পদ্মা নদীর শিমুলিয়া-মাঝিরঘাট নৌরুটে দুই ফেরির মুখোমুখি সংঘর্ষে ফেরিতে থাকা গাড়িতে চাপা পড়ে খোকন শিকদার (৪০) নামে এক গাড়িচালক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১০ থেকে ১২ জন। এ ঘটনায় রোববার সন্ধ্যা ৬টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত খোঁজ মিলেনি শামীম মোলস্না (৪০) নামের এক গাড়িচালকের।
রোববার ভোরে ওই নৌরুটের শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তের টার্নিং পয়েন্টে ওই দুই ফেরির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এই ঘটনায় ১০ থেকে ১২টি গাড়ি এবং ফেরি দু’টির সামনের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এদিকে এ ঘটনায় চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআইডবিস্নউটিসি)। বিআইডবিস্নউটিসির ডিজিএম (মেরিন) এ কে এম শাহাজাহানকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে। অপর তিন সদস্য হলেন সংস্থাটির নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল মান্নান, শিমুলিয়াঘাটের এজিএম (মেরিন) আহমেদ আলী, মাজিরকান্দিঘাটের ব্যবস্থাপক মো. সালাউদ্দিন। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে কমিটিকে।
অন্যদিকে নৌ পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা নিখোঁজ ব্যক্তির খোঁজ অব্যাহত রেখেছেন। নিহতের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে ঘাটে ফেরি ও লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
জানা যায়, রোববার ভোরে ফেরি বেগম রোকেয়া ও সুফিয়া কামালের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বেগম রোকেয়া ফেরিটি মাওয়া ঘাট থেকে মাঝিরঘাটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে এবং অপরদিকে সুফিয়া কামাল ফেরিটি মাঝির ঘাট থেকে মাওয়া ঘাটের দিকে যাচ্ছিল। নদীতে প্রচন্ড খরস্রোতের কারণে ফেরি দু’টির সংঘর্ষ হয় বলে জানান জাজিরা নৌ-পুলিশ কর্মকর্তা এসআই জহিরুল হক।
এ ঘটনায় ফেরি সুফিয়া কামালের চাপে ঝালকাঠি জেলার কাঁঠালিয়া ইউনিয়নের পিকআপের গাড়িচালক খোকন ঘটনাস্থলেই নিহত হন। আহত ১২ জনকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে। ফেরির চাপে ১০ থেকে ১২টি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার মধ্যে সাতটি গাড়ি ভেঙে দুমড়ে-মুচড়ে যায়।
নিখোঁজ চালক শামীমের গাড়ির মালিক হাবিব উলস্নাহ জানান, গাড়িটি ঢাকা থেকে ফরিদপুর যাচ্ছিল। পথিমধ্যে দুই ফেরির সংঘর্ষে শামীম পানিতে পড়ে যান। তাকে খোঁজ করা হচ্ছে। তিন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
ফেরিতে থাকা প্রত্যক্ষদর্শী জাহিদ হাসান জানান, ‘আমি রোকেয়া ফেরিতে ছিলাম। রাত ৩টা ২০ মিনিটের সময় হঠাৎ দু’টি ফেরির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়, এতে আমার গাড়ির সামনের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে যায়। আমরা যতটুকু বুঝতে পেরেছি, ফেরি চালক ঘুমাচ্ছিলেন, প্রয়োজনীয় লাইট এবং সংকেত তিনি দেননি।’ একই বক্তব্য দেন ফেরিতে থাকা প্রত্যক্ষদর্শী রায়হান খানও।
জাজিরা মাঝিরঘাটে কর্তব্যরত নৌ-পুলিশের কর্মকর্তা এসআই জহিরুল হক জানান, নিখোঁজ ব্যক্তির খোঁজাখুঁজি অব্যাহত রয়েছে। তবে এখনো তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।
বিআইডবিস্নউটিসির নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল মান্নান ও মেরিন এজিএম আহমদ আলী জানান ক্ষতিগ্রস্ত গাড়িগুলো সরিয়ে নিয়ে গিয়ে মেরামতের ব্যবস্থা করা হবে।