলিত প্রভাবেই বিশ্ব অর্থনীতি লাইনচ্যুত হতে পারে এবং নিম্নমুখী প্রবণতা তৈরি করবে। দীর্ঘ সময় এ অচলাবস্থা (মন্থর প্রবৃদ্ধি ও উচ্চ মূল্যস্ফীতি) থাকলে গভীর মন্দায় পড়তে পারে বিশ্ব অর্থনীতি।গত সপ্তাহে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংকও। সংস্থার প্রেসিডেন্ট ডেভিড মলপাস বলেন, ‘অনেক দেশের জন্য মন্দা এড়ানো কঠিন হবে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির সঙ্গে প্রবৃদ্ধির নিম্নগতি বিশ্ব অর্থনীতিকে স্থবির করেছে। এ কারণে ইউরোপ ও পূর্ব এশিয়ার স্বল্পোন্নত দেশগুলো অর্থনৈতিক মন্দার ঝুঁকিতে রয়েছে।